বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে পরাশক্তির খেলা শুরু হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘দিল্লির আধিপত্যবাদের কালো থাবা চতুর্দিক থেকে ছেয়ে বসেছে। ব্যবসা–বাণিজ্য, রাজনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি, কূটনীতি এমনকি সামনের নির্বাচন নিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে কি করে ধূলায় মিশিয়ে দেওয়া যায়, তার চক্রান্ত এখনো বিদ্যমান। আমাদের দেশে নির্বাচন আর সরকার পরিবর্তনের সময় এলে পরাশক্তির যে খেলা হয়, সেই খেলা আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি।’

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। ‘জুলাই ছাত্র-জনতার গণ–অভ্যুত্থানে সাংবাদিকের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা এবং শহীদ সাংবাদিক পরিবারের সম্মাননা শীর্ষক এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)।

‘ইনক্লুসিভ’ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনতে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযোগ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, ‘নতুন নতুন তত্ত্ব আসতেছে। আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে আনার জন্য কোনো কায়দায় ইনক্লুসিভ নির্বাচন, রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ, নানান ফিলোসফির নামে দেশের জনগণকে ব্যবহার করে, রাজনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে চক্রান্ত চলছে। এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আওয়ামী দুঃশাসন ও ব্যক্তি হাসিনা বিদায় নিলেও আত্মতৃপ্তির ও স্বস্তির সুযোগ নেই। প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফ্যাসিবাদের দোসররা এখনো ঘাপটি মেরে বসে আছে। এর ফলে একজন ফ্যাসিস্ট গেলেও দেশ থেকে ফ্যাসিজমের বিদায় হয়নি।’

জুলাই অভ্যুত্থানের পর যতবার নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, তখন বারবার একটি অপশক্তি সেই পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছে বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল। তিনি বলেন, কিছু দূর এগিয়ে আবার কিছু দূর পেছাচ্ছে। সামনের একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের সম্ভাবনাকে যারা রুখে দিতে চাইবে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থানকে রুখে দেওয়া হবে।

সরকারের দেওয়া ভোটের সময়সীমার ওপরে জামায়াত আস্থাশীল বলে জানান গোলাম পরওয়ার। তবে এই ভোট যেন আওয়ামী লীগ আমলের মতো না হয়, সেই নিশ্চয়তা চেয়েছেন তিনি।

গোলাম পরোয়ার বলেন, ঐকমত্য কমিশনে নানা রকম আলোচনা চলছে। সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা বিভেদ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বির্তক থাকলেও দলে দলে বা ব্যক্তি ব্যক্তিতে যাতে বিভেদ না হয়। দল হিসেবে সবাই সবার মতামত দিচ্ছে, কমিশনে যুক্তিতর্ক হচ্ছে। তার মানে এই নয় যে কোনো দল নির্বাচন চায় না, এমন ব্যাখ্যা হতে পারে না।

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও প্রতিহিংসার কারণে মিথ্যা তথ্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা উচিত নয় বলে উল্লেখ করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল।

ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়া রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐক্য গঠনের সময় শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাইলে এখনই কিছু মৌলিক বিষয়ে একমত হতে হবে। বিভেদ, অনৈক্য ভুলে যেতে হবে। তিনি আরও বলেন, কিছু কিছু মিডিয়া হাউস, কিছু কিছু কর্পোরেট হাউজ থেকে কখনো কখনো পরিকল্পিতভাবে রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছে। একটা কথাকে এমনভাবে পরিবেশন করা হচ্ছে, যা নিয়ে জাতির মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ ল ম পরওয গ ল ম পর

এছাড়াও পড়ুন:

পিআর বুঝি না—এই কথা দায়িত্বশীলের হতে পারে না: মিয়া গোলাম পরওয়ার

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর বুঝি না—এই কথা কোনো রাজনৈতিক নেতা বা দায়িত্বশীলের কথা হতে পারে না। এই পদ্ধতি জনগণ চায় কি না, সেটা জুলাই চার্টারে অন্তর্ভুক্ত করে গণভোটে দিয়ে দেওয়া হোক। জনগণ যদি চায়, তবে সবাইকে মানতে হবে। আর জনগণ যদি না বলে, জামায়াতে ইসলামী সেটা মেনে নেবে।

আজ সোমবার খুলনা–৫ আসনের (ডুমুরিয়া–ফুলতলা) ডুমুরিয়া বাজারে নির্বাচনী গণসংযোগে মিয়া গোলাম পরওয়ার এ কথা বলেন।

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে মনোনয়ন–বাণিজ্য, চাঁদাবাজ, দখলবাজ, দুর্নীতিবাজদের সুযোগ থাকবে না। সে জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায় না একটি রাজনৈতিক দল।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘ইতিমধ্যেই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করা হয়েছে। আমরা ঘোষিত রোডম্যাপ অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও ভয়ভীতিমুক্ত গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে আসছি। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনুযায়ী কালোটাকার ব্যবহার বন্ধ, ভোটকেন্দ্র দখল, পেশিশক্তি প্রদর্শন ও ভোটের বিভিন্ন অনিয়ম ও অপতৎপরতা বন্ধ, মানসম্পন্ন পার্লামেন্ট, দক্ষ আইনপ্রণেতা তৈরিসহ পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছি। আমাদের দাবি বর্তমানে জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। জনগণের দাবিগুলো কার্যকর করার কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না।’

জামায়াতের এই নেতা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ন্যায়ভিত্তিক ও জবাবদিহিমূলক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে গড়ার লক্ষ্যে জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে।

নির্বাচনী গণসংযোগের সময় মিয়া গোলাম পরওয়ারের সঙ্গে ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সি মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মিয়া গোলাম কুদ্দুস, কর্মপরিষদ সদস্য আবু ইউসুফ মোল্লা, ডুমুরিয়া উপজেলা আমির মোক্তার হোসেন, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি আবদুর রশিদ, সহকারী সেক্রেটারি ফরহাদ আল মাহমুদ, ডুমুরিয়া উপজেলা ইসলামী ছাত্রশিবির সভাপতি আবু তাহের, ছাত্রশিবির পশ্চিম শাখার সভাপতি শামিদুল হাসান লিমন, উপজেলা হিন্দু কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবপ্রসাদ মন্ডল প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিন হওয়ার সুযোগ নেই: গোলাম পরওয়ার
  • পিআর বুঝি না—এই কথা দায়িত্বশীলের হতে পারে না: মিয়া গোলাম পরওয়ার