খাদ্যের সন্ধানে শামুকখোল পাখি দলবেঁধে এসেছে মৌলভীবাজারের ডোবা-নালা ও ক্ষেতের মাঠে। উপযুক্ত পরিবেশ পর্যাপ্ত খাবার ও প্রজনন সুবিধার কারণে জেলার আনাচে-কানাচে এখন শামুকখোলের দেখা মিলছে অহরহ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, শামুকখোল এখন দেশের বিভিন্ন খাল-বিল এবং নদীর কাছাকাছি এলাকাগুলোতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেছে। এরা প্রজনন শেষে আর দেশের বাইরে যাচ্ছে না। ফলে দেশের আনাচে-কানাচে সহজেই এ পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে।

শামুকখোল এশিয়া মহাদেশের আদি প্রজাতির একটি পাখি। এর বৈজ্ঞানিক নাম-Anastomus oscitans.

শামুকখোল বা শামুকভাঙ্গ (Ciconiidae) সাইকোনিডি গোত্র বা পরিবারের অর্ন্তগত (অ্যানাস্টোমাস) এক প্রজাতির শ্বেতকায় বৃহদাকৃতির পাখি। সিলেট অঞ্চলে এই পাখি শামুকভাঙ্গা নামে পরিচিত।

বন্যপ্রাণি সেবা ফাউন্ডেশনের পরিচালক স্বপন দেব সজল বলেন, ‘‘শামুকখোল পাখি মূলত আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালীন সময়ে আসত। এজন্য এদের পরিযায়ী পাখি বলা হতো। কিন্তু এখন এরা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করে। তাই এদের দেশীয় পাখি হিসেবে গণ্য করা হয়।”

মৌলভীবাজারের কাওয়াদীঘী হাওর পাড়ের বাসিন্দা মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘‘বাংলাদেশের হাওড়-বিল ঝিল, নদী-নালায় শামুকখোল কলোনি স্থাপন করেছে। বিশেষ করে দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে বাঁধাহীনভাবে শামুকখোল এখন উন্মুক্ত আকাশে উড়ছে।’

‘এছাড়াও সিলেটের টাংগুয়ার হাওর, হাকালুকি, কাওয়াদীঘি ও হাইলহাওর এলাকায় এখন শামুকখোল দলে দলে প্রজনন করছে। সৌখিন শিকারিরা মাঝে মাঝে বন্দুক দিয়ে শিকার করায় এরা এলাকা ছেড়ে চলে যায়।”

তিনি বলেন, “এ পাখির ঠোঁটের সঙ্গে অন্য কোনো পাখির ঠোঁটের মিল নেই। শামুকখোল পাখির ঠোঁটের নিচের অংশের সঙ্গে ওপরের অংশে বড় ফাঁক। এরা এ বিশেষ ঠোঁটে শামুক তুলে চাপ দিয়ে শামুকের ঢাকনা খুলে ভিতরের নরম অংশ খেয়ে নেয়। মূলত শামুকের ঢাকনা খোলার শৈল্পিক কৌশলের কারণেই এ পাখির নামকরণ করা হয়েছে শামুকখোল পাখি।”
পাখি বিশেষজ্ঞ ড. মোস্তফা ফিরোজ বলেন, ‘‘দেশে শামুকখোল পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি হলেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তীব্র খরার কারণে এ পাখির প্রজনন খুবই কম হচ্ছে। বিগত কয়েক দশকে কিছু কিছু দেশে আশঙ্কাজনক হারে শামুক খোলের সংখ্যাও কমেছে। ফলে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রকৃতি সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ আইইউসিএন এ পাখিটিকে ন্যুনতম বিপদগ্রস্ত বলে ঘোষণা করেছে।”

তিনি বলেন, ‘‘এদিকে খাল-বিল এবং আবাদি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দেশেও শামুকখোল পাখিসহ অন্যান্য প্রাণিকূল হুমকির মধ্যে রয়েছে। কীটনাশকের ফলে দেশীয় অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্তির পথে।”

ঢাকা/আজিজ/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প রজনন

এছাড়াও পড়ুন:

মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ 

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে বুধবার মধ্যরাত থেকে তিন মাসের জন্য সব ধরনের মাছ শিকার বন্ধ হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক সুষ্ঠু প্রজনন বৃদ্ধি, মজুদ ও ভারসাম্য রক্ষায় সকল প্রকার মাছ শিকার, শুকানো,পরিবহন ও বাজারজাতকরণের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে জেলা প্রশাসন।

রাঙামাটি মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) জানায়, কাপ্তাই হ্রদে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও মাছের স্বাভাবিক বংশ বৃদ্ধির লক্ষে বুধবার রাত ১২টা থেকে ৩১ জুলাই পর্ষন্ত জেলা প্রশাসনের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও বাজারজাতকরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে হ্রদে পানি উঠা নামার ওপর নির্ভর করবে তিন মাস নিষেধাজ্ঞা শেষে আরও সময় বাড়ানো হবে কিনা। এ বছর বিএফডিসি মৎস্য অবতরণ ঘাটে প্রায় ৮ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন মাছ অবতরণ করেছে, যার রাজস্ব আয় হয়েছে ১৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি বছরে হ্রদে ৬০ মেট্রিক টন কার্প জাতীয় মাছের পোনা অবমুক্ত করার কথা রয়েছে।

বিএফডিসি রাঙামাটির বিপণন কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক মো. বদরুদ্দৌজা জানান, বুধবার রাত ১২টা থেকে কাপ্তাই সকল প্রকার মাছ শিকার বন্ধ হয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার রাত ১২টার মধ্যে যেসব মাছ হ্রদ থেকে আহরণ করা হয়েছে সেগুলো জেলেরা বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা নাগাদ বিক্রি ও প্যাকেজজাত পরিবহন করতে পারবেন। বন্ধকালীন সময়ে হ্রদে মাছ শিকার রোধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পাশাপাশি বন্ধ থাকবে স্থানীয় সকল বরফ কলগুলোও।

১৯৬০ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফূলী নদীর উপর বাঁধ দেওয়া হয়। এ বাঁধের ফলে ৭২৫ বর্গকিলোমিটার এলাকায় বিশাল জলধার সৃষ্টি হয়। এ বাঁধের ফলে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের ৫টি ইউনিট থেকে ২৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি মৎস্য উৎপাদন করে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হচ্ছে। রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির দুই উপজেলায় কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকারের ওপর নির্ভর করেন ২৬ হাজার নিবন্ধিত জেলে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্যরাত থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ শিকার বন্ধ