দুই ছেলের পর এবার মেয়েকেও উত্তরাধিকার হিসেবে পারিবারিক ব্যবসায় আনছেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি।

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শবনম শেহনাজ চৌধুরী মিলে তাঁদের একমাত্র মেয়ে সানজানা শেহনাজ চৌধুরীকে দুটি পারিবারিক কোম্পানির প্রায় ৬২ লাখ শেয়ার উপহার দিচ্ছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো হচ্ছে আরগন ডেনিমস ও ইভিন্স টেক্সটাইল। দুটিই বস্ত্র খাতের কোম্পানি।

কোম্পানি দুটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় উদ্যোক্তাদের শেয়ার উপহার দেওয়ার তথ্য প্রকাশের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, আরগন ডেনিমসের চেয়ারম্যান শবনম শেহনাজ চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার উল আলম চৌধুরী তাঁদের কন্যা সানজানা শেহনাজ চৌধুরীকে কোম্পানিটির প্রায় সোয়া ২৫ লাখ শেয়ার উপহার দিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারের বাজারমূল্য অনুযায়ী এসব শেয়ারের দাম ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। আনোয়ার উল আলম ও শবনম শেহনাজ দম্পতি ইভেন্স টেক্সটাইলের প্রায় পৌনে ৩৭ লাখ শেয়ার মেয়েকে উপহার দিচ্ছেন। গতকালের বাজারমূল্য অনুযায়ী এই শেয়ারের দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেয়েকে কোম্পানি দুটির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করতেই মূলত বাবা–মা এই শেয়ার উপহার দিচ্ছেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে কেউ পরিচালক হতে পারেন না। ন্যূনতম শেয়ারধারণের এই শর্ত পূরণ করে মেয়েকে পরিচালক পদে বসাতেই মেয়েকে এসব শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যবসা বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে সদ্য দেশে ফিরেছে আমাদের একমাত্র মেয়ে। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তার এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানির ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সে জন্য তাকে দুই কোম্পানির পর্ষদে যুক্ত করার জন্য বিএসইসির শর্ত অনুযায়ী ন্যূনতম শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে, যাতে পর্ষদে যুক্ত হতে তার কোনো বাধা না থাকে।’

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী আরও জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে আগেই পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। এখন উত্তরাধিকার হিসেবে মেয়েকে যুক্ত করা হচ্ছে।

এদিকে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়ে এরই মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন আনোয়ার উল আলম চৌধুরীর দুই ছেলে শাহ আদিব চৌধুরী ও শাহ রায়ীদ চৌধুরী। আরগন ডেনিমস ও ইভিন্স টেক্সটাইলের ব্যবসার পাশাপাশি দুই ভাই মিলে পোশাকের স্থানীয় ব্র্যান্ড ‘নোয়ার’ গড়ে তুলেছেন। এরই মধ্যে নোয়ার স্থানীয় পোশাকের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ছাড়া জাপানি ব্র্যান্ড মিনিসোকে বাংলাদেশে এনেছেন এই দুই ভাই। তাঁরাই এখন বাংলাদেশে মিনিসো ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, পারিবারিক ব্যবসার বাইরে দুই ছেলে মিলে একটি দেশীয় ও একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের ব্যবসা পরিচালনা করছে। এখন পারিবারিক ব্যবসায় মেয়েও যুক্ত হচ্ছে। তিন সন্তান উত্তরাধিকার হিসেবে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরবে। নতুন প্রজন্মই ব্যবসার নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এদিকে আরগন ডেনিমস ২০১৩ সালে ও ইভিন্স টেক্সটাইল ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে আরগন ডেনিমস ‘এ’ ও ইভিন্স টেক্সটাইল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত। ঢাকার বাজারে গতকাল দুই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আরগন ডেনিমসের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা বা আড়াই শতাংশ বেড়ে ১৬ টাকা ৪০ পয়সায় ও ইভিন্স টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম ৫০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ য় র উপহ র দ চ ছ ন প র ব র ক ব যবস য় শ হন জ চ ধ র ব যবস র অন য য় গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

তানোরে চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকা মাটি খুঁড়ে উদ্ধার

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি হয়ে যাওয়া প্রায় ১১ লাখ টাকা। এসব টাকা চুরির অভিযোগে আরজেদ আলী ওরফে কুরহান (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার জোড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কুরহানের বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই কুরহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। টাকা উদ্ধারের পর বুধবার বিকেলে কুরহানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, রাজশাহী নগরের শিরোইল মঠপুকুর এলাকার বাসিন্দা মাবিয়া খাতুন জমি বিক্রি করতে গত সোমবার তানোর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সঙ্গে ছিল জমি বিক্রির ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অফিসে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মাবিয়া খাতুন তার টাকার ব্যাগটি চেয়ারের পাশে রাখেন। এ সুযোগে কৌশলে ব্যাগটি নিয়ে সটকে পড়ে কুরহান।

মোবাইল ফোনে কথোপকথন শেষে ব্যাগটি না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন মাবিয়া খাতুন। এতে পুরো অফিসজুড়ে হইচই পড়ে যায়। পরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। ঘটনার দিনই মাবিয়া খাতুন তানোর থানায় অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে পুলিশ প্রযুক্তির ব্যবহার করে চোর শনাক্ত করে। মঙ্গলবার রাতেই কুরহানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশকে কুরহান জানিয়েছেন, ব্যাগটি চুরি করে কাউকে কিছু না বলে তিনি বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে তা পুঁতে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টাকা খরচের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে, এত দ্রুত ধরা পড়বেন, সেটা ভাবেননি।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, কুরহান চুরির কথা স্বীকার করলে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পেছনের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় ব্যাগভর্তি টাকা। আদালতের অনুমতি নিয়ে এই টাকা মালিক মাবিয়া খাতুনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ