সিদ্ধিরগঞ্জে সরকারি জমি নিয়ে দিনভর উত্তেজনা
Published: 19th, April 2025 GMT
রেলওয়ের জমি দখলের অভিযোগ নিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে দু’পক্ষের মধ্যে দিনভর ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে পাঠানটুলী এলাকায় জমি দখলের বিরুদ্ধে মানববন্ধনের পর প্রথম দফায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে বিকেল ৪টার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান নেয়। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। সেনাবাহিনী সাড়ে ৫টার দিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, পাঠানটুলী এলাকার নিট কনসার্ন গ্রুপের ভেতরের জমি রেলওয়ের কাছ থেকে ইজারা নেওয়া। একই এলাকার বাসিন্দা সাব্বির ভূঁইয়া প্রতিষ্ঠানের ভেতর ৪ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করেন। তাঁর বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় একটি হত্যার ঘটনায় মামলাও আছে। ওই জমি দখলমুক্ত করার জন্য সম্প্রতি তিনি ফতুল্লার হাজীগঞ্জের বাসিন্দা ফাহিম খন্দকার মো.
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শনিবার সকালে অনিকের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ছাত্র-জনতার ব্যানারে নিট কনসার্ন গ্রুপকে জমি দখলকারী আখ্যা দিয়ে মানববন্ধন করেন। তারা ওই প্রতিষ্ঠানের দেওয়া টিনের বেড়া ভাঙচুর করেন। তখন নিট কনসার্নের শ্রমিকরা তাদের ধাওয়া দেয়। এ সময় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অর্ধশতাধিক লোক বৈষম্যবিরোধী ছাত্র পরিচয় দিয়ে নিট কনসার্ন গ্রুপের সামনে জড়ো হন। এ সময় এই গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকের একাংশ বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হন। তারা ভেঙে ফেলা টিনের বেড়াটি আবার লাগিয়ে ফেলে। এ সময় ছাত্রনেতা পরিচয় দেওয়া লোকজন শ্রমিকদের প্রতিহত করতে পুলিশের কাছে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, পুলিশ তাদের কথা না শোনায় বিক্ষোভকারীরা জেলা সহকারী পুলিশ সুপার হাসিনুজ্জামান ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মোহাম্মদ শাহিনূর আলমের সঙ্গে অসদাচরণ শুরু করেন।
সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে সেনাবাহিনীর একটি দল। তারা বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে সেখানে অবস্থান নিলে দুই পক্ষ সরে যায়। ফাহিম খন্দকার মো. অনিক বলেন, ‘আমি সাব্বির ভূঁইয়ার কাছ থেকে এই জমি পাওয়ারনামা দলিল করে নিয়েছি। জমির দখল ছেড়ে দিতে বলায় নিট কনসার্ন গ্রুপের লোকজন আমাদের ওপর হামলা করে।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জ মহানগরের আহ্বায়ক মাহফুজ খানের ভাষ্য, কর্মসূচিতে জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান, সদস্য সচিব জাভেদ আলম, মহানগরের সদস্য সচিব হৃদয় ভূঁইয়ার নেতৃত্বে অন্য নেতারা ছিলেন। তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। কিন্তু নিট কনসার্ন গ্রুপের ভাড়াটে গুণ্ডারা হামলা করেছে। এতে অনিকসহ চার-পাঁচজন আহত হয়েছেন। তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোববার (আজ) এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জে সভা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।
হামলার অভিযোগ অস্বীকার করে নিট কনসার্স গ্রুপের পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা বলেন, ‘এটি রেলওয়ের সরকারি জমি। জমিটি আমরা সরকারের কাছ থেকে লিজ নিয়েছি। বছরে ৩৭ লাখ ১৩ হাজার ৮০৮ টাকা কর দেই। ছাত্র-জনতার ব্যানারে কিছু লোক এসে জমি দখলের জন্য আমাদের দেওয়া বেড়া ভেঙে ফেলে। আমাদের এখানে প্রায় ২৬ হাজার শ্রমিক রয়েছে। যদি আমরা হামলা করতাম, তাদের অস্তিত্ব থাকত না।’
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি শাহিনূর আলম বলেন, সরকারি জমি নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছিল। তাদের সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে।
ওসি শাহিনূর আলম ও সহকারী পুলিশ সুপার হাসিনুজ্জামান অসদাচরণের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। হাসিনুজ্জামান বলেন, ‘আমরা দুই পক্ষকে শান্ত করেছি। পরে বিষয়টি দেখার দায়িত্ব নেয় সেনাবাহিনী।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ট কনস র ন গ র প র স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র আলম এ সময় সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।