Samakal:
2025-09-18@10:01:05 GMT

এখনও গেল না বিচারবহির্ভূত সালিশ

Published: 15th, February 2025 GMT

এখনও গেল না বিচারবহির্ভূত সালিশ

মৌলভীবাজারের সেই গৃহবধূ নুরজাহানের কথা কি মনে আছে? যিনি সমাজপতিদের ষড়যন্ত্রমূলক সালিশের রায়ে পাথরের আঘাত ও অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন। সময় বদলেছে, ফতোয়াবাজি কমেছে। কিন্তু নতুন সময়ে নতুন কায়দায় নির্যাতিত হচ্ছে নারী। পরপর দু’বার সাফ চ্যাম্পিয়নের গৌরব এনে দেওয়া নারী ফুটবলাররা অপমানে কাঁদছেন। ধর্ষণ ও হত্যার হুমকি পেয়েছেন একজন নারী ফুটবলার। সম্প্রতি জয়পুরহাট ও দিনাজপুর নারী ফুটবল দলের খেলা আয়োজন ভন্ডুল, নায়িকা অপু, পরীমণি ও মেহজাবিন চৌধুরীকে শোরুম উদ্বোধনে বাধা  প্রমাণ করে, নারীর চলার পথ এখনও অমসৃণ। 

যে দেশে জেন্ডার সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত, সেখানে এমন ঘটনা গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের ঘটনা সংবিধানের ১৯ (সুযোগের সমতা), ২৭ (আইনের দৃষ্টিতে সমতা), ২৮ (ধর্ম প্রভৃতি কারণে বৈষম্য) অনুচ্ছেদগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে সাংঘর্ষিক। একই সঙ্গে এটি দেশের প্রচলিত ফৌজদারি আইনের অধীনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদ (সিডও), সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণার সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

অবৈধ সালিশের পর অসহায় নারীর আত্মহত্যার ঘটনাও থামেনি। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিশের ১১টি ঘটনা ঘটেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ঘটেছে ৪টি ঘটনা। এর মধ্যে রয়েছে– মাদারীপুরের শিবচরে কিশোরীকে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে ধর্ষণ, গর্ভপাত; সালিশে প্রেমিকের প্রেম অস্বীকার এবং প্রেমিকের ছোট ভাইয়ের সঙ্গে বিয়ের সিদ্ধান্ত। কয়েক দিন পর কিশোরী আত্মহত্যা করেন। এ ঘটনায় থানায় আত্মহত্যা মামলা এবং কয়েকজন সালিশকারকেও আসামি করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে কিশোরীকে ধর্ষণ, অন্তঃসত্ত্বা ও সালিশ। এত নির্যাতন সইতে না পেরে মেয়েটির বিষপানে আত্মহত্যা। থানায় ধর্ষণ মামলা হলেও এখন পর্যন্ত আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা হয়নি।

ময়মনসিংহে ধর্ষণের শিকার কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হলে সালিশের মাধ্যমে তাঁকে গর্ভপাত ও বাড়িছাড়া করার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। অভিযুক্তকে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়; ৮০ হাজার টাকা ভুক্তভোগীকে দেওয়া হলেও বাকি টাকা এখনও অপরিশোধিত। ধর্ষণের ঘটনায় মামলাও হয়নি।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে ধর্ষণ মামলা ধামাচাপা দিতে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয় ভুক্তভোগী কিশোরীসহ তাঁর পরিবারকে। এ ক্ষেত্রেও সালিশের মাধ্যমে ‘সমাধান’-এর চেষ্টা চলে। সালিশের পর ধর্ষণ মামলা হয়েছে; কিন্তু হত্যাচেষ্টা মামলা এখনও হয়নি।
প্রতিটি ঘটনায়ই ভুক্তভোগী কিশোরী। আর দু’জন কিশোরী আত্মহত্যা করেছে। এসব ঘটনায়  প্রথমে সালিশের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছে, যখন সমাধান হয়নি তখন মামলা করা হয়েছে। যদি সমাধান হয়ে যেত, তাহলে ঘটনাটি হয়তো সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ হতো না। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে ধর্ষণের ঘটনা এবং এ-সংক্রান্ত সালিশের সংখ্যা অনেক বেশি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ সালিশের ঘটনায় প্রচলিত আইন অনুযায়ী সালিশকারদের বিরুদ্ধে মামলা হয় না।

ধর্ষণসংক্রান্ত ঘটনা লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বেশির ভাগ পরিবার প্রান্তিক শ্রেণির। ঘটনা ঘটার পর আইনসংক্রান্ত সচেতনতা না থাকা এবং ‘সম্ভ্রমহানির ভয়ে’ অনেকেই বুঝে উঠতে পারে না ধর্ষণ-পরবর্তী কী পদক্ষেপ নেবে। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে গ্রামের মাতবর শ্রেণি ও স্বার্থান্বেষী মহল বোঝাতে থাকে, আইনের দ্বারস্থ হলে অনেক ঝামেলা। তারা সালিশ করে বিচার পাইয়ে দেবে। বিচার করিয়ে দেওয়ার নামে সালিশকারীরা দুই পক্ষ থেকে কমিশনও নেন। এতকিছুর পরও সালিশের পুরো টাকা ভুক্তভোগীর পরিবার পায় না। জমি বা আর্থিক লেনদেন নিয়ে বিরোধে সব পক্ষের সম্মতিতে সালিশ হতে পারে। কিন্তু ধর্ষণ বা ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ সালিশের মাধ্যমে নিষ্পত্তির সুযোগ নেই। মানবাধিকার কর্মীরা বহুদিন ধরেই বলে আসছেন, আইন ও বিচারবহির্ভূত সালিশের বিরুদ্ধে পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা জোরদার ও  ধর্ষণসংক্রান্ত আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। কিন্তু রাষ্ট্রের দিক থেকে দৃশ্যমান কার্যক্রম নজরে আসছে না।
শিশু ও নারীর প্রতি নির্যাতন রোধে আইনানুগ সালিশের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। পারিবারিক সমস্যা সমাধানে সালিশে আদালতেরও অনুমোদন আছে।  ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রে সালিশের আয়োজন বিচারহীনতার সংস্কৃতি, আইনের প্রতি অবজ্ঞা ও আস্থাহীনতাই প্রকাশ করে।
কেবল অবৈধ সালিশ বন্ধ নয়; নারী ফুটবলার কিংবা চিত্রনায়িকাদের জনপরিসরে অংশগ্রহণের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষায়ও অন্তর্বর্তী সরকারের আশু দৃষ্টি প্রয়োজন। অন্যথায় অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের স্বপ্ন অধরাই রয়ে যাবে।

তানিয়া খাতুন: মানবাধিকার কর্মী

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘটন য় আইন র র ঘটন ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শান্তি স্থাপনের লক্ষ্যে আত্মসমর্পণ ও অস্ত্রত্যাগের প্রস্তাব মাওবাদীদের
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত