কুর্দি–অধ্যুষিত সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেসের (এসডিএফ) প্রধানের সঙ্গে একটি চুক্তি সম্পন্ন করার ঘোষণা দিয়েছেন সিরিয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। রাজধানী দামেস্কে গতকাল সোমবার ওই চুক্তি সই হয়।

চুক্তিতে সিরিয়ার উত্তর–পূর্ব অঞ্চলে স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি প্রশাসনের প্রতিষ্ঠানগুলোকে জাতীয় সরকারের সঙ্গে একীভূত করার কথা বলা আছে। এ বছরের শেষ নাগাদ ওই চুক্তি বাস্তবায়নের উদ্যোগ শুরু হবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

প্রেসিডেন্ট শারার নেতৃত্বে সিরিয়ার নতুন সরকার দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে অকার্যকর করে দিতে এবং পুরো দেশের ওপর জাতীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান।

১৩ বছরের বেশি সময় ধরে গৃহযুদ্ধের পর গত বছরের ডিসেম্বরে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান সিরিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদ।

কয়েক দিন ধরে সাবেক আসাদ সরকারের অনুগত আলাউইত সম্প্রদায়ের ওপর ভয়াবহ নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে। আলাউইতদের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে লুটপাট চালানো হচ্ছে এবং তাঁদের গণহারে হত্যা করা হচ্ছে। সিরিয়ার সংখ্যালঘু আলাউইতরা দেশটির উপকূলীয় অঞ্চলের দিকে বসবাস করেন।

আসাদ সরকারের পতনের পর আলাউইতদের ওপর গত কয়েক দিনের হামলা সিরিয়ার বর্তমান সরকারকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। বাশার আল-আসাদ আলাউইত সম্প্রদায়ের ছিলেন।

আলাউইতিদের ওপর ওই নৃশংসতার খবর প্রকাশের কয়েক দিনের মধ্যে এসডিএফের সঙ্গে চুক্তি সই করার ঘোষণা দিল সিরিয়ার নতুন সরকার।

গতকাল সোমবার সিরিয়ার প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। সেখানে উভয় পক্ষ যে চুক্তি সই করেছে, তার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘দেশের উত্তর–পূর্বাঞ্চলে থাকা সব ধরনের বেসামরিক ও সামরিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সিরিয়ার জাতীয় প্রশাসনের সঙ্গে একীভূত করা হবে, যার মধ্যে সীমান্ত পোস্ট, বিমানবন্দর এবং তেল ও গ্যাসক্ষেত্রও রয়েছে।’

চুক্তি সই হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট শারা এবং এসডিএফ নেতা মাজলুম আবদি করমর্দন করছেন—এমন একটি ছবি সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘কুর্দি সম্প্রদায় সিরিয়া রাষ্ট্রের অপরিহার্য অংশ এবং রাষ্ট্র থেকে তাঁদের নাগরিকত্ব ও সব ধরনের সাংবিধানিক অধিকার দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হচ্ছে।’

বিবৃতিতে সিরিয়ায় সমাজের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ‘বিভাজন, ঘৃণামূলক বক্তব্য এবং বিভেদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা’ প্রত্যাখ্যান করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।

সরকারের সঙ্গে চুক্তির বিষয়ে আজ মঙ্গলবার এসডিএফ প্রধান আবদি বলেছেন, এই চুক্তি নতুন এক সিরিয়া গঠনের সত্যিকারের সুযোগ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে আবদি আরও লেখেন, ‘আমরা এমন একটি উন্নত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, যা সিরিয়ার সব মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবে এবং শান্তি ও মর্যাদার জন্য তাঁদের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করবে।’

সিরিয়ার ডি ফ্যাক্ট স্বায়ত্তশাসিত কুর্দি প্রশাসনের ডি ফ্যাক্ট সশস্ত্র বাহিনী হিসেবে কাজ করে এসডিএফ। সিরিয়ার উত্তর ও পূর্বের বিশাল অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ কুর্দি প্রশাসনের হাতে। দেশটির বেশির ভাগ তেল এবং গ্যাসক্ষেত্রের নিয়ন্ত্রণও কুর্দিদের হাতে।

আরও পড়ুনসিরিয়ায় আলাউইতদের হত্যাকারী কারা২২ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনসিরিয়ায় সাধারণ মানুষ হত্যার ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসছে১০ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সরক র র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পকে ইউক্রেনের পাশে থাকার আহ্বান রাজা চার্লসের

বিশ্বের সবচেয়ে জটিল কিছু সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিগত প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছেন ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লস। একই সঙ্গে তিনি ‘স্বৈরাচারের (রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) বিরুদ্ধে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন’ দেওয়ার জন্য ট্রাম্পের প্রতি আহ্বান জানান। খবর বিবিসির।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফরের প্রথম দিনে উইন্ডসর ক্যাসলে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে দেওয়া বক্তৃতায় এ কথা বলেন রাজা।

আরো পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত

সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকের ওপর ক্ষেপলেন ট্রাম্প

জবাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ সম্পর্কের প্রশংসা করে বলেন, এ সম্পর্ককে ‘বিশেষ’ শব্দ দিয়ে যথাযথভাবে বোঝানো যায় না।

উইন্ডসর ক্যাসলে ১৬০ জন অতিথির জন্য আয়োজিত জাঁকজমকপূর্ণ এই নৈশভোজে রাজার বক্তৃতায় দুই দেশের গভীর বন্ধন এবং সাংস্কৃতিক, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক ধরে রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের রাষ্ট্রীয় এ সফর চলবে আজ বৃহস্পতিবারও। এদিন নানা অনুষ্ঠানে মার্কিন ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পের সঙ্গে অংশ নেবেন ব্রিটিশ রানি ক্যামিলা ও প্রিন্সেস অব ওয়েলস।

রাজকীয় অ্যাপায়ন শেষে ট্রাম্পের আজকের কর্মসূচি রাজনৈতিক আলোচনায় রূপ নেবে। আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে তার সরকারি বাড়ি চেকার্সে বৈঠক করবেন। বৈঠক শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনও হবে। 

বুধবারের (১৭ সেপ্টেম্বর) রাষ্ট্রীয় ভোজ ছিল আড়ম্বর ও রাজনীতির সমন্বয়ে সাজানো এক বিশেষ আয়োজন। ভোজে রাজা, রানি ও রাজপরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্যদের উপস্থিতিতে ট্রাম্পকে স্বাগত জানানো হয় উইন্ডসরে।

উইন্ডসর ক্যাসলের মনোরম প্রাঙ্গণে পৌঁছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও মেলানিয়া রাজকীয় ঘোড়ার গাড়ি থেকে নামেন। সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে সাজানো সেনাদলের অভিবাদন গ্রহণ করেন তারা। 

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

যুক্তরাষ্ট্রের অতিথিকে স্বাগত জানাতে প্রিন্স ও প্রিন্সেস অব ওয়েলসও উপস্থিত ছিলেন। তারা প্রেসিডেন্ট ও মেলানিয়ার সঙ্গে উষ্ণ ও বন্ধুত্বপূর্ণ এক বৈঠকও করেন।

ভোজসভায় বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রিন্স উইলিয়ামের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তিনি হবেন ‘অসাধারণ সফল নেতা’। প্রিন্সেস অব ওয়েলস ক্যাথরিনকে তিনি আখ্যা দেন ‘উজ্জ্বল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সুন্দরী’ হিসেবে।

ট্রাম্পের ঐতিহাসিক এ দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় সফর প্রমাণ করেছে রাজা ও তাঁর মধ্যে সম্পর্ক বেশ ভালো। সফরে আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজে তাঁদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের মুহূর্তও দেখা গেছে।

এরপর রাজপ্রাসাদে ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানান রাজা তৃতীয় চার্লস ও রানি ক্যামিলা। ট্রাম্প যখন রাজার সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছিলেন, তখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ের ছয়টি কামান থেকে একযোগে ৪১ বার তোপধ্বনি করা হয়। একই সময়ে টাওয়ার অব লন্ডন থেকে একই রকম তোপধ্বনি হয়।

ট্রাম্প দম্পতিকে স্বাগত জানানোর এ আয়োজনে অংশ নেন ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর ১ হাজার ৩০০ সদস্য। ছিল শতাধিক ঘোড়া।

যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তাদের মতে, বিদেশি কোনো রাষ্ট্রপ্রধানকে স্বাগত জানানোর জন্য দেশটিতে আয়োজিত স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সামরিক সংবর্ধনা ছিল এটি।

বিবিসি বলছে, রাজকীয় অনুষ্ঠানের পাশাপাশি, বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা থাকবে।

যুক্তরাজ্যে রাষ্ট্রীয় সফর হলো একধরনের নরম শক্তির কূটনীতি, যা গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য রাজকীয় আকর্ষণ ব্যবহার করে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর কেউ নেই।

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী স্টারমার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আর্থিক সেবা, প্রযুক্তি এবং জ্বালানি খাতে ঘনিষ্ঠ সমন্বয় গড়ে তুলে যুক্তরাজ্যকে আমেরিকান বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য হিসেবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করছেন। এর মাধ্যমে তিনি নিজ দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করতে চাইছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সফর শুরু হওয়ার সাথে সাথে, মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্যে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের একটি বড় প্রযুক্তি চুক্তি ঘোষণা করা হয়েছে। যার মধ্যে মাইক্রোসফট থেকে ২২ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এবং পারমাণবিক শক্তিতে সহযোগিতা দেখা যাবে। 

ট্রাম্পের সফরের আগে গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট যুক্তরাজ্যের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণায় ৫ বিলিয়ন পাউন্ড বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার ট্রাম্প-স্টারমারের বৈঠক থেকে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসায়িক চুক্তির ঘোষণাও আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ