যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) শহীদ মসীয়ূর রহমান (শ.ম.র.) হলে মাদকসেবন বন্ধে ও সেবনকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন হলটির আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২৮ জানুয়ারি) দিবাগত রাত সাড়ে ১০টায় এ বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা।

জানা যায়, মঙ্গলবার দুপুরে শ.

ম. র হলের তৃতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে দীর্ঘ সময় ধরে গাঁজার উৎকট দূর্গন্ধ বের হতে থাকে। এতে বিরক্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা হল প্রশাসন বরাবর অভিযোগ জানায় । এরই প্রেক্ষিতে ওই কক্ষে অভিযান চালায় হল প্রশাসন। কিন্তু অভিযানের সময় হল প্রশাসন ওই কক্ষ থেকে মাদকদ্রব্য না পেলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কয়েকজনকে সতর্ক করেন প্রশাসন। এ ঘটনা জানাজানি হলে সচেতন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং রাতে বিক্ষোভ মিছিল করে। 

এদিকে, মাদক দমনে তিনজন সহকারী হল প্রাধ্যক্ষ নিয়ে একটি কমিটি গঠন করেন শ.ম.র. হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. মজনুজ্জামান। 

বিক্ষোভ মিছিল শেষে আয়োজিত সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসেন বলেন, “আমাদের ক্যাম্পাসে যেখানে মাদক সেবন নিষিদ্ধ, সেখানে দিনের আলোয় কিভাবে সেবন করে, প্রশাসনের কাছে তার জবাব চাই। এ হলের পঞ্চম তলাসহ বিভিন্ন রুমে মাদক সেবন করা হয়। মাদকের গন্ধে রুমে থাকা যায় না। এগুলো হলে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে দিচ্ছে “

তিনি বলেন, “প্রশাসন কেন এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না? এন্টি ড্রাগ সোসাইটি আছে আমাদের ক্যাম্পাসে, তাদেরও কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যায় না। যতদ্রুত সম্ভব প্রশাসনকে এ মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, “মাদক সেবন করলে মানুষের কোন হিতাহিত জ্ঞান থাকে না। এ মাদক মস্তিষ্ককে ধ্বংস করে দেয়। তাই আসুন আমরা সবাই মাদক থেকে দূরে থাকি।”

যবিপ্রবি এন্টি ড্রাগ সোসাটির সদস্য সচিব আরমান বলেন, “আমাদের কার্যক্রম নিয়ে যেহেতু প্রশ্ন উঠেছে, তাই বিষয়টি পরিষ্কার করা উচিত। আমাদের কাজ হচ্ছে মাদকের সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা। পাশাপাশি আমাদের প্রশাসনকে মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান করা। হলে মাদক সেবন বিষয়ে প্রাধ্যক্ষ স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন, এর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।”

তিনি বলেন, “আমরা বরাবরই বলে আসছি শিক্ষার্থীদের নিদির্ষ্ট সময় পরপর ডোপ টেস্ট করানোর জন্য। এটা করা গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক অনেকটাই নির্মূল হয়ে আসবে।”

ধূমপান-মাদকসেবন বন্ধের বিষয়ে শহীদ মসীয়ূর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. মজনুজ্জামান বলেন, “আমি কখনোই চাইব না বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে যাক। হলে যেন কেউ মাদক সেবন করতে না পারে, এর জন্য আমি নতুন একটি কমিটি তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আশা করছি, হলে মাদকসেবন দমন করার জন্য তারা কাজ করবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

ঢাকা/ইমদাদুল/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ হল প র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ