ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিল যুবলীগ নেতাকে
Published: 5th, November 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে পুলিশের কাছ থেকে গাজী বোরহান উদ্দিন নামে এক যুবলীগ নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) উপজেলার অরুয়াইল বাজারে পুলিশ ক্যাম্পের সামনে এই ঘটনা ঘটে। গাজী বোরহান উদ্দিন অরুয়াইল যুবলীগের আহ্বায়ক পদে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা চলমান।
স্থানীয়রা জানায়, ৫ আগস্টের পর একাধিক মামলার আসামি হন সরাইল উপজেলার অরুয়াইল ইউনিয়ন যুবলীগের আহ্বায়ক গাজী বোরহান উদ্দিন। মামলার আসামি হলেও তিনি ছিলেন প্রকাশ্যেই। অবশেষে মঙ্গলবার বিকেল ৫টার দিকে বোরহানকে গ্রেপ্তার করে অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পের সদস্যরা।
গ্রেপ্তারের পর তাকে ক্যাম্পে নেওয়া হলে সেখানে জড়ো হন বোরহানের ভাই গাজী গিয়াস উদ্দিনসহ তাদের গোষ্ঠীর অন্তত দেড় থেকে দুইশ’ লোক। তাকে ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন তারা।
পরে পুলিশ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে গাজী বোরহান উদ্দিনকে নিয়ে দুটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় করে সরাইল থানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথে পুলিশের উপর হামলা করে ছিনিয়ে নেওয়া হয় যুবলীগ নেতা বোরহানকে। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
অরুয়াইল ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এনামুল হক বলেন, ‘পুলিশ গাজী বোরহানকে গ্রেপ্তার করলো, পরবর্তীতে একজন ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিকে তাদের কাছ থেকে কীভাবে নিয়ে গেল তারাই তা ভাল বলতে পারবেন। যেহেতু এরইমধ্যে অনেক লোক পুলিশ ক্যাম্পে গেছে, সে অনুযায়ী যথাযথ নিরাপত্তার মাধ্যমে তাকে নিয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল। এমনকি তার হাতে হ্যান্ডকাফও ছিল না।”
এ বিষয়ে অরুয়াইল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ উপপরিদর্শক টিপু সুলতান ফোনে বলেন, ‘‘বোরহান উদ্দিনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’’ তবে বোরহান উদ্দিন পুলিশ হেফাজতে আছে কিনা? এই প্রশ্ন শুনে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোরশেদুল আলম চৌধুরী বলেন, “তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। তার ১৪ গোষ্ঠীকে খুঁজতেছি, সে তো আর একা ছিল না। তার সাথে দুইশ’ জন লোক ছিল।”
পুলিশের কেউ এ ঘটনায় আহত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি অভিযানে বাইরে আছি, এটা এখনও বলার সময় হয়নি।”
ঢাকা/পলাশ/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।