চলতি বছরের নভেম্বর মাসে দেশে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে ২৮৮ কোটি ৯৫ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ২৫২ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা হিসাবে)।

সোমবার (১ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিদায়ী নভেম্বরে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৯ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৮ কোটি ৭৭ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর শাখার মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৫৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

দেশের ব্যাংকগুলোর মধ্যে নভেম্বরে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এসেছে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৬০ কোটি ৬৬ লাখ ১০ হাজার ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এই ব্যাংকটির মাধ্যমে এসেছে ২৯ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার ডলার। এরপরের অবস্থানে থাকা অগ্রণী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ২৪ কোটি ১৬ লাখ ২০ হাজার ডলার। এছাড়া জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ২২ কোটি ৮৫ লাখ ডলার, ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে ১৭ কোটি ৯২ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের মাধ্যমে ১৪ কোটি ৭৯ লাখ ৪০ হাজার ডলার এসেছে।

ঢাকা/নাজমুল/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রব স

এছাড়াও পড়ুন:

ইউনিসেফের ‘শিশু অধিকার ইশতেহারে’ সংহতি জানাল ১২টি দল

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) ‘শিশু অধিকার ইশতেহারে’ থাকা ১০টি অঙ্গীকারের প্রতি সংহতি জানিয়ে স্বাক্ষর করেছে দেশের ১২টি রাজনৈতিক দল।

দলগুলো হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি), বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি (জাপা), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণসংহতি আন্দোলন, আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টি, গণফোরাম, গণ অধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্য ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।

আজ সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ইউনিসেফ আয়োজিত ‘শিশু অধিকার ইশতেহার’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দলগুলোর নেতারা এতে স্বাক্ষর করেন।

ইশতেহারে থাকা ১০টি অঙ্গীকার হলো সমন্বিত স্বাস্থ্যসেবা, শিশুর জন্য নিরাপদ বাংলাদেশ, মানসম্মত অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষা, সামাজিক সুরক্ষা, শিশুদের জন্য সহনশীল বাংলাদেশ, নিরাপদ পানি ও উন্নত পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা, শিশুর ভবিষ্যৎ সুরক্ষা, জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা, শিশু-সংবেদনশীল বাজেট এবং শিশু ও তরুণদের বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করা।

অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, ‘এখানে বিভিন্ন দলের নেতারা আছেন। আমি বিশ্বাস করি, শিশুরা এসব কিছুর ঊর্ধ্বে। সে কারণে আমরা সার্বিকভাবে শিশুদের কল্যাণে কথা বলতে চাই, প্রতিজ্ঞা করতে চাই। আমাদের আজকের শিশুরা যারা আর কিছুদিন পর এ জাতিকে পরিচালিত করবে, আমরা তাদের ওপর আস্থা রাখতে চাই।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, শিশুদের কনভেনশনের কথা ১৯৮৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে গ্রহণ করা হয়। কিন্তু অবাক বিস্ময়ে লক্ষ করা যায়, বাংলাদেশ আরও ১০ বছর আগে ১৯৭৯ সালে শিশু অধিকার নিয়ে কথা বলেছে।

১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ কনভেনশন অন দ্য রাইটস অব দ্য চিলড্রেন (সিআরসি) প্রণয়ন করে। তাতে শিশুর বেঁচে থাকার অধিকার, নিরাপত্তা, সুরক্ষা ও বিকাশকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়।

মঈন খান বলেন, একই সময়ে শিশুদের কল্যাণে কাজ করবে, এমন একটি মন্ত্রণালয় গড়ে তোলা হয়। বাংলাদেশ অগ্রগামী দেশ হিসেবে সিআরসি স্বাক্ষর করেছিল। আমাদের সীমিত সম্পদের কারণে, সামর্থ্যের অভাবে শিশুদের জন্য অনেক কিছু করতে পারিনি। কিন্তু আমরা করতে চাইনি, সেটা বলাটা ঠিক হবে না।

ইউনিসেফ শিশুদের যে ১০টি অধিকার ‘শিশু অধিকার ইশতেহার’–এ অন্তর্ভুক্ত করেছে, সেগুলো বাস্তবায়নে সীমিত সম্পদ প্রধান চ্যালেঞ্জ মনে করেন এই রাজনীতিবিদ।

অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য দেন ইউনিসেফের ইয়ুথ অ্যাডভোকেট গার্গী তনুশ্রী পাল। তিনি শিশু অধিকারকে নির্বাচনী ইশতেহারে গুরুত্বের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। এরপর বক্তব্য দেন বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স।

রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, আজকের দিনটা বাংলাদেশের শিশুদের জন্য ঐতিহাসিক মুহূর্ত। শিশুরা চায় সুরক্ষা, শিক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টিতে অধিকার। পরবর্তী সরকারের কাছে শিশুরা তাদের চাওয়া স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে যাচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলো শিশু অধিকারের ইশতেহারের স্বাক্ষর করে সংহতি প্রকাশ করেছে। এটা মাত্র শুরু। আসল পরীক্ষা হবে এটাকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। রাজনীতিবিদ, নীতিনির্ধারক, ব্যবসায়ী, শ্রমিক সংগঠন ও চিন্তন সংগঠন সবারই শিশু অধিকার বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখতে হবে।

গণসংহতি আন্দোলনের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য মনিরুদ্দিন পাপ্পু বলেন, ‘স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও শিশুর অধিকার আমরা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য লজ্জার। জুলাইয়ের গণ–অভ্যুত্থানে ১৩৩ শিশু জীবন দিয়েছে। তাদের ত্যাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিশুদের জন্য আজকের যে ইশতেহার, সেটার বাস্তবায়ন করতে হবে।’

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান বলেন, ‘আমরা এমন একটা রাষ্ট্র গড়েছি, যে রাষ্ট্র এখনো শিশুদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, স্যানিটেশন ও তাদের জন্য নিরাপদ সুপেয় পানির ব্যবস্থাও করতে পারেনি। ৫৪ বছর পর এসে আমাদের অঙ্গীকার করতে হচ্ছে। শিশুদের ইশতেহারে যে ১০টি অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, আমরা সেটি দৃঢ়ভাবে সমর্থন করি।’

এনসিপির কেন্দ্রীয় জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা গ্রামাঞ্চলে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, গ্রামের শিশুদের পুষ্টিহীনতার চিত্র করুণ। শিশুর অধিকার জন্মের আগেই শুরু হয়। অভিভাবকের স্বাস্থ্য ও সচেতনতা এ ক্ষেত্রে জরুরি। শিশুশ্রম ও বাল্যবিবাহ বন্ধ, মানসম্মত শিক্ষা, জলবায়ু–সহনশীল অবকাঠামো প্রয়োজন।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ ক্কাফি রতন বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে সাম্য ও সামাজিক ন্যায়বিচারের অঙ্গীকার করা হয়েছিল। গত ৫৪ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্র বড় হয়েছে, কিন্তু সে অঙ্গীকার এখনো বাস্তবায়ন করা যায়নি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ শিশুদের কল্যাণে তাঁর দলের গৃহীত সব কার্যক্রম অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন। এর বাইরেও কিছু করার থাকলে সেটি করবেন বলে জানান তিনি।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারি তাঁদের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু অধিকারের ১০টি অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত করবেন বলে জানান।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইউনিসেফ বাংলাদেশের জনসংযোগ কর্মকর্তা নুসরাত শবনম তূর্ণা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), গণ অধিকার পরিষদ, গণফোরাম, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, নাগরিক ঐক্যের নেতারা বক্তব্য দেন। এ ছাড়া আরও বক্তব্য দেন ন্যাশনাল কো–অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কাস এডুকেশনের সদস্যসচিব নাইমুল আহসান জুয়েল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ