বৃষ্টির পানিতে নিভল মহালছড়ির ভয়াবহ আগুন
Published: 5th, November 2025 GMT
খাগড়াছড়ির মহালছড়িতে বাজারে লাগা আগুনে ১৪টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করলেও পানির উৎসের সংকট থাকায় তারাও সেভাবে কিছু করতে পারেননি। এক পর্যায়ে বৃষ্টি শুরু হলে তার পানিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এরপর ফায়ার সার্ভিস ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পুরোপুরি আগুন নেভাতে স্বক্ষম হন।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাজারে আগুন লাগে।
আরো পড়ুন:
গোপালগঞ্জে আমনের ক্ষতির শঙ্কা, ধান কাটার পরামর্শ কৃষি বিভাগের
খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলে রেকর্ড বৃষ্টি, ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কা
প্রাথমিকভাবে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। তবে, পুড়ে যাওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে জুতার দোকান, খাবার হোটেল, কসমেটিকস, কাপড়, মুদি ও স্বর্ণের দোকার রয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, এক ঘণ্টার মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি কেউই। আগুন লাগার পরপরই মহালছড়িতে প্রচুর বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টির পানিতে বাজারের আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পুরোপুরি আগুন নেভাতে সক্ষম হন। এর আগে, ফায়ার সার্ভিসের দুইটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পানির উৎসের সংকটের কারণে আগুন নেভানোর কাজ সেভাবে শুরু করতে পারেনি।
মহালছড়ি বাজারের ব্যবসায়ী স্বপন চক্রবর্তী ও ইসমাইল হোসেন জানান, রাতে বাজারে আগুন লাগে। স্থানীয়রা আগুন নেভানোরে চেষ্টা করেও পারেননি। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এলেও পানির অভাবে কাজ করতে পারেননি তারা। পরে বৃষ্টির পানিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। মহালছড়িতে ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা। তাদের দাবি, ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন থাকলে ক্ষয়ক্ষতি হতো না।
খাগড়াছড়ি ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সহকারী পরিচালক মো.
তিনি আরো জানান, পরবর্তীতে মাটিরাঙা উপজেলা থেকে এক হাজার লিটার পানির একটি ট্যাংকার গাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। এরই মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে আগুন অনেকটা নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তদন্তের পর বলা যাবে।
ঢাকা/রূপায়ন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আগ ন আগ ন ন ভ আগ ন ল গ প র নন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
ভালোবাসা ও শ্রদ্ধায় ঢাবিতে মানবেন্দ্র লারমাকে স্মরণ
সাবেক আইনপ্রণেতা ও বিপ্লবী নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করা হয়েছে। সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় এক স্মরণসভায় তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।
স্মরণসভার শুরুতে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এম এন লারমার ৪২তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক রেজওয়ানা করিম স্নিগ্ধা।
মানবেন্দ্র লারমা গরিব মেহনতি মানুষের নেতা উল্লেখ করে স্মরণসভায় সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, ‘তিনি কেবল পাহাড়ি মানুষের নেতা ছিলেন না। বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা সমগ্র নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছেন। তিনি বাহাত্তরের সংবিধানে আদিবাসী, শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। তিনি সে সময় সংসদে দাড়িয়ে দৃঢ় কণ্ঠে প্রতিবাদ করেছিলেন যে তিনি একজন চাকমা, একজন চাকমা কোনো দিন বাঙালি হতে পারেন না।’
পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, ‘জুলাই সনদে আজকে আদিবাসী মানুষের কথা বলা নেই। অথচ কেবল মুখে বহুত্ববাদী, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে। বিগত সময়ের দলীয় সরকার নাহয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করেনি। কিন্তু গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময় পাহাড়ি আদিবাসীরা কমপক্ষে দুটি সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়েছেন। অন্যদিকে পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে রাজনৈতিভাবে সমাধানের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের কথা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো উচ্চারণ করেনি।’
ঐক্য ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ তারেক বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থান যে চেতনা নিয়ে শুরু হয়েছিল, আজ সেই চেতনা মৌলবাদী শক্তির কাছে লুট হয়ে গেছে। সত্তরের দশকে নতুন বাংলাদেশে মহান নেতা মানবেন্দ্র লারমা সেই স্বপ্ন দেখছিলেন, যে স্বপ্ন একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার, গরিব মেহনতি তথা নিপীড়িত পাহাড়ি আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বুনেছিলেন।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন, বাহাত্তরের সংবিধানে নিপীড়িত মানুষের অধিকারের কথা বলা হয়নি, নারী-পুরুষের বৈষম্য বিলোপ এবং মেহনতি মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা তুলে ধরা হয়নি। সে সময় শোষিত মানুষের বন্ধু মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা তাঁদের হয়ে কথা বলেছেন। তিনি সংবিধান প্রণয়নের সময় শ্রমিক, গরিব ও আদিবাসী নিপীড়িত মানুষের কথা বলেছিলেন।
সাবেক সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশের যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা অন্য জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করার মতো মানসিকতা এখনো তৈরি করতে পারেনি। ভোটের আগে মুখে বললেও তা বাস্তবে বাস্তবায়ন করে না।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফি রতন বলেন, ‘মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা জুম্ম জাতির জন্য ছাত্রজীবন থেকে অধিকারের কথা বলেছিলেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সংবিধান যখন বাঙালি বলে আদিবাসী মানুষের পরিচয় করে দিতে চেয়েছিল, সেই সময় গণপরিষদে এম এন লারমা প্রতিবাদ করেছিলেন।’
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য দেন লেখক ও সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, সাংবাদিক সাইফুর রহমান, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা ও নারীনেত্রী শিরিন হক। স্মরণসভা শেষে গান, কবিতা পাঠ ও প্রদীপ প্রজ্বালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শেষ হয়।