দেশব্যাপী চলছে ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটনের ‘ডিজিটাল ক্যাম্পেইন সিজন-২২’। এর আওতায় কিস্তিতে ওয়ালটন ব্র্যান্ডের একটি ফ্রিজ কিনে ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার কলেজছাত্র রাসেল ফকির। ঈদের আগে একসঙ্গে এত টাকা পেয়ে খুশিতে আত্মহারা রাসেলের পরিবার।

আসন্ন ঈদ উৎসবে দেশের ইলেকট্রনিক্স খাতের সেরা ব্র্যান্ড ওয়ালটন পণ্যের ক্রেতারা আবারো মিলিয়নিয়ার হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। ক্যাম্পেইনের এ সিজনেও দেশের যেকোনো ওয়ালটন প্লাজা ও পরিবেশক শোরুম থেকে ফ্রিজ, এয়ার কন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন অথবা বিএলডিসি ফ্যান কিনে ক্রেতারা পেতে পারেন ১০ লাখ টাকা। এছাড়াও আছে লাখ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচারসহ নিশ্চিত উপহার। চলতি বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে ঈদুল আজহা পর্যন্ত এ সুবিধা পাবেন ক্রেতারা।

মঙ্গলবার (৪ মার্চ, ২০২৫) বিকেলে চরভদ্রাসন আদর্শ স্কুল মাঠে আনুষ্ঠানিকভাবে রাসেল ফকিরের হাতে ১০ লাখ টাকার চেক তুলে দেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা আমিন খান। 

আরো পড়ুন:

ওয়ালটনের ৩ মডেলের কমার্শিয়াল ওয়াশিং মেশিন উদ্বোধন

সপ্তম ওয়ালটন কাপ গলফ টুর্নামেন্ট সমাপ্ত

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের চিফ মার্কেটিং অফিসার জোহেব আহমেদ, চরভদ্রাসন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রজিউল্লাহ্ খান, গাজীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এয়াকুব আলী, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম, চরভদ্রাসন বাজার বণিক সমিতির সভাপতি আলমগীর হোসেন মোল্লা, ওয়ালটন প্লাজার চিফ সেলস এক্সিকিউটিভ ওয়াহিদুজ্জামান তানভির, চিফ ডিভিশনাল অফিসার আল মাহফুজ খান, চরভদ্রাসন ওয়ালটন প্লাজার ম্যানেজার তরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

রাসেল ফকির চরভদ্রাসন উপজেলার উত্তর আলমনগর এলাকার দিনমজুর রজ্জব ফকিরের ছেলে। রাজেন্দ্রপুর সরকারি কলেজে স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ছেন রাসেল। 

সম্প্রতি বিয়ে করেছেন রাসেল ফকির। নতুন সংসারে ব্যবহারের জন্য গত মাসের ২৫ তারিখে ওয়ালটন প্লাজা থেকে ১১ হাজার ৫০০ টাকা ডাউনপেমেন্ট দিয়ে ৪১ হাজার ৭৯০ টাকা দামের একটি ফ্রিজ কেনেন রাসেল। ফ্রিজটি কেনার পর তার নাম, মোবাইল নাম্বার এবং ক্রয়কৃত ফ্রিজের মডেল নাম্বার ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন করা হয়। কিছুক্ষণ পরেই তার মোবাইলে ওয়ালটনের কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা পাওয়ার একটি ম্যাসেজ যায়।

রাসেল ফকির বলেছেন, “একটি ফ্রিজে আমার ভাগ্য খুলবে, তা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। ওয়ালটনের কল্যাণে এখন আমার অনেক স্বপ্ন পূরণ হবে। ওয়ালটন থেকে পাওয়া টাকায় ব্যবসা করে সংসারের চাকা সচল রাখতে সক্ষম হব। ওয়ালটন কর্তৃপক্ষকে হৃদয়ের গভীর থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”

চিত্রনায়ক আমিন খান বলেন, “ওয়ালটন শুধু ব্যবসা করে না। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নেও কাজ করছে। এরই ধারাবাহিতকায় আজ ১০ লাখ টাকা পেলেন সৌভাগ্যবান ক্রেতা রাসেল ফকির। সারা দেশে এ ক্যাম্পেইন চলছে। সবার উচিত, ওয়ালটনের মতো ব্র্যান্ডের পণ্য কেনা। কষ্টে উপার্জিত টাকা যেন নন-ব্র্যান্ডেড পণ্য কেনার পেছনে ব্যয় না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত। দেশের টাকা দেশে রাখতে দেশে উৎপাদিত আন্তর্জাতিক মানের পণ্য কিনতে হবে। ওয়ালটন যে ক্রতাদের দেওয়া প্রতিশ্রতি রক্ষা করে, তার প্রমাণ আজকের এ অনুষ্ঠান।”

ঢাকা/একরাম/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ১০ ল খ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন

পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।

ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।

শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।

পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’

ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ