জুলাই অভ্যুত্থানের সময় ভিপিএনও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল
Published: 31st, July 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ইন্টারনেটের পাশাপাশি ওয়েবসাইটে প্রবেশের বিকল্প মাধ্যম ভিপিএন বা ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্কও বন্ধ করে দিয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার। গণ-অভ্যুত্থানের বিভিন্ন পর্যায়ে থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়েছিল।
তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘দ্য লংগেস্ট সাইলেন্স: ইন্টারনেট শাটডাউনস ডিউরিং বাংলাদেশ’স ২০২৪ আপরাইজিং’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হয়েছে।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণায় গণ-অভ্যুত্থান চলাকালে ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের (শাটডাউনের) ঘটনাকে পাঁচ ধাপে ভাগ করা হয়েছে। এরপর প্রতি ধাপে ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের মাত্রা ও ধরন কেমন ছিল, তা বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ডিজিটালি রাইটের গবেষক তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দুই ধাপে ইন্টারনেট সম্পূর্ণ ব্ল্যাকআউট হয়েছিল। প্রথমবার ১৮ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই এবং দ্বিতীয়বার ৫ আগস্ট। এ দুই ধাপে মোবাইল ডেটা ও ব্রডব্যান্ড সংযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। ফোর-জিকে টু-জিতে নিয়ে আসা হয়েছিল। পাশাপাশি ফিল্টারিং প্রযুক্তি ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দিয়ে ইন্টারনেটের গতি ধীর করে দেওয়া হয়েছিল।
সারা বিশ্বে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ পর্যবেক্ষণকারী যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক বৈশ্বিক সংস্থা ‘ওপেন অবজারভেটরি অব নেটওয়ার্ক ইন্টারফেয়ারেন্স’র সহযোগিতায় প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সময় ও অন্তর্ভুক্ত এলাকার আওতার বিবেচনায় ২২ দিন ইন্টারনেট বন্ধের ঘটনাকে বাংলাদেশে অন্যতম ব্যাপক ‘ইন্টারনেট শাটডাউন’ বলে অভিহিত করা হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।
প্রতিবেদনে ইন্টারনেট শাটডাউন ও নানা মাত্রায় নিয়ন্ত্রণকে সময়ভিত্তিক পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন প্রথম ধাপ জুলাই ১৫-১৭, দ্বিতীয় ধাপ জুলাই ১৮-২৩, তৃতীয় ধাপ জুলাই ২৪-৩১, চতুর্থ ধাপ আগস্ট ১-৩ ও পঞ্চম ধাপ আগস্ট ৪-৫।
ভিপিএনের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হয় ২৪ জুলাই। এ সময় প্রোটন ভিপিএন, নর্ড ভিপিএন ও টানেলবিয়ারের মতো অ্যাপগুলো নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসঙ্গত, ভিপিএন হলো নিরাপদ ও গোপন পথে ওয়েবসাইটে প্রবেশের উপায়, যা ব্যবহারকারীর অবস্থান ও ডেটা গোপন রাখে। বিশেষ করে ব্লকড করে দেওয়া ওয়েবসাইটে প্রবেশে এগুলো ব্যবহার করা হয়।
প্রতিবেদনটি জানাচ্ছে, সারা দেশে মোবাইল নেটওয়ার্ক সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকে ব্রডব্যান্ড সংযোগের গতি নিয়ন্ত্রণ ও সুনির্দিষ্ট কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়ার মতো পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। কোনো ধরনের সরকারি নির্দেশ ও ঘোষণা ছাড়াই তা করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দিয়ে ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সেবা বন্ধেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি), বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ও টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর থেকে এসব নির্দেশনা এসেছিল।
ডিজিটালি রাইটের গবেষণা থেকে জানা গেছে, ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের সিদ্ধান্ত ব্যাপকভাবে বাস্তবায়ন করতে ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান (আইএসপি), ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারনেট গেটওয়ে (আইআইজি) এবং মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলোকে সরকার থেকে মৌখিক ও অনানুষ্ঠানিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ শুরু হওয়ার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছরের ১৪ জুলাই রাতে কোটাবিরোধী আন্দোলন বেগবান হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মোবাইল ডেটার প্রবাহকে ধীরগতির করে দেওয়া হয়। ১৫ জুলাই সকাল থেকে শাহবাগ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থ্রি-জি ও ফোর-জি ইন্টারনেটের গতি দুর্বল করে দেওয়া হয়। এরপর আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে ১৫ জুলাই মধ্যরাত থেকে ১৬ জুলাই থেকে দ্রুতগতির ইন্টারনেটকে বাধাগ্রস্ত করা হয়।
সহিংসতার তীব্রতা বাড়তে থাকলে ১৮ জুলাই থেকে দেশব্যাপী ইন্টারনেট শাটডাউন শুরু করে সরকার। ওই দিন রাত সাড়ে আটটার দিকে ব্রডব্যান্ড সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। আর ওই দিন দিবাগত রাত ১টা ২৯ মিনিটের দিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, যা ২৩ জুলাই পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।
২৪ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ভিপিএন, মোবাইল ইন্টারনেট ও ব্রডব্যান্ডের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ১ থেকে ৩ আগস্টের মধ্যে নিয়মিত বিরতিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া, ভিপিএন বাধাগ্রস্ত করা ও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। ৪ থেকে ৫ আগস্ট সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও ক্যাশ সার্ভার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করা হয়েছে ডিজিটালি রাইটের প্রতিবেদনে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব রডব য ন ড হয় ছ ল ভ প এন র ইট র সরক র আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
তাম্বুন পেরমাই থেকে বেগান সেরাই, এক দিনে ৮১ কিমি
গ্রামের ভেতরের সরু রাস্তা ধরে এগিয়ে চলেছি। রাস্তায় বাংলাদেশের পতাকা দেখে অনেক শ্রমিক ভাই আমাদের হাত উঠিয়ে শুভেচ্ছা জানাল। মুনতাসীর ভাইয়ের সাইকেলের পেছনে লাঠির মাথায় বাঁধা বাংলাদেশের পতাকা। দেশের পতাকা আর নিজের দেশের লোক অনুমান করলে এই দূর দেশে যে কোন প্রবাসীর মনে ডাক দিবে। তাদের অনেক কৌতূহল আমাদের ব্যাপারে। বাংলাদেশ থেকে কেউ এখানে সাইকেল চালাতে আসতে পারে এমন কিছু তারা ভাবতেও পারেনি!
বেলা তিনটার মধ্যে গ্যালাক্সি হোটেল পেয়ে গেলাম। বেশ পরিপাটি সুন্দর। এখন আমরা তিনজন, এক রুমে সবাই। ভোরবেলায় বের হওয়ার সুবিধাটা এখন বোঝা গেলো! গরমে বেশি ক্লান্ত হবার আগেই হোটেলে ঢুকে চিল করা যাচ্ছে। বিশ্রাম আমাদের পরদিনের রসদ যোগাবে।
যথারীতি ভোরবেলাতেই বের হলাম। প্রতিদিন বের হওয়ার সময় একটা আতঙ্কের মধ্যে কাটে। মালয়েশিয়াতে ওয়েদারের ঠিক-ঠিকানা নাই। এই ঝুম বৃষ্টি, আবার ফকফকা। আবার ভোরবেলা রাইড শুরু করতে হলে ঘুম থেকে উঠতে হয় আরো আগে। সব কিছু গুছিয়ে আবার সাইকেলে বাঁধো তারপর রওনা হও।
সকালের বেশ খানিকটা দূরত্ব অতিক্রম করে আসার পরে ‘নেবুঙ তাবাং’ নামে এক জায়গায় নাস্তার জন্য থামি। রাস্তার পাশেই খাবারের দোকান থেকে রোজ সকালে দুই পরোটা আর দুই ডিমে আমাদের প্রাতরাশ। খরচা বেশি নয়। তবে ডিম পোচটা একটু বুঝিয়ে দেওয়া লাগতো। আজকেও সেফকে বুঝিয়ে বলছিলাম, ইংরেজিতে তাদের বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল, তখন দেখি বাঙালি এক ভাই আমাদের চিনতে পেরেছেন। সে এসে সহযোগিতা করল। তার নাম হাবিব, বাড়ি নওগাঁ। কয়েক বছর হলো এখানে কাজ করছে। কুয়ালালামপুর থেকে অনেক দূরে বাংলাদেশীরা কাজের জন্য এসেছে। সবারই ভিন্ন ভিন্ন গল্প।
দেশী মানুষের দেখা পেলাম প্রায় সব জায়গাতেই। সাইকেল চালাতে কেউ এত দূর পর্যন্ত চলে আসতে পারে তাদের মাথায় এটা ধরতেই চায় না। আর খাবারের ব্যাপারে বলতে গেলে বাংলাদেশীরা যে দেশেই যাক ভাত-মাছ মসলা দিয়ে মাংস এগুলো খোঁজে। মালয়েশিয়ান খাবারেও নানা বেচিত্র্য আছে। ঐতিহাসিক অভিবাসন, বিদেশী শক্তির উপনিবেশ স্থাপন এবং তার বৃহত্তর স্বদেশের মধ্যে এর ভৌগোলিক অবস্থানের ফলে, বর্তমান সময়ে মালয়েশিয়ার রন্ধনশৈলী মূলত মালয়, চীনা, ভারতীয়, ইন্দোনেশিয়ান, থাই, ফিলিপিনো এবং আদিবাসী বোর্নিয়ান এবং ওরাং আসলির ঐতিহ্যের মিশ্রণ, যার মধ্যে আরব, থাই, পর্তুগিজ, ডাচ এবং ব্রিটিশ রন্ধনপ্রণালীর হালকা থেকে তীব্র প্রভাব রয়েছে। তবে মালয়েশিয়ানদের আমাদের মতো প্রধান খাদ্য হলো ভাত। বিদেশে এলাম একটু নতুন জিনিস ট্রাই করবো, এখানেও ভাত খেলে কি চলে! কিন্তু কিছুদিন পর সেই ভাতই খেতে মন চায়- কি জ্বালা!
নাস্তা শেষ করতেই ঝুম বৃষ্টি শুরু হলো। পথের পাশে আম গাছ থেকে কয়েকটা আম পেড়েছিলাম। নাস্তা করে সেগুলো লবণ দিয়ে খেতে বসলাম। বাকি পথ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই চলতে হলো। ৪৭ কিলোমিটার চালিয়ে ‘বেগান সেরাই’তে চলে এলাম। আজকে থাকবো হোটেল কুলান ইন। মুসলিম হোটেল, খুব পরিপাটি সুন্দর। পাশেই একটা পাকিস্তানি রেস্তরাঁ- বিসত্রো জালেল। পেট ভরে ভাত মাছ মুরগি শাক-সবজি খেলাম। রাতে খেলাম সুপ। হোটেলের পেছনে একটা পেঁপে গাছ ছিল, পাখি পাকা পেঁপে খেয়ে খেয়ে বেশুমার। এরা গাছের ফল ছেড়ে না মনে হয়, আম গাছেও এত আম কেউ মনে হয় দেখেই না। একজনকে বলতেই বিশাল এক পেঁপে পেড়ে দিলো। সুইচ আর্মি নাইফটা দিয়ে কেটে কেটে খেয়ে আমরাও বেশুমার হলাম। কড়া মিষ্টি। মন তৃপ্ত হলো। সকাল থেকে বৃষ্টির পর সুন্দর রোদ উঠেছে। জামাকাপড় ধুয়ে শুকাতে দিলাম। এখন শুধু রিলাক্স।
পরদিন ভোর ৫টা ১০-এ শুরু করলাম। ভরের আলো ফোটার আগেই ১৫ কিলোমিটার চালিয়ে ফেলেছি, এরপর ২৭ কিলোমিটার পরে নাস্তার জন্য থামলাম। আজকের পথটা বেশ সুন্দর। অনেক গাছগাছালি আছে পথে। নাস্তার সময় একজন মালয় সাইক্লিস্টের সঙ্গে পরিচয় হলো, তিনি আমাদের সাইকেলের সাথে ব্যাগবোচকা দেখে বুঝতে পেরেছিলেন আমরা অনেক দূর থেকে এসেছি আর সঙ্গে বাংলাদেশের পতাকা। তারাও মালয়েশিয়াতে দল বেঁধে বিভিন্ন রুটে সাইকেল চালায়। আমাদের রুট সম্পর্কে জানতে চাইলে ম্যাপে দেখালাম। তিনি সহজ একটা রাস্তার কথা বললেন, তবে আমরা অপেক্ষাকৃত কম ট্রাফিক আছে এমন রুট বেছে নিলাম। এখানে মেইন রোডের সঙ্গে প্যারালালি গ্রামের রাস্তার মতো ছোট রাস্তা চলে গেছে। তারপর অনেক দূরে দূরে গিয়ে আবার সেই মেইন রোডের সঙ্গে মিলেছে। সুবিধা হলো সাইকেলের সঙ্গে বড় গাড়ির সংযোগ হচ্ছে না এবং গাছগাছালির ছায়া পাওয়া যাচ্ছে। মালয়েশিয়াতে পাম গাছের আধিক্য অনেক এবং মূল দেশীয় উপার্জনের একটা বড় অংশ আসে সয়াবিন ও পাম থেকে। দুই-ই তেলবীজ। তবে তেলের দাম কম বলে মনে হলো না। ১ লিটার তেলের দাম ২৪০ টাকারও বেশি। এর কোনো কারণ খুঁজে পেলাম না।
একটা সরু রাস্তায় উঠলাম একপাশে লম্বা ক্যানেল চলে গেছে, আর দুপাশে নানা ফলফলাদির গাছ। একটা কলাগাছে কলা পেকে আছে, ছিড়ে নিলাম কিছু। পেঁপে গাছে পাকা পেঁপে ঝুলে আছে নিলাম একটা। বড় বড় কাঁচা আম রাস্তার থেকে হাত দিলেই ছোঁয়া যায় তাও নিলাম। সাইকেলে এমনিতেই জিনিসপত্র বোঝাই করা, তার মধ্যে আর বেশি কিছু নেবার সুযোগ নেই। ফ্রেস জিনিস পথে বসে খাবো বলে সঙ্গে নিলাম। এখানে বাড়িঘরগুলো বেশি উঁচু না। একতলা বড়জোড় দোতলা। ভারত শ্রীলঙ্কাতে যেমন বাড়ির প্যাটার্ন হয় তেমন ধরনের বাড়ি দেখলাম এই অঞ্চলে। শহরের দিকে উঁচু দালানে ভরপুর। আরেক রাস্তায় উঠে একটা নারকেল গাছের বাগান দেখতে পেলাম। রাস্তার ধারেই সারি করে গাছ এবং মজার জিনিস হলো গাছগুলো এক মানুষ সমান। তাও আবার বোদকা বোদকা হলুদ ডাব। এমনভাবে ড্যাবড্যাব করে ডাবগুলো আমাদের দিকে চেয়ে আছে যে খুব লোভ হলো এবং জল তেষ্টাও পেলো। ততক্ষণে গগন তেঁতে উঠেছে।
চঞ্চলকে বললাম- এই দাঁড়া, চট করে ডাবের জল খেয়ে নেই। আশেপাশে এমন কাউকে দেখছিও না যার কাছে অনুমতি নিতে পারি। আবার পথে এতো বার বিরতি দিলে এই তেঁতে ওঠা আবহাওয়াতেই বেশিক্ষণ চালাতে হবে, তাই মুনতাসীর ভাইও তেমন একটা থামতে চায় না। সাইকেল সাইড করে বড়সড় একটা ডাব কান্ড থেকে মুচড়ে মুচড়ে আলাদা করলাম, এরপর কচি ডাবের গায়ে ছুরি চালিয়ে দিলাম আর ফিনকি দিয়ে ডাবের জল চোখ-মুখ ভিজিয়ে দিলো। মিষ্টি জলের স্বাদ পেলাম। চারকোনা করে কেটে একটা মুখ বানালাম এরপর ঢকঢক করে গিলে নিলাম। পরেরটা মিস ফায়ার, জল নেই। আরো কয়েকটা পেড়ে চঞ্চল আর মুনতাসিরকে দিলাম। মন ভরে উঠল। সারভাইভাল টেকনিক স্কিলও ঝালাই হলো। অন্যদিন পথের ধারে দোকানে ডাব খেয়েছিলাম ১৫ রিঙ্গিত দিয়ে, কি সুন্দর করে কেটে ডাবের পানি প্রথমে বড় সাইজের মগে নিলো, তাতে সুগার সিরাপ দিলো, আইস দিলো এবং ডাবের নরম শাঁস কুড়িয়ে সেই পানিতে ছেড়ে দিলো- কলিজা ঠান্ডা!
আরেকটা বড় রাস্তায় ওঠার পর এক এলাহী কাণ্ড দেখলাম। মটরবাইকের বহর যাচ্ছে, সামনে মালয় পুলিশের বাইকও রয়েছে বেশ কিছু। যেমন আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতারা কোথাও গেলে শোডাউন করে তেমন। আমরাও এমন কিছুই মনে করেছিলাম, ভিভিআইপি কেউ যাচ্ছে পেছনে মটরবাইকের বহর। স্পিড কমে হলেও ১২০ কিলোমিটার হবে। সেই বহর যাচ্ছে তো যাচ্ছেই, বিশ পঞ্চাশ একশ, দুইশো, চারশ পাঁচশ আরো বেশি হবে অনুমান করি। এ কি দেখলাম বাবা এক ঝলক! আমাদের রীতিমত পথের পাশে সাইড করে থামিয়ে দেওয়া হলো, বিপরীত পথের গাড়িগুলোকেও। পুরো রাস্তায় বাইক শুধু। কত মডেলের যে মটরবাইক এবং স্কুটি দেখলাম! ভাবলাম এতো জোরে জোরে যে চালাচ্ছে, একটা এদিক সেদিক হলে পেছনের গুলাও অক্কা পাবে নির্ঘাত। পরে লোক মুখে শুনলাম ছুটির দিনে বাইকার গ্রুপগুলো এমন দলবেঁধে লং ড্রাইভে বের হয়। পুলিশ তাদের রাস্তা খালি করার জন্য প্রটেকশন দেয়। এলাহি কারবার! সত্যিই বিদেশ বিভূঁইয়ে কত কিছু দেখার এবং জানার সৌভাগ্য হয়। এ জন্য ধর্মেও বলেছে ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য সুদূর চীনে যাও’।
বেলা ৩টার মধ্যে আমরা হোটেল লাম সেং-এ উঠে গেলাম। এই পাড়াটা চাইনিজ অধ্যুষিত। হোটেলের উল্টা পাশে রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে হলো আরেক বিপত্তি। এরা ইংরেজি কেউ বোঝে না। গুগলে ইংরেজি লিখে তার চাইনিজ তর্জমা করে আকারে ইঙ্গিতে দেখিয়ে এই বেলায় কিছু খাওয়া গেলো। সন্ধ্যায় অবশ্য অন্য এক চাইনিজ রেস্তোরাঁতে আমাদের খাবারের অর্ডার ঠিক ঠিক নিতে পেরেছিল। খাবারগুলো বেশ মজার। কালামারি ফ্রাই, কোয়েতাও সুপ, ফ্রাইড রাইস, চিকেন ফ্রাই, চিল্ড বিয়ার। সব মিলিয়ে আজকে ৮১ কিলোমিটার চালানো হলো।
তারা//