তাপপ্রবাহের মধ্যেই দেশের কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। উত্তর–পূর্বাঞ্চলের সিলেটে গতকাল সোমবার বৃষ্টি হয়েছে। আবার গতকালই দেশের অন্তত আট জেলায় বয়ে গেছে মৃদু তাপপ্রবাহ। রাজধানীতেও তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী তিন থেকে চার দিন তাপপ্রবাহ থাকতে পারে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে এখনো তীব্র তাপপ্রবাহের আশঙ্কা কম।

আজ সকাল থেকেই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের আকাশ ছিল মেঘলা। তবে গরম কমেনি। গত প্রায় তিন থেকে চার দিন তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। তবে রোববার থেকে তাপপ্রবাহের পরিধি কমে আসে। এরপরও গতকাল দেশের সাত স্থানে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে গেছে। এসব এলাকা হলো ঢাকা, ফরিদপুর, রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, নীলফামারী, রাঙামাটি ও যশোর। এর মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে, ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলা হয়। তবে এই তাপপ্রবাহের মধ্যে গতকাল সিলেটে বৃষ্টি হয়। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সিলেটে ৪৪ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মো.

ওমর ফারুক আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, এখন যে তাপপ্রবাহ চলে, এর পরিধি হয়তো বিস্তৃত হবে না। এটি আগামী বৃহস্পতিবার একটু বাড়তে পারে। তবে ৫ বা ৬ এপ্রিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হতে পারে। এরপর তাপমাত্রা কিছুটা কমে আসতে পারে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আলুর দামে ধস, সরকারি দর ২২, কৃষক পান ৫ টাকা 

আলুর দামে ধস নামায় ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন রংপুরের তারাগঞ্জে কৃষকেরা। হিমাগার পর্যায়ে উৎপাদন খরচ ২৯ থেকে ৩০ টাকা হলেও আলু বিক্রি করে কৃষকেরা হাতে পাচ্ছেন মাত্র ৫ টাকা। অথচ ২৭ আগস্ট হিমাগার পর্যায়ে আলুর কেজি ২২ টাকা বেঁধে দেয় সরকার। কিন্তু এ দামে হিমাগারে কেউ আলু কিনছেন না।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার মৌসুমে তারাগঞ্জে ৪ হাজার ৫৩০ হেক্টর জমিতে প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৯৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। তিনটি হিমাগারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ১৬ হাজার মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত হিমাগার থেকে আলু বের হয়েছে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। অথচ গত বছর এ সময় তিন ভাগের দুই ভাগ আলু বের করা হয়েছিল।

ইকরচালীর বড় আলুচাষি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘হিমাগারে জায়গা না পেয়ে গোডাউনে, ঘরে আলু সংরক্ষণ করেছি। তা পচে যাওয়ায় ট্রাকে ট্রাকে সড়কের ধারে ফেলেছি। হিমাগারে যে আলু আছে, দাম না থাকলে ছেড়ে আসতে হবে।’

চাষিদের হিসাব অনুযায়ী, মাঠপর্যায়ে আলু উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২২ টাকা। বস্তা, গাড়িভাড়া, শ্রমিকের খরচ, হিমাগারে সংরক্ষণ খরচসহ এ খরচ দাঁড়াচ্ছে কেজিপ্রতি ২৯ থেকে ৩০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বাজারে আলুর দাম প্রতি কেজি ১২ টাকা। হিমাগারে প্রতি কেজি আলুর দাম ১২ টাকা হলেও হিমাগারভাড়া বাদ দিয়ে কৃষকের হাতে আসছে মাত্র ৫ টাকার কিছু বেশি। ফলে সরকারি ক্রয় দর ২২ টাকা আর বাস্তবে কৃষকের প্রাপ্তি ৫ টাকার মধ্যে বিশাল বৈষম্য তৈরি হয়েছে। এতে হিমাগার পর্যায়ে কেজিতে কৃষকের ১৮ টাকা লোকসান থাকছে।

গতকাল শুক্রবার তারাগঞ্জের তিনটি হিমাগার ঘুরে দেখা গেছে, প্রকারভেদে প্রতি কেজি আলু সাড়ে ১০ থেকে ১২ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। চাহিদা না থাকায় তেমন কর্মব্যস্ততা দেখা যায়নি। হিমাগারের শেডগুলো অধিকাংশ ফাঁকা। সিনহা হিমাগারে কথা হয় বামনদীঘি গ্রামের কৃষক সোনা মিয়ার সঙ্গে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, তিন একর জমিতে আলু চাষ করেছেন। জমিতে তাঁর উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ২০ টাকা পড়েছে। মৌসুমের শুরুতে ১৪ টাকা কেজি হওয়ায় লোকসানের ভয়ে আলু হিমাগারে রেখেছেন। সরকার ২২ টাকা দাম বেঁধে দিলেও, সেই দামে কেউ আলু নেন না।

তারাগঞ্জের প্রামাণিকপাড়ার কৃষক সোহরাব হোসেন বলেন, ‘এক কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে ২০ টাকা, বস্তা, গাড়িভাড়া, হিমাগারভাড়াসহ ৩০ টাকা। অথচ বাজারে পাচ্ছি ১২ টাকা। হিমাগারের খরচ বাদ দিয়ে হাতে আসে ৫ টাকা। এভাবে লোকসান হলে কৃষকেরা আলু চাষ ছেড়ে তামাক চাষে ঝুঁকবেন।’

সিনহা হিমাগারের ব্যবস্থাপক দুলাল হোসেন বলেন, ‘হিমাগারের আলু সংরক্ষিত আছে১ লাখ ৫১ হাজার বস্তা। এই সময়ে গত বছর তিন ভাগের বেশি আলু বের হয়েছিল। এবার আজ পর্যন্ত মাত্র ২৮ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে। আলুর অবস্থা খুবই ভয়াবহ।’

তারাগঞ্জের এন এম হিমাগারের ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘১৫ ডিসেম্বরে মধ্যে হিমাগারের সব আলু বের হয়ে যায়। কিন্তু এবার যে পরিস্থিতি, তাতে মনে হয় না আলু সব বের হবে। ২ লাখ ৬০ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা থাকলেও এ পর্যন্ত আলু বের হয়েছে মাত্র ৪৫ হাজার বস্তা।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ধীবা রানী রায় বলেন, সরকারিভাবে রংপুরে আলু কেনা হলে কৃষকেরা উপকৃত হবেন। আগামী মৌসুমে আলুর চাষ কমবে। কৃষকেরা যাতে পরিকল্পিতভাবে আলু চাষ করেন, তা নিয়ে মাঠে কাজ করছেন, যাতে কৃষকেরা লোকসানে না পড়েন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ