আওয়ামী লীগের মদদপুষ্টরা ৭ খুনের মামলাকে ভিন্ন খেতে প্রবাহিত করে : সাখাওয়াত
Published: 27th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন হত্যা একটি কলঙ্কিত অধ্যায়। যখন নারায়ণগঞ্জে এই ঘটনাটি ঘটেছিল তখন গডফাদারদের রাজত্ব ছিল। সেই সময় নারায়ণগঞ্জে আইনের কোন শাসন ছিল না।
সেদিন প্রকাশ্য দিবালোকে তাঁতকালীন সাংসদ গডফাদার শামীম ওসমান ও তার দোসর নূর হোসেন বাংলাদেশের একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীকে টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে আইনজীবী চন্দন সরকার ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামসহ ৭জনকে হাজার হাজার মানুষের সামনে তাদেরকে অপহরণ করেছে।
সেই সময় আমি নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলাম যখন আমি শুনেছি তখনই আমি আইনজীবীদের নিয়ে তৎকালীন এসপি নুরুল ইসলামের অফিস ঘেরাও করে তাদেরকে উদ্ধারের জন্য আমরা আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম এবং তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলাম।
আমরা র্যাব অফিসে যোগাযোগ করেছিলাম, থানায় যোগাযোগ করেছিলাম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যোগাযোগ করেছিলাম। আমরা ফ্যাসিস শেখ হাসিনার মন্ত্রিপরিষদের সাথে যোগাযোগ করেছিলাম। সে সময় তারা উল্টো আমাদেরকে দোষারোপ করেছিল যে আমরা নাকি সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছি। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম এই সাতটি তাজা মানুষকে জীবন্ত উদ্ধার করার জন্য।
কিন্তু এর তিনদিন পর আমরা কি দেখলাম ওই শীতলক্ষা নদীতে এদের লাশ ভেসে উঠলো। তাদের প্রত্যেকটির পিঠের মধ্যে ২৪টি করে ইট বাধা ছিল। তাদের লাশের বিব্রত চিত্র দেখে শুধু নারায়ণগঞ্জ না সারা বিশ্বের মানুষ কেঁদেছিল এবং শোকাহত হয়েছিল।
সেদিন সারা বাংলাদেশসহ নারায়ণগঞ্জের মানুষ ও আইনজীবীরা প্রতিবাদে রাজপথে নেমেছিল। নারায়ণগঞ্জের আইনজীবীরা টানা ৫৮ দিন আদালত বর্জন করেছিল। তারপর আওয়ামী সরকার মামলাটিকে অন্য ক্ষেত্রে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেছিল।
আলোচিত সাত খুনের মামলা রায় অবিলম্বে কার্যকরের দাবিতে মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার (২৭ এপ্রিল) সকালে নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় আইনজীবী সমাজ, নিহতের পরিবার ও নারায়ণগঞ্জবাসীর উদ্যোগে এ মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।
এ সময় তিনি আরও বলেন, আমি নিজে বাদী হয়ে ও এডভোকেট চন্দন সরকারের জামাতা বাদী হয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটি রিট পিডিকশন দায়ের করি। সেই রিটপটিশন আমাদের পক্ষে আসে এরপর আসামিদেরকে একে একে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আদালতে তারা তাদের দোষ স্বীকার করে তাদেরকে কিভাবে গুম ও খুন করা হয়েছিল।
এই নারায়ণগঞ্জের আদালতে সেদিন আমরা সুবিচার পেয়েছিলাম। এরপর তারা উচ্চ আদালতে আপিল করেন। সেই আপিলে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখে এবং ১১জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এবং অন্যান্যদেরকে বিভিন্ন কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিল।
তিনি বলেন, আপনারা জানেন এ আসামিরা অন্তত প্রভাবশালী। ওই তারেক সাইদ হলো মোফাজ্জল হোসেন মায়ার মেয়ের জামাতা। এবং অন্য অন্যরা আওয়ামী লীগের মদদপুষ্ট ছিল। তারা উচ্চ আদালতে মামলাকে ভিন্ন খেতে প্রবাহিত করে ।
আজকে ৫-৬ বছর হয়ে গেল এই মামলার এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হচ্ছে না। আপিল অ্যাপিলেশনে সে মামলাটি দীর্ঘস্থায়ী করা হচ্ছে। আমরা বলতে চাই ৫ই আগস্ট এর মাধ্যমে ওই ফ্যাসিদের পতন হয়েছে। ছাত্র- জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে যে অন্তবর্তী সরকার গঠন হয়েছে সেই সরকারের প্রতি আমাদের অনুরোধ অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আপিল অ্যাপিলেশন ডিভিশনের মাধ্যমে আপনারা মামলাটিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করুন।
আগামী ১৫ দিনের মধ্যে শুনানীর মাধ্যমে এ রায় কার্যকরের ব্যবস্থা করবেন। এই কার্যকরের মাধ্যমে নিহতদের পরিবারদের যে দাবি তা পূর্ণ করবেন। এই ঘটনার যদি বিচার হয় তাহলে এই ধরনের ঘটনা বাংলাদেশে আর পুনরাবৃত্তি হবে না। নারায়ণগঞ্জের ত্বকীসহ সকল হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
মানবন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড.
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ ৭ জনকে অপহরণ করা হয়। ঘটনার তিনদিন পর শীতলক্ষ্যা নদীতে তাদের লাশ ভেসে ওঠে। সাতজনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় নজরুল ইসলামের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বিউটি ও আইনজীবী চন্দন সরকারের জামাতা বিজয় কুমার পাল দুটি মামলা দায়ের করেন।
হত্যাকাণ্ডের ১১ মাস পর ২০১৫ সালের ৮ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী সংস্থা নারায়ণগঞ্জ জেলা ডিবি পুলিশ দুটি মামলার অভিন্ন চার্জশিট আদালতে দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৬ জানুয়ারি চার্জশিটভুক্ত আসামি নাসিক ৪ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি নুর হোসেন, র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মাদ, সাবেক কোম্পানি কমান্ডার মেজর আরিফ হোসেন ও লে. কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ৩৫ জনকে দণ্ড প্রদান করেন নারায়ণগঞ্জের একটি আদালত। এর মধ্যে ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৯ জনের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
উচ্চ আদালতে ২৬ জনের মধ্যে ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে ১১ জনের মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। বাকী ৯ জনকে দেওয়া কারাদণ্ডের রায় উচ্চ আদালত বহাল রাখেন। মামলাটি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন বলে জানা গেছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ আওয় ম ল গ আইনজ ব য গ য গ কর ছ ল ম ন র য়ণগঞ জ জ ল ন র য়ণগঞ জ র নজর ল ইসল ম র ল ইসল ম সরক র র আইনজ ব আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে এখনো আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বীরদর্পে তাদের ব্যবসা পরিচালনা ও দাপট দেখিয়ে যাচ্ছে। এরা ভুমিদস্যুতা, চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্য থেকে শুরু করে স্থানীয় এলাকায় বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে আসছে বলে এমনটাই অভিযোগ উঠে এসেছে।
অনেকের ধারনা গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র জনতার উপর হামলা করা অবৈধ অস্ত্রগুলো এখনো এ আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সুরক্ষিত রয়েছে।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে তল্লা, হাজীগঞ্জ, পাঠানটুলী এলাকায় ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীর এ সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজি চলছে পূর্ণোদ্যমে। বুক ফুলিয়ে তার সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে এখনো।
এ সূত্র ধরে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি খালিদ মনসুরের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, গুপ্তি মেরে থাকা বা কারো ছত্রছায়া থাকা এ ধরনের আওয়ামী সন্ত্রাসীদের প্রশাসনের কাছেও তথ্য রয়েছে। এই পলাতক আসামিদের গ্রেফতারে বিভিন্ন স্থানে যৌথবাহিনীর অভিযান চলমান। ক্রমান্বয়ে সব জায়গায় অভিযান চালানো হবে।
গোপন সূত্রে জানা যায়, আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার হাজীগঞ্জের মাসুম প্রকাশ্যে এখনো বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং এলাকাবাসীদের জিম্মি করে তার নেট ব্যবসা পরিচালনা করে চলছে। নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের হিংস্রতার কথা সকলেরই কমবেশি জানা।
প্রায় ১৭ বছর নারায়ণগঞ্জটিকে দখল করে রেখেছিল তারা। তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা তো দূরের কথা, চিন্তা করলেও হতে হতো হামলা এবং মামলার শিকার।
নারায়ণগঞ্জ তথা প্রতিটা পাড়া মহল্লাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এক একটা ক্যাডার গ্যাং তৈরি করে রেখেছিলো আজমেরী উসমান। এই বাহিনী গুলি ভাইয়াজান ও আম্মাজান পরিচয় দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরজুড়ে দাবরিয়ে বেড়াতো।
তার নির্দেশনায় চলতো ওই বিশাল বাহিনীর বহর। বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে দেওয়া হয়েছিল একটি করে ইজিবাইক এবং বাইকের মাথায় স্টিকার ছিল আজমির ওসমান ফাউন্ডেশন।
এ গ্রুপের সদস্যরা জবরদখল ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ এমন কোন অপকর্ম ছিল না যা তাদের দাঁড়া অসম্ভব ছিলো । তাদের দেখলে সাধারণ জনতা থাকতো আতঙ্কে।
কারণ তাদের সাথে সামান্য কিছু ঘটলেই চলে আসতো বিশাল বিশাল হুন্ডা বাহিনী । তাদের কথার অবাধ্য হলেই করা হতো সাধারণ মানুষকে নাজেহাল, শারীরিক টর্চা।
তবে হাজিগঞ্জ, পাঠানটুলি, তল্লা, এনায়েত নগর এই অঞ্চলগুলিতে একটি বাহিনীর নেতৃত্ব স্থানে ছিলেন হাজীগঞ্জ এলাকার মাসুম ও রাজু এরা দুজন। মাসুম ও রাজুকে আজমিরী ওসমান ওরফে ভাইয়া জান এবং তার মা আম্মাজান নিজেই এই গ্রুপটাকে পরিচালনা করত। অনেকের মতে আম্মাজানের অর্থের যোগানদাতা ছিল এরা দুইজন।
রাজু কিছুটা নিরব থাকলেও প্রকাশ্যে চাঁদাবাজি ভূমিদস্যুতা এবং সব অপকর্ম করে চলছে মাসুম । মাসুম জাতীয় পার্টি যুব সমাজের নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক।
৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নারায়ণগঞ্জের গডফাদার এ.কে.এম শামীম ওসমান ও তার ভাতিজা শীর্ষ সন্ত্রাসী আজমির ওসমান বাহিনীর অনেকে পালিয়ে গেলেও এই সন্ত্রাসীরা কারো না কারো ছত্রছায়ায় প্রকাশে ঘোরাফেরা ও ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
কিছুদিন ডুবদিয়ে থাকলেও এই মাসুম এখন আবার এলাকায় প্রকাশ্যে দেখা যাচ্ছে। সে তার সুবিধার জন্য ব্যবহার করছে কিছু সাংবাদিক ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের নাম। অত্র এলাকার মানুষ হতবাক কিভাবে এত বড় সন্ত্রাসী এখনো প্রকাশে ঘোরাফেরা করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভূমিধস্যু চাঁদাবাজি ও দখল বাণিজ্য ছাড়াও হাজিগঞ্জ, তল্লা, পাঠানতলী, এনায়েত নগর ওয়াবদারপুল ও এমসারকেস এই এলাকাগুলোতে মাসুম ও রাজুর একক নিয়ন্ত্রণে একেএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমানের প্রভাব খাটিয়ে ইন্টারনেট ব্যবসার আধিপত্য বিস্তার করতো, যা এখনো বহাল।
বিশেষ পেশার কয়েকজন ও স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীর ছত্রছায়া এই ব্যবসা এখনো চলমান বলে জানা যায়। যার সেন্টার দাতা ছিল এটিএম শামীম ওসমানের পুত্র অয়ন ওসমান।আজমির ওসমান বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার মাসুম প্রকাশ্যে. আতঙ্ক
নারায়ণগঞ্জ টাইমস সর্বশেষ জনপ্রিয় ১আরো পড়ুন
সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতার মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
সোনারগাঁয়ে অটোরিকশা-পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ১০
সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতার মেয়ের মাদক সেবনের ভিডিও ভাইরাল
নবায়নযোগ্য শক্তির দাবিতে সোনারগাঁয়ে মানববন্ধন
সোনারগাঁয়ে চোর আটক করে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ
বন্দরে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে যুবককে হত্যা
বন্দরে সোহান হত্যা মামলার আসামি কাজলকে আদালতে প্রেরণ
বন্দর প্রেসক্লাবের মাসিক সভা অনুষ্ঠিত
২৩১/১ বঙ্গবন্ধু সড়ক (৬ষ্ঠ তলা, লিফটের ৫)
নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাব ভবন, নারায়ণগঞ্জ
নির্বাহী সম্পাদক: মোশতাক আহমেদ (শাওন)
ফোন:+৮৮০১৯৩৩-৩৭৭৭২৪
ইমেইল : [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ বা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
© ২০২৫ | সকল স্বত্ব নারায়ণগঞ্জ টাইমস কর্তৃক সংরক্ষিত | উন্নয়নে ইমিথমেকারস.কম