ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে জাবিতে মার্চ ফর প্যালেস্টাইন
Published: 20th, March 2025 GMT
যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে গাজায় ইজরায়েলি বর্বর হামলার প্রতিবাদে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মার্চ ফর প্যালেস্টাইন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৯ মার্চ) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে শহীদ মিনারে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ও দোয়ার মাধ্যমে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়।
বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীদের ‘ফ্রম দা রিভার টু দা সি, প্যালেস্টাইম উইলবি ফ্রি’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর, জায়োনিজম নো মোর’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘ইনকিলাব ইনকিলাব, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ইন্তিফাদা ইন্তিফাদা, জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ’, ‘ট্রাম্পের দুই গালে, জুতা মারো তালে তালে’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’, ‘হামাসের যোদ্ধারা, লও লও লও সালাম’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে দেখা যায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাবি শাখার আহ্বায়ক আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, “আমরা বাংলাদেশের মানুষ যখন সেহরি-ইফতার করছি, তখন ইজরায়েল যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘন করে নারী ও শিশুদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাচ্ছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। মুসলিম সম্প্রদায়কে একতাবদ্ধভাবে এ অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমরা পুর্বে যেমন ফিলিস্তিনের পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখনো দাঁড়িয়েছি।”
তিনি বলেন, “আমরা ঘরে বসে মিডিয়ায় নারী ও শিশুদের নির্যাতনের যেসব ভয়াবহ চিত্র দেখি, হয়তো বাস্তবে তার চেয়েও করুণ। অনতিবিলম্বে ইজরায়েলি বাহিনীকে এ হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় এ মুসলিম সম্প্রদায় একতাবদ্ধভাবে ইজরাইলের বিরুদ্ধে দাঁড়াবে।”
জাবি শাখা ছাত্রশিবিরের অফিস ও প্রচার সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, “আমেরিকা, ইসরায়েলের মতো দেশ সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কথা বলে। অথচ আমরা দেখি তারাই সন্ত্রাসবাদের ধারক ও বাহক। আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সদা সোচ্চার। আমরা যেকোনো ধরনের সন্ত্রাসবাদ রুখে দিতে প্রস্তুত এবং ভবিষ্যতে এ রকম কোনো সুযোগ আসলে আমরা তা লুফে নিতে দ্বিতীয়বার ভাববো না। স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই, আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই-বোনদের প্রতি যেনো আর কোনো অন্যায়, জুলুম, নির্যাতন করা না হয়।”
বিপ্লবী সাংস্কৃতিক মঞ্চের সংগঠক আলী জাকি শাহরিয়ার বলেন, “ইহুদিদের ইতিহাস আল্লাহর অবাধ্যতার ইতিহাস। বারবার শাস্তি পেয়েও তারা অবাধ্য। আল্লাহ তাদের অভিশপ্ত জাতি হিসেবে ঘোষণা করেছেন। আমরা মুসলিম জাতি বদর, উহুদে লড়াই করেছি। আমরা এমন এক জাতি, যাদেরকে মক্কা থেকে বিতাড়িত করা হলে মদিনায় গিয়ে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে মক্কা বিজয় করেছি। আমাদের অভিধানে পরাজয় বলে কোনো শব্দ নেই।”
তিনি বলেন, “শুধু ফিলিস্তিনে নয়, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও হিন্দুত্ববাদীরা আমাদের মুসলিম ভাইদের নির্যাতন করছে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য যে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, সেই জাতিসংঘ যদি এ সমস্যার সমাধান করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে আমরা এই তারুণ্য শক্তি হিন্দুত্ববাদীদের নির্মূল করে হামাসের ভাইদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ফিলিস্তিনকে মুক্ত কতে ছাড়বো ইনশাআল্লাহ।”
গণঅভ্যুত্থান রক্ষা আন্দোলনের আহ্বায়ক আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, “পবিত্র রমজানে আমরা যখন সন্ধায় ইফতারের পর সেহেরির খাবারের বন্দোবস্ত করি, সেখানে আমার ফিলিস্তিনি ভাইবোনেরা তারা সেহেরি পর্যন্ত বেঁচে থাকবে কি না, সেই নিশ্চয়তা তাদের নেই। বহু অন্যায় আমরা সহ্য করেছি, আর নয়। জাতিসংঘ নামে যে মুলার সংগঠন, আমাদের কাছে মানবতার ছবক নিয়ে আসে। কিন্তু ইজরায়েলের মানবতা লঙ্ঘন বন্ধে তাদের কোন কার্যক্রম আমাদের চোখে পড়ে না। জাতিসংঘের এ নিলীপ্ততাকে তীব্র ঘৃণা সহকারে প্রত্যাখ্যান করছি।”
তিনি বলেন, “মুসলমানদের সংগঠন ওআইসির নেতারা আজ ভোগবিলাসে ব্যস্ত আছে। আমরা মুসলামদের এই মুলার সংগঠনকে থাকার দরকার বলে মনে করি না। যারা ফিলিস্তিনির পক্ষে থাকবে, ইসরায়েল বিরুদ্ধে কথা বলবে, সেসব রাষ্ট্রকে নিয়ে একটি নতুন সংগঠন হবে। আমরা যারা ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বলতে চাই, দরকার হলে আমরা হামাস বাহিনীর সঙ্গে যোগদান করবো।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প য ল স ট ইন ইজর য় ল আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।