বগুড়ার ধুনট উপজেলায় আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালের সমর্থনে মশালমিছিলকে কেন্দ্র করে দলটির অন্তত ছয় নেতা-কর্মীর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে। গতকাল সোমবার রাতের বিভিন্ন সময়ে এসব ঘটনা ঘটে।

গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে ধুনট উপজেলা সদরের মডেল মসজিদের সামনে আওয়ামী লীগের ২০ থেকে ২৫ কর্মী-সমর্থক মাস্ক পরে একটি মশালমিছিল বের করেন। মিছিলটি ধুনট-গোঁসাইবাড়ি সড়কের চারতলা এলাকায় পৌঁছালে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। পরে উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বনি আমিনসহ কয়েকজন নেতা-কর্মীর বাড়িতে তাঁরা হামলা ও ভাঙচুর করেছেন বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তিরা অভিযোগ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করেন, হরতালের সমর্থনে বের করা মশালমিছিলে বিএনপির ১৫ থেকে ২০ নেতা-কর্মী ধাওয়া দেন। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সোনামুখী সড়ক হয়ে পালিয়ে যান। তাঁদের ধরতে না পেরে ধুনট উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক বনি আমিনের অফিসার্সপাড়ার বাসায় হামলা করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।

এ ছাড়া পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক আল-আমিন তরফদার, যুবলীগ নেতা গোলাম মুহিত চাঁন, পৌর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রাব্বি, ছাত্রলীগ কর্মী জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র এ জি এম বাদশাহর বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে আওয়ামী লীগের মশালমিছিলের প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার দুপুরে পাল্টা মিছিল করেছে ধুনট উপজেলা যুবদল।

বনি আমিনের স্ত্রী পারভীন আকতার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাত সাড়ে আটটার দিকে হঠাৎ বাসার বাইরে হট্টগোল শোনা যায়। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাইরে থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। বিকট শব্দে তিনটি জানালার গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। আতঙ্কে আমার শাশুড়ি ও ছোট ছোট দুই শিশু চিৎকার শুরু করে। প্রাণের ভয়ে বাসার ফটক বন্ধের পর বিদ্যুৎ–সংযোগ বন্ধ করে দিই। হামলাকারীরা ভেতরে ঢুকতে না পেরে পাশের এলাকায় আওয়ামী লীগ–সমর্থক আরও তিন-চারটি বাসা ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করেন। হামলাকারীরা ধুনট পৌর বিএনপির সভাপতি আলীমুদ্দীন হারুনের অনুসারী।’

তবে অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন আলীমুদ্দীন হারুন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা মশালমিছিল করার চেষ্টা করলে দলীয় নেতা-কর্মী ও বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁদের ধাওয়া করেন। ধাওয়া খেয়ে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের কোনো কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরে বিএনপির কেউ জড়িত নন।’
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

সাইদুল আলম বলেন, এসব হামলা-ভাঙচুরের বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি।

এদিকে আওয়ামী লীগের হরতালের সমর্থনে গতকাল রাতে বগুড়া সদর, সারিয়াকান্দি, ধুনট ও শাজাহানপুরেও ঝটিকা মশালমিছিল হয়েছে। শাজাহানপুর উপজেলার বেতগাড়ী এলাকায় মহাসড়কে পরপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এতে কেউ হতাহত হননি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র কর ম র গতক ল আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্যে ভারতে ক্ষোভ, কী বলেছেন তিনি

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনির সাধারণত আলোচনার কেন্দ্রে আসেন না। তবে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছেন তিনি—শুধু পাকিস্তানে নয়, সীমানা পেরিয়ে ভারত ও বিশ্বের বিভিন্ন কূটনৈতিক কেন্দ্রেও।

ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন। এর কয়েক দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে কিছু মন্তব্য করেন আসিম মুনির। তাঁর এসব মন্তব্য পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অবস্থান ও আঞ্চলিক উত্তেজনায় তাদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই কাশ্মীরকে পুরোপুরি নিজেদের বলে দাবি করে। কিন্তু তারা এটির একেক অংশ শাসন করে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে এ ভূখণ্ড।

জেনারেল মুনিরের বক্তব্য যদিও প্রত্যক্ষভাবে পেহেলগামের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়, তবু তাঁর বক্তব্য বিশ্লেষণ করে এটিকে বেশি আগ্রাসী মনোভাবের হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সেনাপ্রধান হিসেবে জেনারেল আসিম মুনিরকে বর্তমানে পাকিস্তানের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি হিসেবে ধরা হয়। দেশটির রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ, সরকারকে ক্ষমতায় বসানো ও অপসারণে দীর্ঘদিন ধরে সেনাবাহিনী নানা ভূমিকা রাখছে বলে অভিযোগ করা হয়ে থাকে। এখন ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী প্রতিবেশী এ দুই দেশে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠছেন তিনি।

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

২০২২ সালের নভেম্বরে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব নেন জেনারেল মুনির। দায়িত্ব গ্রহণের পর তাঁকে প্রকাশ্যে তেমন কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে তাঁর একটি বক্তব্য ব্যাপকভাবে মনোযোগ কেড়েছে।

আরও পড়ুনভারতে অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে মুসলিমবিদ্বেষী গান, কনটেন্ট২৯ এপ্রিল ২০২৫

ইসলামাবাদে গত ১৭ এপ্রিল প্রবাসীদের সঙ্গে একটি বৈঠকে আসিম মুনির বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ থেকে আলাদা।’ কাশ্মীরকে পাকিস্তানের ‘জীবন সঞ্চারণী শিরা’ উল্লেখ করে তিনি অঙ্গীকার করেন, ‘ভারতের দখলদারত্বের বিরুদ্ধে কাশ্মীরিদের বিরোচিত লড়াইকে পাকিস্তান কখনো পরিত্যাগ করবে না।’

জেনারেল মুনিরের এ বক্তব্যের সঙ্গে পেহেলগামে হামলার কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকতে পারে। কেননা পাকিস্তানের নেতারা অনেক বছর ধরেই এমন ধরনের আদর্শিক বক্তব্য–বিবৃতি দিয়ে আসছেন।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার স্থলে ছড়িয়ে আছে চেয়ার–টেবিল

সম্পর্কিত নিবন্ধ