লিবিয়ার মাফিয়া তিন জামাতার মাধ্যমে উত্থান দালাল মনিরের
Published: 10th, February 2025 GMT
মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কুদ্দুস ব্যাপারী (৩৩) ছিলেন মালয়েশিয়ায়। ছয় মাস আগে ছুটিতে দেশে আসেন। এরপর স্থানীয় দালাল মনিরের প্রলোভনে পড়ে ইতালি যেতে রাজি হন তিনি। অবৈধ পথে লিবিয়া হয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি পৌঁছাতে ১৬ লাখ টাকায় হয় ‘বডি কন্ট্রাক্ট’।
অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে ঢোকার অন্যতম একটি পথ লিবিয়া। এ পথে ইউরোপে যাওয়ার জন্য মূলত ব্যবহার করা হয় ছোট ছোট নৌকা। এসব নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী তোলা হয়। প্রতিবছর এ পথে যাত্রা করতে গিয়ে প্রাণ হারান অনেক অভিবাসনপ্রত্যাশী। এ জন্য এ কাজে দালালেরা চালু করেছেন ‘বডি কন্ট্রাক্ট’ চুক্তি। এই চুক্তির আওতায় যত দিন লাগুক, অভিবাসনপ্রত্যাশীকে ইতালি জীবিত পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে টাকা নেন দালাল। সে পর্যন্ত একজন অভিবাসনপ্রত্যাশীর থাকা, খাওয়া, বিমানভাড়া—সবকিছুই বহন করে দালাল চক্র।
কুদ্দুস ব্যাপারী দালাল মনিরের টাকা পরিশোধ করতে তাঁর দুই বিঘা জমি ৪০ লাখ টাকা মূল্যে মনিরের স্ত্রী হামিদা বেগমের নামে লিখে দেন। চুক্তি অনুযায়ী মনির তাঁকে অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে পাঠালেও সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর থেকে কুদ্দুসের কোনো খোঁজ মিলছে না। পরিবারের ধারণা, আরও অনেকের সঙ্গে কুদ্দুসও মারা গেছেন।
কুদ্দুস ইতালি যাচ্ছেন শুনে তাঁর ভগ্নিপতি সুজন হাওলাদার (৩৯) বডি কন্ট্রাক্টে দালাল মনিরকে ১৬ লাখ টাকা দেন। তিনি এই দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।
কুদ্দুস রাজৈর পৌরসভার মজুমদারকান্দি এলাকার আতাহার ব্যাপারীর ছেলে। সুজন হাওলাদার তাঁর চাচাতো বোনের স্বামী। সুজন খুলনা নৌবন্দর এলাকার হালিম হাওলাদার ছেলে। তাঁর গ্রামের বাড়ি খুলনা হলেও তাঁর পরিবারের জীবিত কেউ না থাকায় শ্বশুরবাড়ি রাজৈরের মজুমদারকান্দিতে দুই সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন।
পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় ৭ বছর ছিলেন কুদ্দুস। বছরে একবার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দেশে আসতেন। আগস্টে নবজাতক সন্তানকে দেখতে দেশে এসেছিলেন। মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের পরিস্থিতি ভালো চলছে না। এতে হতাশায় ছিলেন কুদ্দুস। বিষয়টি জানার পর থেকে মনির শেখ কুদ্দুসকে ইতালি যাওয়ার প্রলোভন দেখান। মনিরের প্রস্তাবে রাজি হলে নভেম্বরের শুরুর দিকে ঢাকা থেকে প্রথমে মিসরে পাঠানো হয় কুদ্দুসকে। ভগ্নিপতি সুজন ২০ ডিসেম্বর ঘর ছাড়েন। তাঁকেও ঢাকা থেকে মিসর হয়ে নেওয়া হয় লিবিয়া। সেখানে একটি বন্দিশালায় প্রায় দুই মাস কাটানোর পর তাঁদের গত ২৪ জানুয়ারি ইতালির উদ্দেশে লিবিয়ার বেনগাজি উপকূল নেওয়া হয়। পরে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকায় তাঁদের তুলে দেওয়া হয়। কয়েক ঘণ্টা বাদেই নৌকাটি ভূমধ্যসাগরে ডুবে যায়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত লিবিয়ার উপকূলে ২৩ জনের মরদেহ ভেসে এসেছে। এর মধ্যে সুজনের মৃত্যুর বিষয়টি তাঁর স্ত্রী মুন্নী বেগম নিশ্চিত করেছেন।
মুন্নী বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সুজনের কোনো ঘরবাড়ি নেই। তাই বাবার বাড়িতে আমার দুইডা যমজ বাচ্চা নিয়া থাকি। ১৬ লাখ টাকা ধারদেনা কইরা মনির দালালরে দিছি। দালাল আমাগো লগে এইডা কী করল? বডি কন্ট্রাক্টে কথা ছিল, যেভাবেই হোক সুজনরে ঢাকা থিকা ইতালি পৌঁছে দিবে। সেই কথা রাখে নাই দালালে। মাঝসাগরে ছাইড়া দিয়া ওরা আমার স্বামীরে মাইরা ফালাইছে। এখন আমি ক্যামনে বাঁচমু? কে খাওয়াইবো আমাগো। ওই দালালের জন্যই আমার স্বামী মারা গেছে। আমি ওর বিচার চাই।’
কুদ্দুসের বড় ভাই সোবাহান ব্যাপারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ভাই মালয়েশিয়াতে মোটামুটি ভালোই ছিল। এবার ছুটিতে দেশে এসেই মনির দালালের প্রলোভনে পড়ে জমিজমা বেচে দিয়ে ইতালির উদ্দেশে গেছে। দুই সপ্তাহ ধইরা ভাইডার কোনো খবর পাই না। ও কি বাঁইচা আছে নাকি মইরা গেছে, তা-ও জানি না। ওর লগে যারা গেম ঘরে (বন্দিশালায়) ছিল, তারা কইছে আমার ভাই নাকি আর নাই। ভাইডার বিষয়ে দালালের কাছে জানতে গেছি, দালালে শান্ত থাকতে কইয়া আর খবর নাই। তারে (দালাল) সকাল-বিকাল খোঁজ কইরাও পাইতাছি না।’
মনিরের তিন জামাতা লিবিয়ার বড় মাফিয়াঅভিযুক্ত দালাল মনির শেখ রাজৈরের মজুমদারকান্দি এলাকার হায়দার শেখের ছেলে। তাঁর তিন মেয়ে, দুই ছেলে। দুই বছর আগেও রাজৈর বাজারে দরজির দোকান করতেন মনির। তিন মেয়েকে বিয়ে দেন লিবিয়াপ্রবাসীর সঙ্গে। এর পর থেকেই মনির মানব পাচারের দালালি পেশায় যুক্ত হন। তাঁর স্ত্রী হামিদা বেগমের নামে গত ৭ মাসে রাজৈর পৌরসভা ও টেকেরহাট বন্দরে কিনেছেন অন্তত ৫ কোটি টাকার জমি।
এলাকাবাসী জানান, মনিরের তিন জামাতা লিবিয়ার মানব পাচারকারী ও মাফিয়াদের সঙ্গে যুক্ত। দালাল মনিরের কাজ হচ্ছে, স্থানীয়ভাবে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের প্রলোভন দেখানো। তারপর জামাতাদের মাধ্যমে বডি কন্ট্রাক্টে তিনি ইতালিতে পাঠানোর কাজ করেন। প্রতিটি চুক্তি করেন ১৬ লাখ টাকায়।
সম্প্রতি লিবিয়া উপকূলে ২৩টি লাশ ভেসে আসার পর থেকে পরিবার নিয়ে আত্মগোপন করেছেন মনির। বাড়িতে তাঁর চাচাতো ভাই ও ফুফুরা তাঁর বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। প্রতিবেশীরা জানান, দরজি মনির এখন ‘মাফিয়া মনির’ হয়ে গেছে।
প্রতিবেশী আকাশ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনির এসব ঘটনা মীমাংসা করার জন্য লোকজন ধরা শুরু করেছেন। আপস-মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত মনির গ্রামের বাড়িতে ফিরবেন না। তবে কোথায় কখন গেছেন, তা কেউ বলতে পারছেন না।’
স্থানীয়দের তথ্যমতে, মনির শেখ ছাড়াও এই চক্রের সঙ্গে রয়েছেন রাজৈরের হরিদাসদি এলাকার স্বপন মাতুব্বর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিকুল ইসলাম, মাদারীপুর সদর উপজেলার পেয়ারপুর এলাকার আম্বিয়া বেগম প্রমুখ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইতালি পাঠানোর স্থানীয় আরেকটি চক্রের এক দালাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের কাজ লোক ম্যানেজ করা। এই কাজ আমরা লিবিয়াতে বসবাসরত বাংলাদেশি দালালের মাধ্যমে করে থাকি। লিবিয়া পর্যন্ত পাঠাতে প্রথম দফায় ১২ লাখ টাকা নিই। পরে গেম দিতে (নৌপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি) ৪ লাখ টাকা নেওয়া হয়। আমরা এখান থেকে লোক আর টাকা কালেকশন করি। মূল কাজ করে লিবিয়ার মাফিয়ারা। কালকিনি উপজেলার শিকারমঙ্গল ইউনিয়নের মৃধাকান্দি গ্রামের হোসেন হাওলাদারের ছেলে মিরাজ হাওলাদার লিবিয়ায় বড় মাফিয়া। তিনিও দীর্ঘদিন ধরে লিবিয়ায় এই কাজ করে যাচ্ছেন। মাদারীপুরে বেশির ভাগ লোকাল দালাল এখন তাঁর হয়েই কাজ করে।’
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ) ভাস্কর সাহা প্রথম আলোকে বলেন, ‘মানব পাচারসংশ্লিষ্ট ঘটনায় থানায় মামলা নেওয়া হচ্ছে। তবে সম্প্রতি কয়েকজন নিহত ও নিখোঁজের ঘটনায় থানায় এখন পর্যন্ত কেউ মামলা করতে আসেননি। রাজৈর উপজেলায় নিহত তিনজন ও নিখোঁজ সাতজন রয়েছেন বলে পরিবার সূত্রে জানতে পেরেছি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, তাঁদের ধারণা, যাঁরা নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁরাও মারা গেছেন। ভুক্তভোগী এসব পরিবারকে আইনি যেকোনো সহযোগিতা করতে পুলিশ সর্বদা প্রস্তুত। এ ছাড়া বেশ কয়েকজন দালালের নাম তাঁরা জানতে পেরেছেন। তাঁদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
আরও পড়ুন‘এই কি সেই গেম! আমার ছওয়ালও নাই, ভাইও নাই’০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুনবাবার অজান্তে ছেলের অবৈধ পথে বিদেশযাত্রা, মৃত্যুতে নির্বাক পরিবার০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫আরও পড়ুন‘আমাগো সুখ আর ঘরে আইলো না’১৯ জুন ২০২৪আরও পড়ুনলিবিয়ার উপকূলে নৌকাডুবিতে ৮ বাংলাদেশির মৃত্যু২৪ ডিসেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ল ল মন র র ১৬ ল খ ট ক র পর থ ক উপজ ল র ক জ কর পর ব র কর ছ ন এল ক র ঘটন য় উপক ল
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’