প্রবল বিরোধিতার মুখে পড়ে ভারতের মহারাষ্ট্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন জোট হিন্দি ভাষা শিক্ষা বাধ্যতামূলক করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নিল। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আলোচনার পর স্কুল শিক্ষামন্ত্রী দাদা ভুসে গণমাধ্যমকে বলেন, হিন্দি ভাষা শিক্ষা আবশ্যিক করা হচ্ছে না। ওই ভাষা শিক্ষা এখন থেকে ঐচ্ছিক বলে গণ্য হবে। বাধ্যতামূলক থাকবে শুধু মারাঠি ও ইংরেজি ভাষা।

জাতীয় শিক্ষানীতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের দেবেন্দ্র ফাডনবিশ সরকার রাজ্যের সব স্কুলে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মারাঠি ও ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দি ভাষা শিক্ষাও আবশ্যিক বলে ঘোষণা করেছিল।

১৬ এপ্রিল ওই সরকারি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় বিক্ষোভ ও প্রতিরোধ। শিবসেনা, কংগ্রেস, এনসিপি, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনাসহ (এমএনএস) সব বিরোধী দল জবরদস্তি করে হিন্দি চাপানোর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। সম্মিলিত এ প্রতিরোধের মুখে রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত বদলাতে বাধ্য হয়। ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার হিন্দি ভাষা শিক্ষাকেও বাধ্যতামূলক বলে নির্দেশিকা জারি করেছিল।

পরিবর্তিত সিদ্ধান্তের ফলে হিন্দি তৃতীয় ভাষা হিসেবে গণ্য হবে। তা শেখা শিক্ষার্থীদের জন্য আবশ্যিক নয়। ইচ্ছা করলে শিক্ষার্থীরা তা শিখতে পারবে। স্কুল শিক্ষামন্ত্রী এ কথা জানানোর পাশাপাশি বলেছেন, খুব শিগগির এ বিষয়ে সরকারি নির্দেশিকা জারি করা হবে।

বিরোধীদের পাশাপাশি হিন্দি চাপানোর সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছিল রাজ্য সরকারের ভাষা পরামর্শদাতা কমিটিও। কমিটির চেয়ারম্যান লক্ষ্মীকান্ত দেশমুখ চিঠি লিখে মুখ্যমন্ত্রী ফাডনবিশকে বলেছিলেন, সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে তাঁদের সঙ্গে পরামর্শ করা হয়নি। সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আরজি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি বলেছিলেন, এতে রাজ্যের মঙ্গল।

কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রিভাষা নীতি অনুযায়ী দেশের সব রাজ্যে জবরদস্তি করে হিন্দি চাপানোর বিরুদ্ধে সবার আগে সরব হয়েছিল তামিলনাড়ু সরকার। রাজ্যের ডিএমকে মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন অভিযোগ করেছিলেন, সরকার হিন্দি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে চাইছে। এই হিন্দি আগ্রাসন তাঁরা রুখবেন। স্ট্যালিন এ অভিযোগও করেছিলেন, হিন্দি চাপানোর বিরোধিতা করায় কেন্দ্রীয় সরকার শিক্ষা খাতে রাজ্যের পাওনা প্রায় আড়াই হাজার কোটি রুপি আটকে রেখেছে।

মহারাষ্ট্র সরকারের এই পিছু হটার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে রাজ্যের সব দল।
মহারাষ্ট্রে হিন্দি চাপানোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি সরব হন এমএনএস নেতা রাজ ঠাকরে। বিজেপির হিন্দি আগ্রাসন রুখতে তিনি উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনার সঙ্গে হাত মেলানোরও ইঙ্গিত দেন। দুই ভাইয়ের এই সম্ভাব্য মিলন বৃহন্মুম্বাই পৌরসভা নির্বাচনে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে পারে বলে রাজনৈতিক মহলের ধারণা। রাজ্য রাজনীতিও চনমনে হয়ে উঠতে পারে উদ্ধব ঠাকরের শিবসেনা ও রাজ ঠাকরের মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনা জোটবদ্ধ হলে। সেই সম্ভাবনা দূর করতেই মুখ্যমন্ত্রী ফাডনবিশ পেছু হটলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম খ যমন ত র সরক র র আবশ য ক মন ত র কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ

গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।

ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে। 

আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন। 

ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন। 

অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। 

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।

ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”

প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।

মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”

তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”

মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।

গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ