রেলের রানিং স্টাফরা মঙ্গলবার মধ্যরাতে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন। তবে গতকাল বুধবার সময়সূচি মেনে ট্রেন না চলায় ভুগেছেন যাত্রীরা। ঢাকার কমলাপুর থেকে কুড়িগ্রামগামী ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ এবং সিলেটগামী ‘জয়ন্তিকা’র যাত্রা বাতিল হয়। অন্যান্য ট্রেনও এক থেকে চার ঘণ্টা বিলম্বে যাত্রা করে।

পুরোনো নিয়‌মে ভাতা ও পেনশন সু‌বিধা পুনর্বহা‌ল দা‌বিতে গত সোমবার মধ‌্যরাত থে‌কে কর্মবির‌তি শুরু ক‌রেন রা‌নিং স্টাফরা। মঙ্গলবার দিনভর দফায় দফায় বৈঠক হলেও সুরাহা হয়নি। রাত ২টা পর্যন্ত রাজধানীর রেলভবনে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রানিং স্টাফরা। মধ্যস্থতায় ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শ্রমিক নেতা শামসুর রহমান বিশ্বাস শিমুল। রাতে এ বৈঠকে যোগ দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ।

বৈঠক শেষে সবাই রেল উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের মন্ত্রিপাড়ার বাসভবনে যান। সেখান থেকে রাত আড়াইটায় কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। রেলও‌য়ে রানিং স্টাফ এবং কর্মচারী শ্রমিক ইউনিয়‌নের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানান, সব দাবি পূরণ না হলেও যাত্রীদের দুর্ভোগের কারণে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন।

গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে জানানো হয়, রানিং স্টাফরা আগের নিয়মে রেলওয় সংস্থাপন কোড অনুযায়ী রানিং ভাতা পাবেন। অন্য কোনো ভাতা তারা প্রাপ্য হবেন না।

ট্রেনের চালক, সহকারী চালক, টিটি, গার্ড, অ্যাটেনডেন্টসরা রানিং স্টাফ। দিনে প্রতি ১০০ মাইল ট্রেন পরিচালনায় এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ ভাতা পান। এর ৭৫ শতাংশ মূল বেতন যোগ করে পেনশন সুবিধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে পেনশন সুবিধা বাতিল হলে আন্দোলনে নামে রানিং স্টাফরা। পুরোনো নিয়মে ভাতা পুনর্বহাল করা হলেও, পেনশন দাবিকে অন্যায্য আখ্যা দিয়ে মানেনি সরকার।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বুধবার ভোর ৬টা থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার আনোয়ার হোসেন জানান, ভোর সাড়ে ৬টায় ঢাকা থেকে যাত্রা করে রাজশাহীগামী ধূমকেতু। আন্দোলন থামলেও ইঞ্জিন প্রস্তুত পাওয়া যাচ্ছে না। রেললাইনে এনে বগিতে জুড়তে সময় লাগছে। ভোর ৬টা ৩৫ মিনিটে সিলেটগামী পারাবত এক্সপ্রেসের কমলাপুর থেকে যাত্রার কথা ছিল। ট্রেনটি যাত্রা করে ৪ ঘণ্টা ২০ মিনিট দেরিতে। সকাল ৭টার সোনারবাংলা এক্সপ্রেস এক ঘণ্টা, সোয়া ৬টার কক্সবাজারগামী পর্যটক এক্সপ্রেস আড়াই ঘণ্টা, সোয়া ৭টার মহানগর প্রভাতি তিন ঘণ্টা দেরিতে যাত্রা করে। দিনের অন্যান্য ট্রেনও এক থেকে দেড় ঘণ্টা বিলম্বে ছাড়ে।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চল বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, ঢাকাগামী জাহানাবাদ এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর-৮২৫), রাজশাহীগামী টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর-৭৮৩) এবং ঢাকাগামী চিলাহাটি এক্সপ্রেস (ট্রেন নম্বর-৮০৬) বুধবার চলবে না। সোমবার মধ্যরাতে এ ট্রেনগুলো গন্তব্য স্টেশনে পৌঁছে দিয়ে কর্মবিরতিতে যান রানিং স্টাফরা। এগুলো প্রারম্ভিক স্টেশনে পৌঁছাতে না পারায়, গতকাল চলাচল বাতিল হয়।

চট্টগ্রাম ব্যুরো জানিয়েছে, বন্দর নগরীতে গতকাল ট্রেনের সূচি গড়বড় হলে যাত্রী ভোগান্তি হয়। ঢাকাগামী সুবর্ণ এক্সপ্রেস দেড় ঘণ্টা বিলম্বে সকাল ৯টা ৫ মিনিটে যাত্রা করে। সিলেটগামী পাহাড়িকা এক্সপ্রেসও এক ঘণ্টা দেরিতে ছাড়ে।

স্টেশন ম্যানেজার আবু বকর সিদ্দিক বলেন, সকালে কয়েকটি ট্রেন সময় মতো ছাড়তে না পারায় শিডিউল বিপর্যয় ঘটে। তবে দুপুরের পরে ঠিক হয়।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ট র ন য গ য গ বন ধ গতক ল প নশন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের সঙ্গে তাল মেলাতে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংককে যা করতে হবে

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ও বিশ্বব্যাংক এখন কঠিন এক অবস্থায় রয়েছে। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে এই দুই সংস্থা বৈশ্বিক নিয়মনীতির রক্ষক এবং উন্নয়নের সহযোগী হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু আজ তারা একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের মতো জাতীয়তাবাদী ও ক্ষমতাধর অংশীদারের মুখোমুখি, অন্যদিকে রয়েছে বাকি বিশ্ব।

তারা যদি সত্য কথা বলে, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসনের রোষানলে পড়তে পারে; আর চুপ থাকলে তাদের নিজেদের বৈধতা ও দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এই দ্বিধার বাস্তব উদাহরণ দেখা গেছে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক বসন্তকালীন বৈঠকে।

আইএমএফের কাজ হলো দেশগুলোর মুদ্রা বিনিময় হার এবং এমন নীতিগুলো নজরে রাখা, যেগুলো বৈশ্বিক আর্থিক স্থিতিশীলতায় প্রভাব ফেলে। যেসব দেশ প্রতিবেশীদের ক্ষতি করে, তাদের দায়ী করাই সংস্থাটির নীতিগত দায়িত্ব।

এখন পর্যন্ত আইএমএফ যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ্যে নিয়মভঙ্গকারী বলেনি। তবে আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতিকে ‘অত্যধিক অনিশ্চয়তা’ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেছেন এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

আরও পড়ুনট্রাম্পের দুনিয়া যখন বিভিন্ন ‘দুর্গের এক সমাবেশ’২৭ এপ্রিল ২০২৫

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বঙ্গাও বলেন, বিশ্বব্যাংক তার মূল লক্ষ্য-উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হ্রাস নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইউএসএআইডি বন্ধ করে দেওয়ায় বিশ্বব্যাংকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে বড় আঘাত এসেছে। কারণ, ইউএসএআইডি ছিল এসব প্রকল্পের প্রধান সহায়ক।

বঙ্গা এ বিষয়ে কিছু না বলে কর্মসংস্থান এবং প্রযুক্তিনিরপেক্ষ জ্বালানি নিয়ে কথা বলেছেন, যা মার্কিন প্রশাসনের জলবায়ুবিরোধী অবস্থানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কীভাবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক সম্পর্ক বজায় রাখবে, সেটিই ঠিক করে দেবে তাদের ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা। ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম ১০০ দিনেই বোঝা গেছে, এদের জন্য সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে।

প্রথমত, এই সংস্থাগুলো সরাসরি টার্গেটে পড়তে পারে। ওয়াশিংটনের জন এফ কেনেডি সেন্টারসহ অনেক প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। বড় এনজিও ও দাতব্য সংস্থাগুলোও তহবিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আরও পড়ুনডলারের সিংহাসন কি কেঁপে উঠছে২৮ এপ্রিল ২০২৫

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের নামও এসেছে প্রজেক্ট ২০২৫-এ, যা ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের নীতির খসড়া। পাশাপাশি, গত ৪ ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ১৮০ দিনের মধ্যে পর্যালোচনার আদেশ দেন। যদিও এই টিম বরখাস্ত হয়ে গেছে, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের অপ্রত্যাশিত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ধারা দেখে মনে হয়, এটা তাদের পথে বাধা হবে না।

দ্বিতীয়ত, ভিত্তিহীন হুমকিকে গুরুত্ব না দেওয়াই ভালো। উদাহরণ হিসেবে, মার্চে কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ট্রাম্পকে সরাসরি জানান, কানাডার সার্বভৌমত্ব যুক্তরাষ্ট্রকে সম্মান করতে হবে। ট্রাম্প আগের প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোকে প্রায়ই ‘গভর্নর’ বলতেন। কিন্তু কার্নির দৃঢ় অবস্থানে সেই হুমকি কার্যকর হয়নি, কারণ, এতে রাজনৈতিক সমর্থন ছিল না।

তবে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের জন্য বিষয়টি আরও জটিল। বসন্তকালীন বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট ব্যাসেন্ট দুই সংস্থাকে সমালোচনা করলেও বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের নেতৃত্বে থাকবে ও বৈশ্বিক প্রভাব বাড়াবে।

এখন অন্য দেশগুলোর ভাবতে হবে, তারা কতটা প্রস্তুত, যদি একটিমাত্র দেশ এককভাবে এমন সংস্থাগুলোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে চায়—যদিও এগুলো সব দেশের টাকায় চলে।

যদিও ট্রাম্প ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ফলে লাখ লাখ শিশু চিকিৎসা পাবে না, বহু মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যাবে এবং পোলিওতে পঙ্গু হয়ে পড়বে; তারপরও আমেরিকানদের বড় অংশ বিদেশি সহায়তার পক্ষে।

তৃতীয়ত, কেউই একা নয়। আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংক কেবল নিজেদের সিদ্ধান্তে নয়, বরং বৈশ্বিক একটি ব্যবস্থার অংশ হিসেবে কাজ করে। যেমন কিছু মার্কিন আইনজীবী প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের বেআইনি আদেশ মানতে গিয়ে বিচারব্যবস্থার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করেছে। এমনটাই হয়েছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও, যারা সরকারি হস্তক্ষেপে একাডেমিক স্বাধীনতা হারিয়েছে।

আইএমএফের কার্যকারিতা নির্ভর করে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও নীতিনির্ধারকদের আস্থার ওপর। সেই আস্থা বজায় রাখতে হলে নিরপেক্ষ বিশ্লেষণ ও তথ্য উপস্থাপন করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। তারা যে অবকাঠামো বা জ্বালানি প্রকল্প করে, তা উন্নয়নশীল দেশগুলোর মান নির্ধারণে বড় ভূমিকা রাখে।

চতুর্থত, ট্রাম্প ব্যক্তি–সম্পর্ককে অনেক গুরুত্ব দেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি থেকে শুরু করে ব্রিটেনের কিয়ার স্টারমার ও ইতালির মেলোনির মতো নেতারা ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট রাখতে সৌজন্য দেখিয়েছেন। তবে বড় প্রতিশ্রুতি দেননি।

আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের মতো সংস্থার জন্য এটি নতুন অভিজ্ঞতা, কারণ, তারা সাধারণত কাজ করে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও কংগ্রেসের সঙ্গে। এখন তাদের হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সরাসরি কৌশলী সম্পর্ক গড়তে হবে।

আরও পড়ুনট্রাম্পের শুল্কনীতি কি যুক্তরাষ্ট্রের শিল্প উৎপাদনের সুদিন ফেরাবে২৬ এপ্রিল ২০২৫

সবশেষে, এই সংস্থাগুলোর মনে রাখা দরকার, শুধু মার্কিন প্রশাসন নয়, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণও তাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। ১৯৯০-এর দশকে দারিদ্র্যপীড়িত দেশের ঋণ মওকুফে মার্কিন ধর্মীয় সংগঠনগুলোর সমর্থন আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের পক্ষেও সহায়ক হয়েছিল।

যদিও ট্রাম্প ইউএসএআইডি বন্ধ করে দিয়েছেন, যার ফলে লাখ লাখ শিশু চিকিৎসা পাবে না, বহু মানুষ ম্যালেরিয়ায় মারা যাবে এবং পোলিওতে পঙ্গু হয়ে পড়বে; তারপরও আমেরিকানদের বড় অংশ বিদেশি সহায়তার পক্ষে।

অর্ধেকের বেশি মানুষ প্রতিবছর দান করেন, চারজনের একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেন এবং ১৯৬১ সাল থেকে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মানুষ পিস কর্পসে অংশ নিয়েছেন।

সুতরাং, আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের নেতৃত্বের উচিত—কখন প্রতিবাদ জানাতে হবে আর কখন কৌশলী হতে হবে, সেই ভারসাম্য বজায় রাখা। শুধু ট্রাম্পকে খুশি রাখলেই হবে না, তাদের দায়িত্ব রয়েছে গোটা বিশ্বের প্রতিও।

নাইরি উডস অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লাভাটনিক স্কুল অব গভর্নমেন্টের ডিন

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ