Samakal:
2025-07-11@19:10:19 GMT

ভাবতে হবে দেশবাসীর কথা

Published: 10th, July 2025 GMT

ভাবতে হবে দেশবাসীর কথা

যারা পুরস্কার পান তারা আনন্দিত হন। কেবল তারাই নন, যারা সেই পুরস্কারের সংবাদ শোনেন, তারাও আনন্দিত হন এবং নানাভাবে সেই আনন্দ প্রকাশিত হয়। যারা পুরস্কৃত হয়েছেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে লিখে আসছেন। সাহিত্য চর্চা করছেন কিংবা জ্ঞানের কোনো বিষয়ের চর্চা করছেন। তাদের সেই চর্চা দেশবাসীর কাছে বই আকারে বেরিয়েছে। যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনসাধারণের নেতৃত্ব দেন, তাদের কর্তব্য সম্পর্কে এসব বই থেকে কিছু না কিছু ধারণা পাওয়া যায়। 

বাংলাদেশ নানা দিক থেকে একটা বিপর্যস্ত অবস্থায় আছে। তবে বাংলাদেশের বেশ কিছু খনিজসম্পদ আছে। তা ছাড়া বিজ্ঞানের কল্যাণে এখন যে  উচ্চফলনশীল বীজ, আনুষঙ্গিক অনেক কিছু, যেমন হাঁস-মুরগির খামার, শাকসবজি, ধান, গম সবকিছুর উৎপাদন বেড়েছে অভাবনীয়ভাবে। এই বাড়ার ফলে গোটা পৃথিবীতে মানুষ সম্মানজনকভাবে বাঁচবার একটা অবস্থায় উত্তীর্ণ হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে কোনো উন্নততর নেতৃত্ব পশ্চিমা দেশগুলোতেও দেখা দেয়নি (জাপান থেকে দক্ষিণ আমেরিকা পর্যন্ত যদি ধরি), এই অঞ্চলেও দেখা দেয়নি। ইউরোপ আগে খুব উন্নত ছিল। এখন আর সে অবস্থা দেখা যায় না।
এই বাস্তবতার মধ্যেও আমাদের লেখকরা এসব বিষয়ে কিছু কিছু চিন্তা করছেন এবং আরও বেশি চিন্তা করা দরকার। এমন চিন্তা ওয়াশিংটন, লন্ডন কিংবা অন্য কোনো ইউরোপীয় দেশ থেকে আমাদের দেশে আসবে এবং আমরা সেটা অনুকরণ করে চলব– সেটা হবে না। আমাদেরও বুদ্ধি-বিবেচনা আছে। দর্শন, বিজ্ঞান, সাহিত্য, শিল্পকলা ইত্যাদি আছে এবং সেই ঐতিহ্য ধরে আমাদেরও উন্নতির অনেক সুযোগ আছে। সেই সুযোগ আমাদের গ্রহণ করতে হবে।

আমরা তা কী করে গ্রহণ করতে পারি? আমাদের যে ইতিহাস, ঐতিহ্য আছে, তাতে আমাদের সংলগ্ন থাকতে হবে। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আমরা আর পারব না কিছু। বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি অনেক ছেলেমেয়ে, যারা একটু লেখাপড়ায় ভালো, উদ্যমী, পরিশ্রমী– তারা দেশ ছেড়ে অন্য কোনো দেশে গিয়ে নাগরিকত্ব লাভ করার চেষ্টা করে এবং নানা রকম কথা বলা হয়– বাঙালি অত্যন্ত নিকৃষ্ট জাতি। একটা রাষ্ট্র গঠন, জাতি গঠন, অনেক কঠিন কাজ। বাঙালিরা এমন এক জাতি, তারা এগুলো  পারবে না– এমন কথা প্রবীণরাও বলেন। 
উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, অ্যাডভোকেট, বিচারপতিরাও তাই বলেন যে বাংলাদেশ উন্নত হবে না। এরই মধ্যেও বাংলাদেশের মানুষ খেয়ে-পরে যাচ্ছে, ভালোই আছে।
এই যে বাস্তবতা, মানুষের সামনে এত বিরাট সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেই সম্ভাবনা থেকেও লেখক, শিল্পীরা নানাভাবে কাজ করতে পারেন নিজের দেশের ভেতরে এবং বাইরে। তার জন্য যে চিন্তাশীলতা দরকার, শ্রম দরকার– সেটা আমাদের দেশের লেখক, শিল্পীদের মনেও জাগ্রত হোক। দরকার  রাজনৈতিক জাগরণ। কিন্তু রাজনৈতিক জাগরণের কোনো লক্ষণ এখনও আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে দেখা দেয়নি। তা সময় প্রমাণ করবে, কিন্তু সাধারণ মানুষের হয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই এ বিষয়ে চিন্তা করা দরকার ।

একটি জাতির ভেতরে চিন্তার চর্চাই গুরুত্বপূর্ণ, যা জাতিকে বড় হতে, উন্নত হতে, সমৃদ্ধ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। সেই দিক থেকেই আজকে যারা পুরস্কৃত হলেন তাদের আমরা সংবর্ধিত করলাম। তারা পুরস্কার পেয়ে আনন্দিত হয়েছেন, আর আমরা তাদের দেখে আনন্দিত হয়েছি।  
হাসনাত আবদুল হাইয়ের বয়স ৯০ ছুঁইছুঁই। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি লিখে এসেছেন, ছাত্রজীবনেই তাঁর উপন্যাস বের হয়। এসবের মধ্য দিয়ে একজন মানুষ ৯০ বছরে পৌঁছেছেন। তাঁর সারাজীবনের লেখা আমাদের সামনে উপস্থাপন করা উচিত। কারা উপস্থাপন করবেন? সরকার পারে। যেমন পশ্চিমবঙ্গে, অতীতের ভারতের যে কোনো লেখকের বই যারা বের করবেন (প্রকাশক), তাদের সরকার অর্থ সাহায্য দিয়ে থাকে। বাংলাদেশের অবস্থা হলো যে আমাদের বাংলা একাডেমির বই প্রকাশ করে লেখকদের কিছু সু্যোগ-সুবিধা দেয়। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে, সেটা আমার কাছে বেশি ভালো মনে হয়েছে । 

কারা প্রকৃত লেখক? স্বদেশপ্রেমিক এবং বিশ্বব্যাপী মানুষের কল্যাণের চিন্তা করেন যারা, তারা। অনুসন্ধান করে, কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকার তাদের সাপোর্ট করবে যেন তারা সাফল্য অর্জন করতে পারেন। এটা কল্যাণকর হবে। যারা এই অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করেছেন, সমকাল পত্রিকার মালিক, সম্পাদক, সাংবাদিক, অন্যদিকে ব্র‍্যাক ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ– তাদের ধন্যবাদ। এটি একটি ভালো উদ্যোগ। এই উদ্যোগ সফল হোক– এটিই  আমরা কামনা করি। 

আমি লক্ষ্য করেছি নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর  রবীন্দ্রনাথের লেখা বন্ধ হয়ে যায়নি, বরং আরও উন্নত হয়েছে। মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত তিনি লিখতে না পারলেও বলে দিয়েছেন আর অন্যরা লিখে দিয়েছে। সেগুলোর মধ্যেও একটা প্রজ্ঞার পরিচয় আছে।  গদ্য, পদ্য যে ধারার লেখাই হোক– যারা লেখক, শিল্পী, তাদের মধ্যেও স্বদেশপ্রেম, বিশ্বপ্রেম থাকতে হবে। তারা যাতে মানুষকে আরও বেশি জাগ্রত করতে পারেন, মানুষকে ভেতর থেকে গড়ে তুলতে পারেন, তাদের সেই চেষ্টা করা দরকার। আজ যারা পুরস্কার পেয়েছেন, আন্তরিকভাবে তাদের প্রতি সম্মান, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ব্যক্ত করছি। আপনারা থেমে যাবেন না। যতদিন বেঁচে আছেন, এই ধারায়ই কাজ করবেন। নিজের জীবনযাপনটা সম্মানজনকভাবেই দরকার। 
ভাবতে হবে দেশবাসীর কথা এবং তাদের জন্য কী কাজ করা যায়, কীভাবে করা যায় এসব বিষয়ে। গোটা পৃথিবীর মানুষ ভালো অবস্থায় নেই, ইউরোপ,  উত্তর আমেরিকার অবস্থা যে খুব ভালো তা না। হয়তো ধন-সম্পদে পুরো পৃথিবীকে লুণ্ঠন করে তারা একটু উন্নত হয়েছে। কিন্তু মানবিক, রাজনৈতিক দিক দিয়ে বিচার করে দেখব যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি যেগুলো খুব উন্নত রাষ্ট্র ছিল, সেগুলোও খুব ভালো কিছু করছে না। রাষ্ট্র নিয়ে যে চিন্তার কথা বললাম, রাজনৈতিক ও বৈশ্বিক, সেই চিন্তাকে সামনে রেখে আমাদের ঢাকা শহর থেকেও মহান চিন্তাবিদ, লেখক আত্মপ্রকাশ করছে না। সবাইকে শ্রদ্ধা-প্রীতি জানাই। সমকাল এবং ব্র‍্যাক ব্যাংকের কর্তৃপক্ষকেও অভিনন্দিত করি। ভালো কাজে টাকা খরচ করলে ভালো মানদণ্ডের ব্যক্তি আত্মপ্রকাশ করে। এভাবেই আমাদের সমগ্র জাতি উন্নত হয়। আমাদের উন্নতির ধারা দেখে অন্যান্য রাষ্ট্রেও সে রকম উন্নতির ধারা দেখা দিক। আমাদের এই ঢাকাকেন্দ্রিক যে জাতীয় সংস্কৃতি, তাতে এমন চিন্তাধারা দেখা দিক। সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ক র প রস ক র প র জন ত ক আনন দ ত প রক শ ত হয় ছ আম দ র দরক র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রেপ্তারকৃতদের তদন্তে মালয়েশিয়াকে সহায়তা করবে বাংলাদেশ

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৩৫ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদের অভিযোগ তদন্তে মালয়েশিয়ার সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ। শুক্রবার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ বিন হাজি হাসানের সঙ্গে এক বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন এ আশ্বাস দেন।

শুক্রবার রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কুয়ালালামপুরে ৩২তম আসিয়ান আঞ্চলিক ফোরামের (এআরএফ) মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের ফাঁকে তাঁরা এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং তথ্য ও তদন্তের ফলাফল বিনিময়ের মাধ্যমে অভিযোগের অভ্যন্তরীণ তদন্তে মালয়েশিয়ার সহযোগিতা চান। মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশকে সহায়তার আশ্বাস দেন।

এর আগে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রসচিব ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাঁরা বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। উভয়ই বাংলাদেশে চলমান সংস্কার, রোহিঙ্গা সংকট, এলডিসি-পরবর্তী সহায়তা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করেন।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইনস্টন পিটার্স, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিজিথা হেরাথ এবং কোরিয়া প্রজাতন্ত্রের উপমন্ত্রী ও প্রতিনিধিদলের প্রধান পার্ক ইউনজুর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন। এ সময় দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়।

বাংলাদেশ ২০০৬ সালে এআরএফের সদস্য হয়। নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে ফোরামটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ