প্রযুক্তির স্পর্শে সবকিছু পাল্টে যাচ্ছে। বইও এর ব্যতিক্রম নয়। অমর একুশে বইমেলা ২০২৫-এ এর প্রভাব দেখা গেল। মেলায় গিয়ে যদি স্টলে বই না দেখেন, ঘাবড়ে যাবেন না। কিছু স্টলে মিলছে ই বা অডিও বুক।

শনিবার বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে কথা হয় কাহিনীক অডিও বুকের প্রোডাকশন কো-অর্ডিনেটর আশরাফুল আশীষের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা বইয়ের সহায়ক হিসেবে অডিও বুকের জায়গাটা নিয়ে আসার চেষ্টা করেছি। একটি বই পড়তে পড়তে কোনো কারণে সেটি রেখে অন্য কাজে মনোনিবেশ করতে হয়। কিন্তু অডিও বুকের ক্ষেত্রে আমরা বইটির সঙ্গে সংযুক্ত থাকতে পারি যে কোনো অবস্থায়। শুদ্ধ উচ্চারণের হারিয়ে যাওয়া রীতি অডিও বুকের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তবে শিশুদের বই সবচেয়ে  বেশি আমাদের অ্যাপের মাধ্যমে শোনা হয়ে থাকে।

কাব্যিক অডিও বুকের স্টলে ভিড় দেখা যায় তরুণদের। এ অ্যাপে বাংলাদেশের প্রথিতযশা সমকালীন লেখকদের লেখা বই বেশি পাওয়া যায়। বইগুলো উপস্থাপনের ক্ষেত্রে নতুনত্ব থাকায় এগুলো তরুণদের বেশি আকর্ষণ করে বলে জানান প্রতিষ্ঠানের কনটেন্ট অ্যান্ড এনগেজমেন্ট অফিসার রুবায়েত ইসলাম রাহাত। তিনি বলেন, আমাদের শ্রোতারা মূলত ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সের মধ্যে সীমাবদ্ধ।

তরুণ পাঠক রাহাত বলেন, আমার পড়ার চেয়ে বই শুনতে ভালো লাগে। কারণ এতে এক জায়গায় বসে বসে বই হাতে নিয়ে থাকতে হয় না। সে ক্ষেত্রে আমি বইটা শুনতে শুনতে কাজও করতে পারি। এটা অনেক সুবিধার একটি বিষয়।

তবে শোনার পাশাপাশি অনলাইনে বই পড়তেও আনন্দ পেয়ে থাকেন কেউ। তাদের জন্য আছে বইমই। এই ই-বুকের স্টলে দেখা গেল পাঠকের ভিড়। স্বল্পমূল্যে বইয়ের অনলাইন সংস্করণ কেনার জন্য সময় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি জান্নাতুল ফেরদৌসী কাজল জানান, সবার মাঝে আগ্রহ ই-বুক পড়ার। প্রায় প্রতিদিন একশর ওপর আমাদের ই-বুক ইনস্টলেশনের কাজ হয় স্টলে। এটা আশাব্যঞ্জক। এতে যেমন বইয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকছেন পাঠকরা, তেমনি জ্ঞানের জায়গাও সমৃদ্ধ হচ্ছে।

গতকাল ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় দুপুর ২টায়। সিসিমপুর মঞ্চে গতকালও বাবা-মায়ের সঙ্গে শিশুদের বেড়াতে দেখা যায়। সময় প্রকাশনীতে অভিনেতা ডা.

এজাজ এলে তাঁর অটোগ্রাফ নিতে পাঠকদের ভিড় লেগে যায়।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে মেলার প্রবেশগেটে মানুষের ভিড়। এ ছাড়া বিগত ছয় দিনের তুলনায় শুক্রবার ও গতকাল বই বেশি বিক্রিতে সন্তোষ প্রকাশ করেন প্রকাশকরা।

গতকাল কালীমন্দির ও বাংলা একাডেমির প্রবেশমুখে হকার ও ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকান বসতে দেয়নি পুলিশ। তবে প্রাঙ্গণের ভেতর খাবার নিয়ে হকারদের দেখা যায় ঘোরাঘুরি করতে। পুলিশদের বেশ ঢিলেঢালাভাব লক্ষ্য করা গেছে প্রবেশমুখে দর্শনার্থী ও পাঠকদের চেক করার ক্ষেত্রে।

দোলাইপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আসেন প্রধান শিক্ষক এস এম ছালাহ উদ্দিন। তিনি বলেন, শুক্রবার আসিনি। ভিড়টা এড়াতে চেয়েছিলাম। এবার প্রতি সপ্তায় নির্দিষ্ট সংখ্যক শিক্ষার্থী নিয়ে মেলায় আসার ইচ্ছা রয়েছে।

নতুন বই
গতকাল মেলায় নতুন বই আসে ১০২টি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো জিনাত আরার কাব্যগ্রন্থ ভালোবাসি তোমাকে (আগামী), সাহাদত হোসেন সুজনের উপন্যাস মাধবীলতা (ঐতিহ্য), মাহফুজুর রহমানের ভ্রমণগ্রন্থ মুংকের আর্তনাদ (বাংলাপ্রকাশ), মমতাজ তপনের কাব্যগ্রন্থ শরতে কুড়াবো দুমুঠো বিকেল (নব সাহিত্য), প্রফুল্ল গাইনের উপন্যাস নীলনয়না (শিরীন)।

মঞ্চের আয়োজন
গতকাল বিকেল ৪টায় মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘একজন মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। খালিকুজ্জামান ইলিয়াসের সভাপতিত্বে এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিক-উম-মুনীর চৌধুরী। আলোচনায় অংশ নেন আবদুস সেলিম ও মোহাম্মদ হারুন রশিদ।

প্রাবন্ধিক বলেন, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ ছিলেন একাধারে শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, প্রশাসক, কবি, লেখক, অনুবাদক ও সুফিবাদ চর্চাকারী। তাঁর লেখনির আকর্ষণীয় বিষয় হলো সহজবোধ্যতা ও রসবোধ।

আলোচকদ্বয় বলেন, মোহাম্মদ হারুন-উর-রশিদ বাংলাদেশের সুফিবাদ ও সুফি-সাহিত্যের একজন বিশিষ্ট লেখক।

লেখক বলছি মঞ্চে বই নিয়ে আলোচনা করেন মজিদ মাহমুদ ও জব্বার আল নাইম।

জুলাইর গল্প মঞ্চে অভ্যুত্থানে শহীদ স্মরণে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে কথা বলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মালিহা নামলাহ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাফিসা ইসলাম সাকাফি।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন ফরিদ সাইদ ও প্রদীপ মিত্র। আবৃত্তি করেন কামাল মিনা ও ফারহানা পারভীন হক তৃণা।
সংগীত পরিবেশন করেন ফারাহ দিবা খান লাবণ্য, সুষ্মিতা দেবনাথ সূচি, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী প্রমুখ।

সাংস্কৃতিক আয়োজন
বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১৩৯ জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। আজ যথারীতি মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

মিরাজে দুর্দান্ত জয় বাংলাদেশের

এমন পারফরম্যান্সই তো চাওয়ার থাকে ভালো দলের কাছে। মেহেদী হাসান মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্য, সাদমান ইসলামের সেঞ্চুরি, তাইজুল ইসলামের ৯ উইকেট শিকারে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল জয় এনে দেয় বাংলাদেশকে। প্রথম টেস্ট হারের পর যে সমালোচনা হয়েছিল, তার জবাবটা বোধ হয় দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনে জিতে দিয়ে দিলেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ‘বাউন্স ব্যাক’ করে সিরিজ ড্র ১-১-এ।

চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে বীরোচিত পারফরম্যান্স ছিল টাইগারদের। এটি সম্ভব হয়েছে পছন্দের উইকেটে খেলা হওয়ায়। স্পিন ভুবনে উইকেট উৎসব করেছেন তাইজুল, মিরাজ গাঁটছড়া বেঁধে। সিরিজ নির্ধারণী টেস্টে দুটি সেঞ্চুরি দারুণ অর্জন অধারাবাহিক ব্যাটিং লাইনআপের। এই টেস্টে ওপেনিং জুটি ভালো করেছে। লম্বা সময় পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া এনামুল হক বিজয় ভালোই সঙ্গ দেন সাদমানকে। লোয়ার মিডলঅর্ডারে মিরাজের লড়াই ছিল দেখার মতো।

টেলএন্ডারদের নিয়ে রীতিমতো বাজিমাত করেছেন তিনি। শেষ ৩ উইকেটে তৃতীয় দিন ১৫৩ রান যোগ করেন। বাংলাদেশকে পৌঁছে দেন ৪৪৪ রানে। ২১৭ রানের লিড থাকায় ইনিংস ব্যবধানে জয়ের স্বপ্ন দেখায়। মিরাজের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে সে স্বপ্ন পূরণ হয়। সাকিব আল হাসান ও সোহাগ গাজীর পর তৃতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার তাঁর। 

গত বছর দেশের মাটিতে টেস্টে ভালো করতে পারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার পর দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে। ২০২৫ সালের শুরুটাও ভালো ছিল না। সিলেটে জিম্বাবুয়ের কাছে হেরেছে। সিরিজ বাঁচাতে চট্টগ্রামে জিততেই হতো। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কন্ডিশনেও পরিবর্তন আনা হয়। চট্টগ্রামের উইকেটে খেলা হয় দ্বিতীয় টেস্ট। যেখানে শাসন ছিল স্পিনারদের। পছন্দের উইকেট পাওয়ায় তিন স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ। তিনজনই দারুণ বোলিং করেন প্রথম থেকে।

দীর্ঘ বিরতির পর টেস্ট খেলার সুযোগ পাওয়া অফস্পিনার নাঈম হাসান চ্যালেঞ্জ নিয়ে বোলিং করে গেছেন। বেশি উইকেট না পেলেও এক প্রান্তে ব্যাটারদের চাপে ফেলেছেন। যার সুফল তাইজুল ও মিরাজ পেয়েছেন অন্য প্রান্তে। প্রথম দিন শেষ সেশনে ব্রেক থ্রু দেন তিনি। বাঁহাতি স্পিনার পরে পিক করে ৬ উইকেট শিকার করেন। জিম্বাবুয়ে ৯ উইকেটে ২২৭ রানে প্রথম দিন শেষ করে। পরের দিন এক বল খেলে ওই রানেই অলআউট হয়। বাংলাদেশ ব্যাটিং শুরু করে বড় লক্ষ্য নিয়ে। সাদমান ইসলাম ও এনামুল হক বিজয় ১১৮ রানের ওপেনিং জুটি করায় প্রতিপক্ষকে ছাড়িয়ে যাওয়া সহজ হয়। সাদমানের সেঞ্চুরি ও মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম কিছু রান করায় ৭ উইকেটে ২৯১ রানে দ্বিতীয় দিন শেষ করে বাংলাদেশ।

সেদিন সংবাদ সম্মেলনে সাদমান আশা প্রকাশ করেন, মিরাজ ও তাইজুল জুটি করবেন। অষ্টম উইকেটে ৬৪ রানের জুটি দু’জনের। বেশি ভালো করেছেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজের সঙ্গে ১৫৬ বলে ৯৬ রানের জুটি। অভিষেক টেস্টে সাকিবের ব্যাটিং দারুণ লেগেছে অধিনায়ক শান্তর কাছে। ৮০ বলে ৪১ রান করেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, মাথায় বল লাগার পরও বিচলিত হননি তিনি। মিরাজ ছাড়া চট্টগ্রাম টেস্টের প্রাপ্তি হিসেবে ওপেনিং জুটির ভালো খেলা, সাদমানের সেঞ্চুরি, তাইজুলের ৫ উইকেট শিকার ও সাকিবের রান করাকে মনে করেন শান্ত। 

শেষের তিন উইকেটে তৃতীয় দিন প্রায় দুই সেশন ব্যাট করে বাংলাদেশ। তাইজুল, সাকিব ও হাসানকে নিয়ে ১৫৩ রান যোগ করে। মিরাজ ১০৪ রান করে ওয়েলিংটন মাসাকাদজাকে উইকেট দেন। নার্ভাস নাইটির ঘরে প্রবেশ করে কিছুটা ঝুঁকির মুখে ছিলেন মিরাজ। ৯৮ রানে পৌঁছানোর পর সেঞ্চুরি ছুঁতে দুই রান নিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফিল্ডারের কাছে বল চলে যাওয়ায় এক রানে থামতে হয়। তখন স্ট্রাইকে হাসান থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফের সবাই দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। কখন হাসান আউট হয়ে যায়, সে ভয় কাজ করছিল হয়তো। কিন্তু হাসান ছিলেন দৃঢ়চেতা। মাসাকাদজাকে ডিফেন্স করে স্বস্তি দেন।

মিরাজ স্ট্রাইকে এসে মেদেভেরের প্রথম দুই বলে ঝুঁকি নেননি। তৃতীয় বলে এক রান নিয়ে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ ও দ্বিতীয় টেস্টের সেরা খেলোয়াড় মিরাজ। প্রথম ম্যাচের উভয় ইনিংসে ৫ উইকেট করে ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে অতীতের সব পারফরম্যান্স ছাড়িয়ে গেছেন। সেঞ্চুরির সঙ্গে ৫ উইকেটপ্রাপ্তি, দুই হাজার রানের মাইলফলক পেয়েছেন। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি। ২১৭ রানে পিছিয়ে থাকা জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে অলআউট হয় ১১১ রানে। ফ্লাডলাইটের আলো জ্বেলে নির্ধারিত সময়ের বেশি খেলান আম্পায়াররা। প্রায় সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খেলা হয়। জিম্বাবুয়ে ক্রিকেটাররা তাতে আপত্তি করেননি। তাইজুল ৩, নাঈম ১ ও মিরাজ ৫ উইকেট নিলে ম্যাচ শেষ হয়।  

সিলেটে প্রথম টেস্ট হারের পর চট্টগ্রামে প্রভাব বিস্তার করে খেলে ম্যাচ জেতার পরও খুশি নন অধিনায়ক শান্ত, ‘আমি টেস্ট সিরিজ ড্র করে খুশি না। কারণ, প্রথম টেস্টে আমরা একেবারেই ভালো খেলিনি। এই টেস্টে একপেশে খেলে জিতলেও সিরিজে আরও ভালো খেলা উচিত ছিল। সিরিজটি জিততে হতো।’ টাইগার দলপতি জানান, এই পারফরম্যান্স শ্রীলঙ্কা সফরে কাজে দেবে। দেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেট বানিয়ে বিদেশে খেলার পরিবেশ তৈরি করছিল বিসিবি। ২০২৩ সালে নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা হচ্ছে। কিউইদের বিপক্ষে সিলেটে ঐতিহাসিক জয় পেলেও মিরপুর থেকে হারতে শুরু করে। দেশের মাটিতে টানা ছয় হারের পর জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ