রোমাঞ্চ, নাটকীয়তার পর পাকিস্তানের জয়
Published: 5th, November 2025 GMT
সহজ ম্যাচ কঠিন করে জেতা পাকিস্তানের পুরোনো অভ্যাস, রোজকার কাজ। গতকাল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ফয়সালাবাদেও এমন কাজ করলেন তারা।
জয়ের অবস্থান থেকে হঠ্যাৎ ছন্দ হারিয়ে ম্যাচ হারের শঙ্কায় পড়ে যান। এরপর তীব্র লড়াইয়ে ম্যাচটাকে নাগালে নিয়ে আসেন। আবার বিপর্যয়ে পড়েন। সবশেষে চরম নাটকীয়তা ও রোমাঞ্চ উপহার দিয়ে ম্যাচ জয়।
রোমাঞ্চ, নখ কামড়ানো এক মুহূর্তকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে পাকিস্তান। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৬৩ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে পাকিস্তান ২ বল আগে ২ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে।
অথচ একটা সময়ে ২৭ বলে মাত্র ২৩ রান দরকার ছিল তাদের। হাতে ৬ উইকেট। সেই ম্যাচ শেষ ওভারে যায় ৪ রানের সমীকরণে। হাতে ৩ উইকেট। অন্তিম মুহূর্তে আরো ১ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। শেষ পর্যন্ত ভাগ্যবিধাতা পাকিস্তানের দিকে মুখ তুলে তাকায়। তিন ম্যাচ সিরিজে তারা এখন ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
এই ম্যাচ দিয়ে ফয়সালাবাদে ১৭ বছর পর ফিরেছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এ বছর বাংলাদেশেরও এই মাঠে খেলার কথা ছিল। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের যুদ্ধের কারণে নিরাপত্তা শঙ্কায় পাকিস্তান সফর ওই মুহূর্তে বাতিল করে বাংলাদেশ।
পাকিস্তানের গতকালের জয়ের নায়ক সালমান আগা। ৭১ বলে ৬২ রান করেন তিনি। বোলিংয়ে নজর কেড়ে নেনে লেগ স্পিনার আবরার আহমেদ ও পেসার নাসিম শাহ। দুজন ৩টি করে উইকেট নেন। আবরার হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেতে পারতেন। কিন্তু রিভিউ নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যান বেঁচে যান।
ব্যাটিংয়ে নেমে ১৬ ওভারে ৯৮ রান পায় প্রোটিয়ারা। ইনিংস উদ্বোধন করেন লুহান ড্রি প্রিটোরিয়াস ও কুইন্টন ডি কিক। দুজনই পেয়েছেন ফিফটি। প্রিটোরিয়াস ৫৭ ও ডি কক ৬৩ রান করেন। এই জুটি ভাঙার পর আর বড় জুটি গড়তে পারেনি অতিথিরা। শেষ দিকে তারা ৭ উইকেট হারায় মাত্র ৭২ রানে। নাটকীয় ব্যাটিং ধসের পর নবম উইকেটে লুঙ্গি এনগিডি ও কর্বিন বশ ৩৪ রান যোগ করেন। যেখানে কর্বিন একাই করেন ৩২ রান। সব মিলয়ে ৪০ বলে ৪১ রান করেন এই অলরাউন্ডার।
জবাব দিতে নেমে ফখর ও সায়েম ৮৭ রানের জুটি গড়েন। ভালো শুরুর পর পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে হোঁচট আসবেই। ৮৭ থেকে ১০৫ রানে যেতে তাদের ৩ ব্যাটসম্যান সাজঘরে। ফখর ৪৫, সায়েম ৩৯ ও বাবর ৭ রানে আউট হন। সেখান থেকে রিজওয়ানের ৫৫ ও সালমানের ৬২ রানে জবাব দেয় পাকিস্তান। কিন্তু তারা কেউই ম্যাচ জিতিয়ে আনতে পারেননি। শেষ দিকে হোসেন তালাহের ২২ ও মোহাম্মদ নওয়াজের ৯ ও অধিনায়ক আফ্রিদির ৪ রানে মুখ রক্ষা হয় পাকিস্তানের।
এই ম্যাচ দিয়ে পাকিস্তানের নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক শাহীন শাহ আফ্রিদির পথ চলা শুরু হলো। নতুন অধিনায়ক জয়ের খাতা খুলেই শুরু করলেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার একই মাঠে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।
ঢাকা/ইয়াসিন
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন কর ন উইক ট
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।