গত এক–দেড় দশকে দেশের নদ–নদীগুলোর ভয়াবহ পরিণতির অন্যতম কারণ হচ্ছে অবাধে ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। এ সময়ে বালুখেকোদের রাজনৈতিক দল–মত–নির্বিশেষে একটি চক্র গড়ে ওঠে। প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তারাও এর সঙ্গে যুক্ত। বালুখেকোদের বেপরোয়া কর্মকাণ্ডের ফলে নদী ও পরিবেশের ক্ষতি ছাড়াও বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, হুমকির মুখে পড়ছে স্থানীয় জনপদ। যেমনটি দেখা যাচ্ছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলে। সেখানে বালু উত্তোলন নিয়ে হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সীতাকুণ্ডের সমুদ্র উপকূলের ১০ কিলোমিটারের বেশি এলাকায় চলছে নির্বিচার বালু উত্তোলন। সাগরের মধ্যে ড্রেজার বসিয়ে বালু তুলে সাগর থেকেই সেসব বালু নৌযানে করে বিক্রি হচ্ছে। নির্বিচার বালু তোলার কারণে সীতাকুণ্ডের কুমিরার আলেকদিয়া থেকে শুরু করে দক্ষিণে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে উপকূলের জনবসতি।

বালু উত্তোলনে আইন অনুযায়ী যেসব নিয়মকানুন অনুসরণ করতে হয়, যেভাবে ড্রেজার ব্যবহার করতে হয়, তার কোনো কিছুই সেখানে মানা হচ্ছে না। এমনকি যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। কারখানা ও জাহাজভাঙা ইয়ার্ড সচল করার নামে বালু তোলা হলেও আদতে সেখানে বালুর ব্যবসা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন উপকূলের বাসিন্দারা। বালু তোলা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। সেখানে অবৈধভাবে বালু তুলতে বাধা দেওয়ায় এক জেলেকে পিটিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। চার দিন পর গত শুক্রবার তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

এখন বালুখেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরের তেমন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না বলা যায়। পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘বালু তোলার বিষয়টি সাধারণত এসি ল্যান্ড দেখবেন। আমরাও অভিযান করি। তবে সে ক্ষেত্রে উপজেলা প্রশাসনের সাহায্য নিতে হয়।’ অন্যদিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার বক্তব্য, ‘দুটি প্রতিষ্ঠান বন্দর থেকে বালু তোলার অনুমতি পেয়েছে বলে আমাকে জানিয়েছে। তবে সেগুলো সঠিক কি না, তা যাচাই করে দেখা হয়নি। বন্দর থেকেও কারা কারা বালু তোলার অনুমতি পেয়েছে, সে বিষয়ে কোনো চিঠির অনুলিপি আমাদের দেওয়া হয়নি। সে জন্য অভিযানও করা হয়নি।’

অবৈধভাবে বালু তোলার কারণে বিশাল এলাকার বেড়িবাঁধ ইতিমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে, এমনকি হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনা ঘটে গেছে। এরপরও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বক্তব্য শুনলে মনে হচ্ছে তারা বিষয়টি নিয়ে অতটা চিন্তিত নয়। বিষয়টি একই সঙ্গে দুঃখজনক ও হতাশাজনক। বেপরোয়া বালুখেকোদের বিরুদ্ধে তারাই যদি ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে ভুক্তভোগীরা কোথায় যাবে, কার কাছে যাবে? অতএব বালুখেকোদের থামাতেই হবে। এখন দেখার অপেক্ষা প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব শ ব যবস ব ষয়ট উপক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস

বাবা সন্তানের ওপর ছায়ার মতো স্নেহময় এক উপস্থিতি। নিঃশর্ত ভরসার প্রতীক। সন্তানের ভবিষ্যৎ গঠনের প্রয়োজনে নিজের বর্তমান, এমনকি নিজের স্বপ্নও নীরবে উৎসর্গ করে দিতে পারেন যিনি– আজ তাদের স্মরণ ও শ্রদ্ধা জানানোর দিন। বাবা দিবস উপলক্ষে সমতা’র বিশেষ আয়োজন। গ্রন্থনা শাহেরীন আরাফাত

আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা বৃহত্তর বরিশালে। এখন সেই জায়গাটা পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি পৌরসভার সমুদয়কাঠি গ্রাম। তখনকার সামাজিক পরিসরে আমাদের পরিবারের অবস্থা সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু ভালো ছিল। আমার বাবা বিজয় কুমার আইচ তখন পিরোজপুরে কাজ করতেন। তাঁর রেশনের দোকান ছিল। প্রতি শনিবার বাড়ি আসতেন। আমরা বাবার আশায় বসে থাকতাম। এটি ছিল আমাদের জন্য একরকম আশীর্বাদের মতো।
বাবার একটি ব্যবসাও ছিল। এ থেকে মূলত আমাদের পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষের চেয়ে সম্ভবত বাবার জ্ঞান বা বোধ উন্নততর ছিল। তাঁর ব্যক্তিত্বের জন্য দশ গ্রামের লোকজন তাঁকে মানত। গ্রামে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকত। বাবার সঙ্গে কথা না বলে কেউ থানা-পুলিশ করতে যেত না। বাবা সবাইকে খুব বুঝিয়ে বলত– মামলা করলে কে জিতবে, কে হারবে– এটি অনেক পরের কথা। মামলা নিয়ে বরিশাল-পিরোজপুরে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে দুই পক্ষই নিঃস্ব হয়ে পড়বে। তারচেয়ে বরং তোমরা নিজেরা মিটমাট করে ফেল।
গ্রামের পণ্ডিতরা তখন তালপাতায় অ-আ-ক-খ শেখাতেন হাত ধরে ধরে। আমার সেটি একদম পছন্দ হতো না। বাবা কী করলেন, তিনি একটা স্লেট ও পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকতে শুরু করলেন। অ-আ-ক-খ দিয়ে যত ছবি আঁকা হয়, তা শেখাতেন। এর মধ্যে আমার যে ছবিটা পছন্দ হতো, সেটি আমি মনের মধ্যে গেঁথে নিতাম। যার ফলে বাবার মাধ্যমে অত্যন্ত আনন্দদায়ক এক শিক্ষা পেয়েছি আমি। 
আমার বাবারা ছিলেন ৪ ভাই। এর মধ্যে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দু’জন পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। আমার বাবা ও এক কাকা বাড়ি ছেড়ে যাননি। আমরা ছিলাম ৬ ভাই ৩ বোন। কাকাতো ভাই ৪ জন, বোন একজন। মোট ১৪ ভাইবোন। কাকা কম বয়সেই গত হন। বিলাসী জীবন আমাদের ছিল না। তবে গ্রামের মানুষের কাছে আমরা ছিলাম বড়লোক। পরিবারে অনেক সদস্য থাকলেও খাবারের অভাব হতো না কখনোই। এমনকি দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থায়ও খাবারের কষ্ট করতে হয়নি। আমাদের একটা গুদামঘর ছিল। সেখানে বাবা পাশের বন্দর কাউখালী থেকে সারা বছরের চাল, ডাল, পাউডার দুধ, চিনি, লবণ, গুড় এনে ড্রামে ভরে রাখতেন। বাইরে যত সংকটই থাকুক না কেন, বছরজুড়ে খাবারের অভাব হতো না। সমস্যা হতো ঝড়ের সময়। উপকূলীয় অঞ্চলে এমন ঝড় মাঝে মাঝেই আসত। কখনও ঘরের চাল উড়ে গেলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম। 
অন্যদের সামনে বাবা নিজের অবস্থানের জন্যই বেশি হাসি-তামাশা করতেন না। যখন আমাদের সঙ্গে থাকতেন, তখন তিনি একজন সাধারণ মানুষের মতো হাসি-খুশি থাকতেন। তখনকার বাবাদের আমরা মারধর করতে দেখেছি, এমনকি খড়ম দিয়ে পেটাতে দেখেছি। বাবা আমার গালে জীবনেও একটা চড় মারেনি। কোনো ভাইবোনকেও মারধর করতে দেখিনি। তখন হয়তো আরও এমন বাবা ছিলেন। তবে গ্রামে আমি এমন বাবা আর দেখিনি। সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস। সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলেও তিনি কখনও জিজ্ঞেস করতেন না, কেন দেরি করে ঘরে ফিরেছি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশ্ববাজারে আজও বেড়েছে জ্বালানি তেলের দাম
  • ইসরায়েলি যুদ্ধযন্ত্রকে থামাইতেই হইবে
  • বন্ধু হওয়ার সুযোগ দিন, শত্রু নয়
  • ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’
  • একদিনে আয় ৮১ লাখ, ৬ কোটির ক্লাবে শাকিব খানের তাণ্ডব!
  • ফুসফুসের সুরক্ষায় যা করণীয়
  • লন্ডন বৈঠকের পর এখন বিএনপির দৃষ্টি নির্বাচনে , কী ভাবছে অন্য দলগুলো
  • সন্তানের প্রতি ছিল তাঁর অগাধ বিশ্বাস
  • হামলার আগে ইরানে গোপন অভিযান চালায় মোসাদ