যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি অঙ্গরাজ্যে ৩৮ হাজার গ্যালন নিয়ে একটি কার্গো বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে অন্তত চারজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১ জন। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ১৫ মিনিটের দিকে উড্ডয়নের পরপরই এটি বিমানবন্দরের পাশের শিল্প এলাকায় গিয়ে পড়ে। সেখানে থাকা কেন্টাকি পেট্রোলিয়াম রিসাইক্লিং ও গ্রেড এ অটো পার্টস নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে আগুন ধরে যায়। আগুনের লেলিহান শিখায় আশপাশের বেশ কয়েকটি ভবনও পুড়ে যায়।

বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় এতে প্রায় ৩৮ হাজার গ্যালন (প্রায় ১ লাখ ৪৪ হাজার লিটার) জেট জ্বালানি ছিল। এই বিপুল পরিমাণ জ্বালানিই আগুনের ভয়াবহতা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কর্মকর্তারা।

ঘনবসতিপূর্ণ ওই এলাকায় বিপুল পরিমাণ জেট জ্বালানি ছড়িয়ে পড়ে, ফলে আরও বিস্ফোরণের আশঙ্কায় পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। দমকলকর্মীরা কয়েক ঘণ্টা পরও আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।
কেন্টাকির গভর্নর অ্যান্ডি বেসিয়ার বলেন, “আমরা এখন পর্যন্ত অন্তত চারজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি, তবে সংখ্যাটি বাড়তে পারে। আহত হয়েছেন অন্তত ১১ জন, যাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।” 

তিনি বলেন, “যারা ভিডিওগুলো দেখেছেন, তারা জানেন এটি কতটা ভয়াবহ ছিল। অনেক পরিবার এখন উদ্বেগে অপেক্ষা করছে। আমরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তাদের সঠিক তথ্য দিতে কাজ করছি।” 

লুইসভিল মেট্রো পুলিশ জানিয়েছে, দুর্ঘটনার পরপরই একাধিক সংস্থা ঘটনাস্থলে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে। আপাতত স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘরে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ইউপিএস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনাগ্রস্ত এমডি-১১ মডেলের কার্গো বিমানে তিনজন ক্রু সদস্য ছিলেন। তারা জীবিত আছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি।

দুর্ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, বিমানটি উড্ডয়নের সময় হঠাৎ আগুন ধরে যায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিস্ফোরিত হয়ে পড়ে যায়।

সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানতে বিস্তারিত তদন্ত চলছে, তবে এখন পর্যন্ত কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা আবহাওয়া-সংক্রান্ত কারণ নিশ্চিত করা যায়নি।

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর দ র ঘটন র প ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মহাকাশে গিয়েছিল লাইকা

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বরকে মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন এদিন তাদের দ্বিতীয় মহাকাশযান ‘স্পুটনিক ২’ উৎক্ষেপণ করে। সেই মহাকাশযানে করে লাইকা নামের একটি কুকুর মহাকাশ ভ্রমণ করেছিল। লাইকা ছিল মহাকাশে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম প্রাণী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ১৯৫০ দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মহাকাশে শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের প্রতিযোগিতা চলছিল। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর স্পুটনিক ১ উৎক্ষেপণ করে বিশ্বকে চমকে দেয়। এর পরপরই স্পুটনিক ২ দ্রুত তৈরি করে দেশটি। এই মহাকাশযানের মাধ্যমে মানুষের আগে প্রাণীকে মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশে বাঁচানো সম্ভব কি না, তা পরীক্ষা করা হয়। সেই পরীক্ষা ছিল ভবিষ্যতে মানুষের মহাকাশযাত্রার জন্য অপরিহার্য।

লাইকা ছিল মস্কোর রাজপথ থেকে ধরে আনা একটি মিশ্র জাতের স্ত্রী কুকুর। মূলত তার শান্ত স্বভাব, ছোট আকার ও প্রশিক্ষণে টিকে থাকার কারণে তাকে বেছে নেওয়া হয়। লাইকাকে একটি বিশেষ চেম্বারে বসে থাকার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল। হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাস পরিমাপের জন্য তার শরীরে যুক্ত ছিল একাধিক সেন্সর। সেই সময়ে মহাকাশযানকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার কোনো প্রযুক্তি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে ছিল না। আর তাই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা প্রথম প্রাণী লাইকা মহাকাশে থাকা অবস্থাতেই মারা যায়।

১৯৫৭ সালের ৩ নভেম্বর লাইকাকে বহন করা স্পুটনিক ২ মহাকাশযান কাজাখস্তান থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। বিজ্ঞানীরা প্রথমে ঘোষণা করেছিলেন, লাইকা কয়েক দিন কক্ষপথে বেঁচে ছিল। কয়েক দশক পরে ২০০২ সালে, রাশিয়ার বিজ্ঞানী দিমিত্রি মালাশেনকভ প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করেন। উৎক্ষেপণের সময় তীব্র শব্দ এবং কম্পনের কারণে লাইকা আতঙ্কিত হয়ে যায়। মহাকাশযান পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানোর পরপরই তাপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে কেবিনের তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে যায়। অতিরিক্ত চাপ ও তাপে উৎক্ষেপণের মাত্র পাঁচ থেকে সাত ঘণ্টা পরেই লাইকা মারা যায়।

লাইকার মহাকাশযাত্রা একাধিক কারণে মানব ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। স্পুটনিক ২ উৎক্ষেপণ সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করলেও, লাইকার মৃত্যু বিশ্বের দরবারে দেশটিকে সমালোচনার মুখে ফেলে দিয়েছিল।

সূত্র: সায়েন্স ২০ ডটকম

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আজ মহাকাশে গিয়েছিল লাইকা