কলম্বোতে পাঁচ ম‌্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে হেরে পিছিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। শ্রীলঙ্কা অনূর্ধ্ব-১৯ দলের কাছে প্রথম ম‌্যাচে পাত্তা পায়নি। তবে ঘুরে দাঁড়াতে সময় নেয়নি যুবারা। সোমবার (২৮ এপ্রিল) ৯ উইকেটের বিশাল ব‌্যবধানে স্বাগতিকদের হারিয়েছে বাংলাদেশ।

যে ম‌্যাচে জয়ের নায়ক পেসার আল ফাহাদ ও ওপেনার জাওয়াদ আবরার। পেসার আল ফাহাদ ৪৪ রানে ৬ উইকেট পেয়েছেন। জাওয়াদ ১০৬ বলে ১৩০ রান করেছেন ১৪ চার ও ৬ ছক্কায়। দুই ক্রিকেটারের ব‌্যাট-বলের দাপটে স্রেফ উড়ে গেছে লঙ্কান যুবারা।

কলম্বোতে আগে ব‌্যাটিং করতে নেমে শ্রীলঙ্কা যুব দল ৪৮.

৫ ওভারে ২১১ রানে গুটিয়ে যায়। জবাবে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ৩৪.৩ ওভারে লক্ষ‌্য ছুঁয়ে ফেলে।

আরো পড়ুন:

বল ঘুরল, বাংলাদেশ হাসল

আবাহনীর ২৪ নাকি মোহামেডানের ১০!

যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে তিন বোলার ৬ উইকেট শিকার করেছেন। ফাহাদ সবশেষ এই তালিকায় প্রবেশ করলেন। তবে প্রথম পেসার হিসেবে তিনি পেলেন ৬ উইকেট। এর আগে সঞ্জিত সাহা ১৯ রানে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন। এছাড়া মাহফুজুল রহমান রাব্বী ২৯ রানে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন। আজ নতুন বলে ফাহাদ শুরুতে ১ উইকেট পান। পরবর্তীতে শেষ দিকে বোলিংয়ে ফিরে ধস নামান। ফাহাদ বাদে বল হাতে দ্যুতি ছড়িয়েছেন ইকবাল ইমন। ২ উইকেট পেয়েছেন এই পেসার।

শ্রীলঙ্কার হয়ে ব্যাটিংয়ে সর্বোচ্চ ৫১ রান করেন চামিকা হেনাটিগালা। ৪৭ রান আসে দিনুরা ডামিসিথের ব‌্যাট থেকে।

জবাব দিতে নেমে জাওয়াদের ব‌্যাটে উড়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ডানহাতি এই ওপেনার চার-ছক্কার বৃষ্টি নামান ২২ গজে। আরেক ওপেনার কালাম সিদ্দীক ৫ রানে আউট হলেও রান তাড়ায় কোনো প্রভাব পড়েনি। জাওয়াদ ও আজিজুল জুটি গড়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান। দুজন দ্বিতীয় উইকেটে ১৮০ রানের জুটি গড়েন যা দ্বিতীয় উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ। তারা ভেঙেছেন এনামুল হক ও লিটন দাসের ১৭৯ রানের রেকর্ড।

যুব ক্রিকেটে জাওয়াদের এটি প্রথম সেঞ্চুরিতে। ১৩০ রানে অপরাজিত থাকেন এই ব‌্যাটসম‌্যান। যা যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশের ক্রিকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৫ সালে ডারবানে ১৫০ রান করেছিলেন পিনাক ঘোষ। ১৩০ রানের ইনিংসে জাওয়াদ ৯২ রানই করেছেন বাউন্ডারিতে। যা এক ইনিংসে বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম‌্যানের যুব ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান। পিনাক তার ১৫০ রানের ইনিংসে বাউন্ডারিতে ৯০ রান পেয়েছিলেন। জাওয়াদের সঙ্গে ৬৯ রানে অপরাজিত থাকেন আজিজুল হাকিম। ৮৯ বলে ৫ চার ও ৩ ছক্কায় আজিজুল ইনিংসটি খেলেন।

৯৩ বল হাতে রেখে বাংলাদেশ জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। এর চেয়েও বড় জয় যুব ক্রিকেটে আছে বাংলাদেশের।

কলম্বোতে পহেলা মে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উইক ট প য় ছ ৬ উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ