ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে তিন নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের বিপুল জয়
Published: 5th, November 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকালে দেশটিতে অনুষ্ঠিত প্রথম বড় তিনটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা বিপুল জয় পেয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন হয়। ‘বিশ্বের রাজধানী’ হিসেবে পরিচিত এই শহরের মেয়র নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি।
মামদানি নিউইয়র্ক শহরের ১১১ তম মেয়র নির্বাচিত হলেন। তিনি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর, স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন। এই জয়ের মধ্য দিয়ে মামদানি নিউইয়র্ক শহরের প্রথম মুসলিম মেয়র নির্বাচিত হলেন।
মামদানি নিউইয়র্ক শহরের প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত ও আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী মেয়র। এক শতাব্দীর মধ্যে তিনি নিউইয়র্ক শহরের সর্বকনিষ্ঠ মেয়র।
নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা ট্রাম্প কোনোভাবেই চাননি, মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হোন। তিনি আগেই হুমকি দিয়েছেন, মামদানির মতো লোক নির্বাচিত হলে তিনি নিউইয়র্ক শহরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন। মামদানি অবৈধ অভিবাসী বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। এ নিয়েও তিনি হুমকি দিয়েছেন।
গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়ায় গভর্নর নির্বাচন হয়। এই দুই নির্বাচনেও ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা জয়ী হচ্ছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন এই আভাস দিয়েছে।
নিউজার্সিতে শেরিলসিএনএনের আভাস অনুযায়ী, নিউজার্সির গভর্নর পদে জয়ী হচ্ছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী মাইকি শেরিল।
শেরিল নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যের ইতিহাসে প্রথম নারী ডেমোক্র্যাট গভর্নর হতে যাচ্ছেন। তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী জ্যাক সিয়াতারেল্লিকে পরাজিত করতে যাচ্ছেন।
সিয়াতারেল্লি অঙ্গরাজ্যের সাবেক আইনপ্রণেতা। তিনি ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তিনি তৃতীয়বারের মতো গভর্নর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেন।
ভার্জিনিয়ায় স্প্যানবার্গারসিএনএনের আভাস অনুযায়ী, ভার্জিনিয়ায় গভর্নর পদে নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী এবিগেইল স্প্যানবার্গার জয়ী হচ্ছেন।
স্প্যানবার্গার সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য। তিনি সিআইএর সাবেক কর্মকর্তা। স্প্যানবার্গার হতে যাচ্ছেন ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের প্রথম নারী গভর্নর।
রিপাবলিকান লেফটেন্যান্ট গভর্নর উইনসাম আর্ল-সিয়ার্সকে পরাজিত করছেন স্প্যানবার্গার। তাঁর নির্বাচনী প্রচারের কেন্দ্রে ছিল মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় সহনীয় রাখা। ফেডারেল চাকরিতে কাটছাঁটসহ শাটডাউনের প্রভাব নিয়ে অঙ্গরাজ্যের মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করা।
স্প্যানবার্গার তাঁর প্রচারে প্রায়ই উল্লেখ করেছেন যে, আর্ল-সিয়ার্স রিপাবলিকান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ, তাঁর অনুসারী। তবে ট্রাম্প নিজে এই নির্বাচনে আর্ল-সিয়ার্সকে সমর্থন জানাননি।
নিউজার্সি ও ভার্জিনিয়া—উভয় অঙ্গরাজ্য ডেমোক্রেটিক রাজনীতির সমর্থক, বা ‘ব্লু স্টেট’। তবে গত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এই দুই অঙ্গরাজ্যেই ট্রাম্প হারেন। কিন্তু ২০১৬ সালের তুলনায় ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ভালো ফল করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন উইয়র ক শহর র স প য নব র গ র র প বল ক ন ম মদ ন প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচনে ভোট গ্রহণ চলছে, ভোট দিয়েছেন মামদানি-কুমো
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিচ্ছেন শহরটির বাসিন্দারা। মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের দিন জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জোহরান মামদানি। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক শহর ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে বলে মন্তব্য করেন তিনি। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন পাওয়ার পর স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ডু কুমোও জয়ের আশা ছাড়েননি।
মঙ্গলবার নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয় স্থানীয় সময় সকাল ছয়টায়। শেষ হওয়ার কথা রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় বুধবার সকাল ৮টা)। এর পরপরই শুরু হওয়ার কথা গণনা। যদিও নিউইয়র্ক শহরের ৪৭ লাখ ভোটারের প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার আগাম ভোট দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে এটিই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা।
মঙ্গলবার ভোট গ্রহণের দিন বিভিন্ন কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এদিন শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দেন মামদানি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্ত্রী রামা দুয়াজি। ভোট দেওয়ার পর সাংবাদিকদের মামদানি বলেন, ‘শহরে ইতিহাস গড়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি আমরা। অতীতের রাজনীতি ত্যাগ করার দ্বারপ্রান্তে রয়েছি।’
এবারের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন মামদানি। তরুণসহ সব বয়সী ভোটারদের মধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন। তার প্রতিফলন দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে। ম্যানহাটান এলাকার একটি কেন্দ্রে মামদানিকে ভোট দেন গ্লোরি মিসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, শিক্ষা, আবাসন ও গণপরিবহন নিয়ে মামদানির পরিকল্পনাগুলো চমৎকার। সব পরিকল্পনাতেই মানবিকতা রয়েছে।
এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ভোট দিতে যান স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে। ভোটদানের পর সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘ভালোই অনুভব হচ্ছে। মনে হচ্ছে পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে রয়েছে। জীবনে আমি বহুবার ভোট দিয়েছি। তবে এই প্রথম আমি কোনো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করার সময় সেখানে থাকা ভোটাররা আমাকে বাহবা দিয়েছে। এটি ভালো সংকেত। ভোট পড়ার হারও ভালো সংকেত।’
শেষ জরিপে কমেছে ব্যবধানমেয়র নির্বাচন ঘিরে জনমত জরিপগুলোয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে বরাবরই বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন মামদানি। গত বৃহস্পতিবারের এমারসন কলেজ/পিআইএক্স ১১/দ্য হিলের জরিপ অনুযায়ী, মামদানি তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কুমোর চেয়ে প্রায় ২৫ পয়েন্ট এগিয়ে ছিলেন। ওই জরিপে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়ার চেয়ে মামদানি এগিয়ে ছিলেন প্রায় ২৯ পয়েন্টে।
তবে সোমবার গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের জরিপে দেখা গেছে, মাত্র চার দিনে কুমো ও মামদানির জনসমর্থনের ব্যবধান বেশ কমেছে। ওই জরিপ অনুযায়ী, মামদানির পক্ষে জনমত ৪৬ দশমিক ১ শতাংশ। আর কুমোকে সমর্থন জানিয়েছেন ৩১ দশমিক ৮ শতাংশ ভোটার। অর্থাৎ কুমোর চেয়ে মামদানি এগিয়ে আছেন ১৪ দশমিক ৩ পয়েন্টে। অপর দিকে কার্টিস স্লিওয়া পেয়েছেন ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ জনসমর্থন। রিপাবলিকান এই প্রার্থীর চেয়ে মামদানি এগিয়ে আছেন ২৯ দশমিক ৮ পয়েন্টে।
কুমোকে সমর্থন ট্রাম্পেরএবার মেয়র নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টি কার্টিস স্লিওয়ার জয়ের আশা না দেখতে পেয়ে শেষ পর্যন্ত কুমোকে আনুষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এমন সময় তিনি এ সমর্থন দিলেন, যখন রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের জরিপে কুমো ও মামদানির জনসমর্থনের ব্যবধান কমতে দেখা গেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য একটাই—মামদানি যেন নিউইয়র্কের মেয়র পদে বসতে না পারেন।
নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে সোমবার ট্রাম্প লিখেছেন, ‘আপনারা অ্যান্ড্রু কুমোকে ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করেন বা না করেন, সত্যি বলতে গেলে আপনাদের কাছে বিকল্প কোনো পথ নেই। আপনাদের তাঁকে ভোট দিতে হবে।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরও লেখেন, কার্টিস স্লিওয়াকে ভোট দিলে আসলে মামদানিকেই ভোট দেওয়া হবে।
এর আগেও নানা বাক্যবাণে মামদানিকে নাজেহাল করার কম চেষ্টা করেননি ট্রাম্প। মামদানি জয়ী হলে নিউইয়র্কের কেন্দ্রীয় তহবিল আটকে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। আর রোববার একটি টেলিভিশন চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে তিনি ‘খারাপ ডেমোক্র্যাট’কে (কুমো) বেছে নেবেন। তবে ‘কমিউনিস্টকে’ (মামদানি) সমর্থন দেবেন না।
কুমো ডেমোক্রেটিক পার্টিরই একজন নেতা। মেয়র পদে দলের প্রার্থী বাছাইপর্বে মামদানির কাছে পরাজিত হয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়ান তিনি। ট্রাম্পের সমর্থন কুমোর জন্য আশার আলো হলেও তিনি বলেছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন না, বরং মামদানির বিরোধিতা করছেন। আর এ নিয়ে মামদানির ভাষ্য, ট্রাম্পকে ভয় পান না তিনি।