আজ যেখানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, একসময় সেখানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। যুদ্ধের সময় ভবনটি হয়ে ওঠে টর্চার সেল, যেখানে নারী-পুরুষনির্বিশেষে চালানো হতো পাশবিক নির্যাতন। মাহাতাব বিশ্বাস, শান্তিলতা সাহা—এমন অনেকের রক্তে ভেজা এই মাটি। বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ মহাসিন আলির ভাষায়, ‘ওখান থেকে কেউ ফিরে আসেনি।’ এই নির্মম অতীত আজও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্বে বয়ে চলছে।

এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে ‘অদম্য বাংলা’, ভাস্কর্যটি মুক্তিযুদ্ধের আত্মত্যাগ ও গৌরবময় ইতিহাসের এক জীবন্ত প্রতীক। ২৩ ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্যে পুরুষের পাশাপাশি এক নারীর বলিষ্ঠ ভঙ্গিমা আমাদের মনে করিয়ে দেয়, এই যুদ্ধ ছিল সবার। ভাস্কর্যের চারপাশে পোড়ামাটির ফলকে তুলে ধরা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ, জাতীয় চার নেতার মুখাবয়ব, বধ্যভূমির বিভীষিকা ও আত্মসমর্পণের স্মৃতি। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের সামনে ইতিহাসকে জীবন্ত করে তোলে গল্লামারী বধ্যভূমি স্মৃতি জাদুঘর, যা শুধু একটি জাদুঘর নয়, বরং একধরনের চেতনার পাঠশালা।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযুদ্ধকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ‘চেতনা ৭১’ নামের একটি শিক্ষার্থী সংগঠন। সারা বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সেমিনার, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করে এই সংগঠন। তাদের উদ্যোগে অনেক শিক্ষার্থী মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছেন, ভাবতে পারছেন। আমি নিজেও খুলনা বিভাগীয় লাইব্রেরি থেকে দীপা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আমার মুক্তিযুদ্ধ-খুলনা একাত্তর বইটি পড়ে ক্যাম্পাসের ইতিহাস নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য হয়েছি। অনুভব করেছি, এই ক্যাম্পাস শুধুই শিক্ষার জায়গা নয়, বরং এক গৌরবোজ্জ্বল আত্মত্যাগের স্মৃতিবহ স্থান।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়নের ছাত্র ইন্দ্রনীল দত্তে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ স কর য

এছাড়াও পড়ুন:

তানোরে চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকা মাটি খুঁড়ে উদ্ধার

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি হয়ে যাওয়া প্রায় ১১ লাখ টাকা। এসব টাকা চুরির অভিযোগে আরজেদ আলী ওরফে কুরহান (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার জোড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কুরহানের বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই কুরহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। টাকা উদ্ধারের পর বুধবার বিকেলে কুরহানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, রাজশাহী নগরের শিরোইল মঠপুকুর এলাকার বাসিন্দা মাবিয়া খাতুন জমি বিক্রি করতে গত সোমবার তানোর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সঙ্গে ছিল জমি বিক্রির ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অফিসে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মাবিয়া খাতুন তার টাকার ব্যাগটি চেয়ারের পাশে রাখেন। এ সুযোগে কৌশলে ব্যাগটি নিয়ে সটকে পড়ে কুরহান।

মোবাইল ফোনে কথোপকথন শেষে ব্যাগটি না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন মাবিয়া খাতুন। এতে পুরো অফিসজুড়ে হইচই পড়ে যায়। পরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। ঘটনার দিনই মাবিয়া খাতুন তানোর থানায় অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে পুলিশ প্রযুক্তির ব্যবহার করে চোর শনাক্ত করে। মঙ্গলবার রাতেই কুরহানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশকে কুরহান জানিয়েছেন, ব্যাগটি চুরি করে কাউকে কিছু না বলে তিনি বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে তা পুঁতে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টাকা খরচের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে, এত দ্রুত ধরা পড়বেন, সেটা ভাবেননি।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, কুরহান চুরির কথা স্বীকার করলে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পেছনের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় ব্যাগভর্তি টাকা। আদালতের অনুমতি নিয়ে এই টাকা মালিক মাবিয়া খাতুনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ