গণঅভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সব বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন বলে মন্তব্য গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, গত দেড় দশকে আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের যে দুঃশাসন, সেটা কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে একটি সংকটে ফেলেছিল। যার ফলে এই গণঅভ্যুত্থান অনিবার্য হয়ে পড়েছিল। আর এসব কারণে অভ্যুত্থানের আইনি, রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক সব বৈধতা দেওয়ার জন্য একটি ঘোষণাপত্র প্রয়োজন রয়েছে।

আজ শুক্রবার দুপুরে রংপুর গণঅধিকার পরিষদের জেলা কার্যালয় উদ্বোধনকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।

নুরুল হক নুর বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি, প্রাণ দিয়েছি। অথচ তারা মানুষ হত্যা করেছে। আর স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রকে বিদেশি তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। 

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু একটি নির্বাচনের জন্য এবং একটি ভোটের জন্য এই গণঅভ্যুত্থান হয়নি। রাষ্ট্র পুনর্গঠন এবং সংস্কারের মাধ্যমে গণ আকাঙ্খার বাংলাদেশ বিনির্মাণে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। তাই আকাঙ্খার বাংলাদেশ বিনির্মাণে রাষ্ট্র সংস্কার অনিবার্য হয়ে উঠেছে। সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনার আলোকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনা শেষে সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা জাতির সামনে উপস্থাপন করবে। সেটার অধিকাংশ বাস্তবায়নের পর তারা নির্বাচনের পথে হাঁটবে।

নুর আরও বলেন, গণধিকার পরিষদ বাংলাদেশে একটি ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক দল। সেনাবাহিনীর পৃষ্ঠপোষকতায় কিংবা সরকারের আনুগত্যকারী কোনো দল নয়। গণধিকার পরিষদ আন্দোলনের অগ্নিগর্ভ  থেকে জন্ম নেওয়া একটি দল। পুরনো রাজনৈতিক বন্দোবস্ত রেখে আগামীর নতুন বাংলাদেশ গঠন সম্ভব নয়। বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পরিবর্তন দরকার। তাই, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই। এ সময় তিনি বর্তমান সরকারকে গতিশীল করার জন্য জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন করার আহ্বান জানান। 

রংপুরে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শের এ খোদা আসাদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ রাশেদ খান, গণধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও মুখপাত্র ফারুক হাসান, জেলা সদস্যসচিব আশিকুর রহমান আশিক প্রমুখ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গণঅভ য ত থ ন গণঅভ য ত থ ন র জন ত ক সরক র র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

গলাচিপায় ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ 

পটুয়াখালীর গলাচিপায় বিএনপির নেতাকর্মীরা গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরকে (ভিপি নুর) অবরুদ্ধ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) রাত ১০টার দিকে গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। রাত ১টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ওই বাজারে গিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে থাকা গণঅধিকার পরিষদ ও বিএনপির নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। 

অন্যদিকে, চর বিশ্বাস বাজারে সরকারি চান্দিনা ভিটির ডিসিআর (ডুপ্লিকেট কার্বন রিসিপ্ট বা ভূমি কর ব্যতিত অন্যান্য সরকারি পাওনা আদায়ের রশিদ) পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও সম্পাদকের অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ইসলামসহ দুই পক্ষের ১০ জন আহত হন। পরে চর বিশ্বাস বাজারে ইউনিয়ন বিএনপির অফিস ভাঙচুর করেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা। 

নুরুল হক নুরের ছোট ভাই আমীনুল ইসলাম অভিযোগ করেছেন, বাজারে দুই শতাধিক দোকান আছে। ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান প্রতিটি দোকান থেকে ৩০ হাজার টাকা করে দাবি করেন ডিসিআর পাইয়ে দেওয়ার নামে, যা সরকারের নির্ধারিত ফি’র চেয়ে অনেক বেশি। অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা নুরুল হক নুরের সহযোগিতা চান। গত ১০ জুন নুর এলাকায় গেলে বিষয়টি নিয়ে দোকানিরা অভিযোগ করেন। তিনি তাদের অতিরিক্ত টাকা না দিতে বলেন এবং প্রশাসনের মাধ্যমে ডিসিআর পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এরপর থেকেই স্থানীয় বিএনপির নেতাদের সঙ্গে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের সম্পর্ক উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

অভিযোগ অস্বীকার করে চর বিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান বলেছেন, “আমরা কর্মীসভা করছিলাম। সে সময় ভিপি নুরের ভাই আমীনুল ও তার লোকজন এসে আলোচনা বন্ধ করতে বলেন। আমরা আলোচনা বন্ধ করলেও অকারণে তারা আমাদের ওপর চড়াও হন এবং চেয়ার ছুড়ে মারেন। এতে আমাদের ৮–১০ জন নেতাকর্মী আহত হন। আমরা কারো কাছ থেকে টাকা নিইনি। ভিপি নুরের শ্যালক এনিম আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে মিলে টাকা তুলেছেন। এখন এর দায় আমাদের ওপর চাপানো হচ্ছে।”

নুরুল হক নুর বলেছেন, “আমি নেতাকর্মীদের নিয়ে পাতাবুনিয়া বাজারের বাদল মেম্বারের স্মরণসভায় গিয়েছিলাম। রাত পৌনে ১০টার দিকে সেই স্মরণসভা শেষে গলাচিপা বাজারে ফেরার পথে শুনতে পাই, বিএনপির নেতাকর্মীরা গাছের গুড়ি এবং দেশীয় অস্ত্র হাতে নিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। পরে আমাদের কয়েকজন কর্মী সেখানে বিষয়টি দেখার জন্য গেলে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেন এবং কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন। এছাড়া, দশমিনার কয়েকটি অফিস তারা ভাঙচুর করেন। হাসান মামুনের সঙ্গে আমার কোনো বিরোধ নেই। আমরা যখনই গণসংযোগ করি, তখনই বিএনপির নেতাকর্মীরা আমাদের নেতাকর্মীদের হুমকি দেন। আমাদের সঙ্গে ৫০০ থেকে ৭০০ নেতাকর্মী ছিলেন। আমরা এ ঘটনা মোকাবিলা করতে পারতাম। কিন্তু, এলাকায় অনাকাঙ্ক্ষিত উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্ট হোক, সেটা আমরা চাইনি।”

সার্বিক বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বিএনপি নেতা হাসান মামুন। সেখানে তিনি লিখেছেন, আওয়ামী লীগ নেতারা গণঅধিকারের ঘাড়ে পা দিয়ে বিএনপি অফিস ভাঙচুর করেছেন। হামলাকারী ও হামলার নির্দেশদাতাদের গ্রেপ্তার করতে হবে। 

পরে কয়েকটি পোস্টে তিনি ভিপি নুরকে উদ্ধারের জন্য সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ধন্যবাদ জানান। এছাড়া, তিনি বিএনপি নেতাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।

গলাচিপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আসাদুজ্জামান বলেছেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা: এক মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ ট্রাইব্যুনালের
  • গণঅভ্যুত্থানে আহত সামিউলের দিন কাটছে অনিশ্চয়তায়
  • গলাচিপা ও দশমিনায় ১৪৪ ধারার আদেশ অব্যাহত
  • পটুয়াখালীতে বিএনপি-জিওপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, ১৪৪ ধারা জারি
  • আশীর্বাদের পরিবর্তে অভিশাপের চিঠি দিয়েছে বিএনপি: ভিপি নুর
  • লন্ডনে ড. ইউনূস-তারেক রহমানের বৈঠককে স্বাগত জানাল জেএসডি
  • গলাচিপায় ১৪৪ ধারা জারি
  • গলাচিপায় ভিপি নুরকে অবরুদ্ধ করার অভিযোগ