আইনজীবীকে কুপিয়ে ৫ মিনিটেই টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালাল ডাকাত দল
Published: 24th, April 2025 GMT
নাটোরের লালপুর উপজেলায় সাধন কুমার দাস (৪২) নামের এক আইনজীবীর বাসায় ডাকাতি হয়েছে। ডাকাত দলের দায়ের কোপে ওই আইনজীবীসহ একই পরিবারের তিন সদস্য আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত ১২টার পর লালপুর সদর ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সাধন কুমার দাস নাটোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য ও মাদবপুর গ্রামের বাসিন্দা। আহত অবস্থায় তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ভাতিজা রিপন কুমার দাস (৩২) ও ভাতিজার স্ত্রী সুমি রানী (২৫) বাধা দিতে গিয়ে ডাকাত দলের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হয়েছেন। পরিবারটির দাবি, ডাকাতেরা বাড়ি থেকে তিন লাখ টাকাসহ স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাত ১২টার দিকে ৮-১০ জন ডাকাত রাম দা, চায়নিজ কুড়াল ও হাঁসুয়া নিয়ে বাড়ির পেছনের ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। প্রথমে তাঁরা সাধনের হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে ফেলে। পরে টাকা ও স্বর্ণালংকার দিতে রাজি না হলে তাঁকে কুপিয়ে জখম করা হয়। এ সময় তাঁর ভাতিজা রিপন ও ভাতিজার স্ত্রী সুমি বাধা দিতে গেলে তাঁদেরও কুপিয়ে জখম করে ডাকাতেরা। ৩ লাখ টাকা ও ১০ ভরি স্বর্ণালংকার নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায় তারা। চিৎকার শুনে প্রতিবেশীরা এগিয়ে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাধনকে গতকাল রাতেই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন তিনি।
আহত রিপন কুমার বলেন, অসাবধানতাবশত তাঁর কাকা সাধন শয়নকক্ষের দরজা খুলে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। ডাকাতেরা পেছনের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে প্রথমেই তাঁর ঘরে ঢুকে তাঁকে বেঁধে ফেলে। পরে তাঁকে কুপিয়ে সব টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যায়। ডাকাতেরা মাত্র পাঁচ মিনিটে এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযোগ পেলে মামলা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন লালপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোমিনুজ্জামান। তিনি জানান, খবর পেয়ে রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অপরাধীদের ধরতে মাঠে কাজ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র আইনজ ব
এছাড়াও পড়ুন:
এনায়েত করিম ও গোলাম মোস্তফা পাঁচ দিন রিমান্ডে
রাজধানীর রমনা থানায় করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম ও এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট সারাহ ফারজানা হক আজ বুধবার এ আদেশ দেন।
প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকার মহানগর দায়রা জজ আদালতের প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ওমর ফারুক ফারুকী।
পিপি ওমর ফারুক ফারুকী প্রথম আলোকে বলেন, সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত এনায়েত করিম চৌধুরী ও এস এম গোলাম মোস্তফাকে আদালতে হাজির করে সাত দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার আবেদন করে পুলিশ। আসামিপক্ষ থেকে জামিনের আবেদন করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত মাসুদ ও মোস্তফাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে এনায়েত করিম ওরফে মাসুদ করিমকে গত সোমবার দুদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর প্রতিনিধি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। বাস্তবে তিনি র-এর (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা) এজেন্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার মিশন নিয়ে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। বর্তমান সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত। তাঁর দুটি মুঠোফোন জব্দ করা হয়েছে। সেটির ফরেনসিক পরীক্ষা করা হলে তাঁর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে আরও অনেক নতুন তথ্য জানা যাবে। এনায়েত করিম চৌধুরী ওরফে মাসুদ করিমসহ আর কারা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত, সেটি জানার জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
অপরদিকে এনায়েত করিম চৌধুরীর পক্ষে তাঁর আইনজীবীরা আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনি ৬ সেপ্টেম্বর দেশে এসেছেন, তাঁর আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার কথা ১৪ সেপ্টেম্বর। তিনি বাংলাদেশে এসে গুলশানে অবস্থান করছিলেন।
এনায়েত করিম চৌধুরীর আইনজীবী ফারহান এমডি আরাফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর মক্কেল কোনোভাবেই জড়িত নন। তিনি একজন মার্কিন নাগরিক। সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে তিনি কোনোভাবে যুক্ত নন।
এর আগে গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরীকে (৫৫) সন্দেহভাজন হিসেবে আটকের পর ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, গত শনিবার সকালে রাজধানীর মিন্টোরোড থেকে এনায়েত করিম চৌধুরীকে আটক করা হয়। তাঁর কাছ থেকে জব্দ করা পাসপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিনি মার্কিন নাগরিক।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র প্রথম আলোকে জানিয়েছে, এনায়েত করিম নিজেকে মাসুদ করিম নামে পরিচয় দেন। তিনি নিজেকে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের প্রধান বলে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এই পরিচয়ে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করার স্বপ্ন দেখান। ২০১৮ সালের ভোটের আগেও তিনি একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে দেশের বাইরে বৈঠক করেন।
পুলিশ বলছে, গত শনিবার এনায়েত করিম চৌধুরী প্রাডো গাড়িতে করে মিন্টোরোড এলাকায় সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরা করছিলেন। গাড়ি থামিয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে ওই এলাকায় ঘোরাঘুরি করার বিষয়ে সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে তাঁকে আটক করে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়। আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পাশাপাশি সোমবার রিমান্ড শুনানির দিন ধার্য করেন।
সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম বলেছেন, বর্তমান সরকার পরিবর্তন করে নতুন জাতীয় সরকার গঠনে কাজ করতে তিনি বাংলাদেশে এসেছেন। তাঁর দাবি, তিনি বিশেষ একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার খুব নাজুক অবস্থায় আছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গেও এই সরকারের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এই সুযোগে বর্তমান সরকারকে পরিবর্তন করতে বাংলাদেশে এসেছেন। সরকারি উচ্চ ও নীতিনির্ধারক পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বলে জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী নেতা ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন।