ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলার পরামর্শ
Published: 25th, March 2025 GMT
সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় (অফিসার্স অ্যাড্রেস) সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়েছেন। সোমবার সকালে ঢাকা সেনানিবাসে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সেনাপ্রধান সংকটময় সময়ে সবাইকে শান্ত থাকার পরামর্শ দেন। সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য প্রচারের আশঙ্কার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সারাদেশে সেনাসদস্যরা নিষ্ঠার সঙ্গে যে দায়িত্ব পালন করছে, জাতি তা মনে রাখবে। তিনি সবাইকে পেশাদারিত্ব, নিষ্ঠা ও ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন। এ সভায় সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকার বাইরের কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত হন।
সেনাপ্রধান বলেন, রমজানে অনেক সদস্য ক্যাম্পের বাইরে ইফতার করলেও তাদের দায়িত্ব পালনে কোনো শিথিলতা আসেনি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব প্রশংসিত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে তিনি জানান, সম্প্রতি ঢাকা সফরে আসা জাতিসংঘ মহাসচিব শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসাধারণ কাজের প্রশংসা করেছেন।
কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সেনাপ্রধান বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করে শান্তিপূর্ণভাবে সেনানিবাসে ফিরে আসা হবে আমাদের বিজয়।’ জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কঠোর পরিশ্রমের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
সূত্র আরও জানায়, উস্কানিমূলক বক্তব্যে কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখানোর আহ্বান জানান সেনাপ্রধান। এতে উস্কানিদাতারাই লাভবান হবে– মন্তব্য করেন তিনি। গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।
সেনাপ্রধান বলেন, সেনাবাহিনীর কাজ সম্পর্কে সরকার জানে, জনগণও জানে। নানা গুজব ছড়ানো হচ্ছে। কিন্তু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি হয়নি। তিনি সবাইকে ঠান্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার পরামর্শ দেন।
অপরাধের হার পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় একই থাকলেও দৃশ্যমান অপরাধ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করছে বলে জানান সেনাপ্রধান। তাই এসব অপরাধ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পরামর্শ দেন। যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে অবশ্যই দৃঢ়তা বজায় রাখার কথা বলেন তিনি।
উগ্রপন্থার অনুসারীরা যাতে কোনো অস্বাভাবিক কিছু করার চেষ্টা করতে না পারে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার কথাও বলেছেন জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশকে কোনো ক্ষতিকর শক্তি স্পর্শ করতে পারবে না বলেও অভিমত দেন সেনাপ্রধান।
সোমবার রাতে এ সভার বিষয়ে জানতে চাইলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সমকালকে জানায়, এটি নিয়মিত সভা। সেখানে সেনাপ্রধান সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত
এছাড়াও পড়ুন:
সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন: তারেক রহমান
‘সংস্কার ও নির্বাচন উভয়টি প্রয়োজন’-এমন দলীয় ভাবনার কথা তুলে ধরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান-আপনারা একটু সতর্ক থাকবেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের একটি অংশ সংস্কার এবং নির্বাচনকে দাঁড় করিয়ে ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরিকল্পিতভাবে বিরোধ উসকে দিতে চায়। গণতন্ত্রকামী জনগণের মনে এই ধরনের বিশ্বাস জন্ম দিতে শুরু করেছে।”
বৃহস্পতিবার (১ মে) বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব বলেন। লন্ডন থেকে সমাবেশে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হন তিনি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে স্বল্পমেয়াদি এবং দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার প্রস্তাবনা প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “কোনো রাজনৈতিক দলের আপত্তি নেই। তবে পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনকে প্রস্তুত করুন। সুনির্দিষ্টভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণা করুন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কর্মপরিকল্পনায় পথনকশা, গণতন্ত্রকামী জনগণের সামনে সুস্পষ্ট থাকলে জনগণের সন্দেহ, সংশয় কেটে যাবে।”
আরো পড়ুন:
বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আর গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র একই: গয়েশ্বর
লড়াইয়ের মাধ্যমে অধিকার আদায় করে নিতে হবে: নজরুল ইসলাম
তারেক রহমান বলেন, “ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে জনগণের পক্ষে, জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্যই বিএনপিসহ বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলগুলোকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিঃশর্ত সমর্থন দিচ্ছে। তবে গণতন্ত্রকামী জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি অনির্দিষ্টকালের জন্য সমর্থন অব্যাহত রাখা যৌক্তিক নয়।”
পলাতক স্বৈরাচার যাতে আর মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার সুযোগ না পায়, এজন্য জনগণের কাছে জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট কিংবা স্বৈরাচার হওয়ার মন্ত্র দেশের সংবিধান কিংবা দেশের আইনে লেখা থাকে না। বরং সংবিধান ও আইন না মানার কারণে ফ্যাসিবাদের জন্ম হয়। একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যখন থেকে নিজেকে কিংবা নিজেদের একমাত্র অনিবার্য অপরিহার্য মনে করে… জনগণের ওপর একক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে শুরু করে; তখন থেকেই ফ্যাসিবাদের যাত্রা শুরু হয়।”
“এই কারণে বলতে চাই, কোনো ব্যক্তি অথবা গোষ্ঠীর মনে বিনা ভোটে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত সুপ্ত ভাবনা মনের আকাঙ্ক্ষা যেন রাষ্ট্র ও সরকারকে ফ্যাসিবাদের প্রতি প্রলুব্ধ করতে না পারে, সেজন্যই জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, নির্বাচিত জাতীয় সংসদ এবং জবাবদিহিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা দরকার।”
“গণবিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ অথবা স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা অন্তর্বর্তীকালীন যে সরকার গঠিত হয়, তা অবৈধ না হলেও জনগণের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত সরকারের বিকল্প নয় এবং বিকল্প হতে পারে না”, বলেও সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে এবং শ্রমিক দলের প্রচার-প্রকাশনা সম্পাদক মঞ্জরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় এই সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, বিএনপির শ্রম বিষয়ক সহ-সম্পাদক হুমায়ুন কবীর খান, ফিরোজ-উজ-জামান মোল্লা মামুন, শ্রমিক দলের সালাহউদ্দিন সরকার, আবুল কালাম আজাদ, মেহেদি আলী খান, আবুল খায়ের খাজা, মোস্তাফিজুল করীম, সুমন ভুঁইয়া, প্রয়াত শ্রমিক নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান বক্তব্য রাখেন।
বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইয়েদুল আলম বাবুল, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানি, কৃষক দলের সভাপতি হাসান জাফির তুহিন, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বক্তব্য রাখেন।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ