সুনামগঞ্জে বিএনপির ১৬ ইউনিটে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা, দুই উপজেলায় হাতাহাতি-বিক্ষোভ
Published: 25th, February 2025 GMT
সুনামগঞ্জে বিএনপির ১২টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে এসব কমিটি ঘোষণার পর জেলার জগন্নাথপুর উপজেলায় দলের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দিরাই উপজেলায় কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ করেছেন দলের একাংশের নেতা–কর্মীরা।
সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, গতকাল দুজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতিতে দিনভর সুনামগঞ্জ শহরের একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা। পরে রাতে ১২টি উপজেলা ও ৪টি পৌরসভার আংশিক আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। প্রতিটি কমিটিতে একজন আহ্বায়ক ও চারজন করে যুগ্ম আহ্বায়কের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। অন্য কোনো পদ বা সদস্যদের নাম ঘোষণা করা হয়নি।
১৬ ইউনিটের আংশিক কমিটি ঘোষণার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুনাজ্জির হোসেন।
কমিটি ঘোষণার পর রাত ১১টার দিকে জগন্নাথপুর উপজেলায় সংগঠনের এক পক্ষ আনন্দ মিছিল বের করে। পরে জগন্নাথপুর পৌর পয়েন্টে দুই পক্ষের নেতা–কর্মীদের মধ্যে প্রথম কথা–কাটাকাটি এবং পরে হাতাহাতি ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। একই সময় দিরাই উপজেলা শহরে ঘোষিত আহ্বায়ক কমিটি প্রত্যাখ্যান করে বিক্ষোভ মিছিল করেন একাংশের নেতা–কর্মীরা।
ঘোষিত কমিটির মধ্যে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ফারুক আহমদ (লিলু), সুনামগঞ্জ পৌরসভায় সাইফুল্লাহ হাসান (জুনেদ), বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় রাজু আহমেদ, জামালগঞ্জ উপজেলায় শফিকুর রহমান, তাহিরপুর উপজেলায় বাদল মিয়া, মধ্যনগর উপজেলায় আবে হায়াত, ধর্মপাশা উপজেলায় লিয়াকত আলী, শান্তিগঞ্জ উপজেলায় জালাল উদ্দিন, জগন্নাথপুর উপজেলায় আবু হুরায়রা ছাদ, জগন্নাথপুর পৌরসভায় সালাউদ্দিন মিঠু, ছাতক উপজেলায় ফরিদ উদ্দিন আহমদ, ছাতক পৌরসভায় শামছুল ইসলাম, দোয়ারাবাজার উপজেলায় আলতাফুর রহমান (খসরু), দিরাই উপজেলায় আমির হোসেন, দিরাই পৌরসভায় মিজানুর রহমান এবং শাল্লা উপজেলায় আহ্বায়ক সিরাজুল ইসলাম।
গত বছরের ৪ নভেম্বর জেলা বিএনপির কমিটি ভেঙে কলিম উদ্দিন আহমদকে আহ্বায়ক করে ৩২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে কমিটিতে দলের নেতা আবদুল হকসহ (স্বাক্ষর ক্ষমতাসম্পন্ন) আরও পাঁচজনকে যুক্ত করা হয়। আহ্বায়ক কমিটি প্রথম বৈঠকে জেলার ১৬টি ইউনিট কমিটি ভেঙে দেয়। পরে এসব কমিটির আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করা হয়। এতে প্রায় ৪০০ জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। জেলা কমিটির নেতারা বৈঠক করে এসব জীবনবৃন্তান্ত যাচাই-বাছাই করেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি এসব কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও জেলা কমিটির নেতারা কিছু নাম নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ওই দিন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র উপজ ল য় স ন মগঞ জ ই উপজ ল প রসভ য় ব এনপ র কম ট র ক কম ট
এছাড়াও পড়ুন:
শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।
টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।
একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।
আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।
ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।
ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।
পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল