নকল প্রসাধনী উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হবে কবে
Published: 7th, February 2025 GMT
সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ আদিকাল থেকে। বর্তমান বিশ্বে উন্নত প্রযুক্তি ও ভোক্তা সমাজের চাপে এ আকর্ষণ বাণিজ্যিক রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোয় নকল প্রসাধনী এবং অদক্ষতাপূর্ণ সৌন্দর্য বৃদ্ধির সার্জারি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এ সমস্যা শুধু ব্যক্তিপর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পুরো সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য একটি বড় ঝুঁকি।
বাংলাদেশের প্রসাধনী বাজারে প্রায় ৩০-৪০ শতাংশ পণ্য নকল বা ভেজাল, যা বিভিন্ন সংস্থা ও ভোক্তা অধিকার সংগঠনের সমীক্ষায় প্রমাণিত। অল্প খরচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি এই পণ্যগুলোয় নামীদামি ব্র্যান্ডের লেবেল ব্যবহার করা হয়। দেশে কিছু অসাধু চক্রের সমন্বয়ে নকল, ভেজাল, মানহীন প্রসাধনী উৎপাদন করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকার চকবাজার, মৌলভীবাজার, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে নকল প্রসাধনী তৈরির কারখানা। গোপনীয়তার সঙ্গে এসব কারখানায় চলে নকল পণ্য উৎপাদনের মহোৎসব। এরপর তা ছড়িয়ে দেওয়া হয় ঢাকাসহ সারা দেশে। ভোক্তা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রায়ই এসব স্থানে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানাও করা হয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের সদ্য সাবেক ডিজি বলেন, বাংলাদেশে এমন কোনো প্রসাধনী নেই, যা নকল হয় না।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ঢাকা শহরের প্রসাধনী বাজারের ৪৫ শতাংশ পণ্য মানহীন। বেশির ভাগ নকল পণ্য ব্রাজিল, ভারত ও চীন থেকে আসে, যা পাইকারি বাজার, ফুটপাত এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, নিম্নমানের প্রসাধনীতে ব্যবহৃত রাসায়নিক যেমন লেড, পারদ, ফরমালডিহাইড, আর্সেনিক ও স্টেরয়েড ত্বকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, যা অ্যালার্জি, ব্রণ, অ্যাকজিমা, ত্বকের ক্যানসারের কারণ। নকল প্রসাধনীর রাসায়নিক স্নায়ুতন্ত্র ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে। ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘদিন নকল প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে নারীদের ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে প্রজনন সমস্যা তৈরি হয়। গর্ভবতী নারীদের প্রসাধনীতে থাকা পারদ ও লেড সরাসরি গর্ভের শিশুর স্নায়ুতন্ত্র বিকাশে বাধা সৃষ্টি করে।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুসারে, নকল পণ্য উৎপাদন ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রসাধনীর উৎপাদন, আমদানি, রপ্তানি, ক্রয়–বিক্রয়, মজুত, সংরক্ষণ, প্রদর্শন, বিতরণ ও মান নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে ২০২৩ সালে কসমেটিকস আইন পাস হয়। এ আইনের পঞ্চম অধ্যায়ে কসমেটিকসের লাইসেন্স সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স আরোপিত শর্তবহির্ভূতভাবে কসমেটিকস উৎপাদন, বিতরণ, আমদানি, রপ্তানি করতে পারবে না। আইনের মাধ্যমে কসমেটিকসের মান নির্ধারণ, নিয়ন্ত্রণ, প্রয়োগ, পরীক্ষাগার ইত্যাদি বিষয় বাংলাদেশের মান ইইউ, ইউএসএফডিএ, এএসইএএনসহ আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দেশ কর্তৃক নির্ধারিত মান অনুসরণ করতে হবে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, লাইসেন্স ছাড়া বা লাইসেন্স আরোপিত শর্তের বাইরে পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করলে সর্বোচ্চ এক বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। বিধি লঙ্ঘন করে কোনো বিউটি পারলারে কসমেটিকস ব্যবহার করা হলে তিন মাসের জেলসহ অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। এ ছাড়া কোনো বিজ্ঞাপনে কসমেটিকসের ব্যবহারজনিত ফলাফল অসত্য প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা ও পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এতগুলো আইন থাকার পরও এখনো আলোচনার বিষয়, নকল প্রসাধনীর স্বাস্থ্যঝুঁকি। সরকারের উচিত সব আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন ও প্রয়োগ জোরদার করা।
মোছা.
ফায়জুন্নাহার শান্তা
আইন ও বিচার বিভাগ (প্রথম বর্ষ)
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু
কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।
এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি।
সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।
সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।
এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।
টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।
ঢাকা/এএএম/ইভা