ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলের মানবিক বাধ্যবাধকতা নিয়ে হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গতকাল সোমবার শুনানি শুরু হয়েছে। তবে বরাবরের মতোই ইসরায়েল এই বিচার কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করেছে। দখলদার দেশটি আইসিজের শুনানিতে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তবে তারা লিখিত আপত্তি জমা দিয়েছে। শুনানিতে ফিলিস্তিনি প্রতিনিধি ও নেদারল্যান্ডসে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজি গাজার ধ্বংসযজ্ঞ, মৃত্যু ও দুর্ভিক্ষের চিত্র তুলে ধরেছেন। এতে বলা হয়েছে, ইসরায়েল মানবিক সহায়তাকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।   

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি সবসময় অবজ্ঞা করে আসছে। গাজায় মানবিক বাধ্যবাধকতা স্বীকার করতে চাইছেন না বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। 
গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তায় বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে এ নিয়েই শুনানি হচ্ছে, চলবে পাঁচ দিনব্যাপী। এতে যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্তত ৪০ দেশ ১৫ জন বিচারকের সামনে তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে।

গতকাল ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত আম্মার হিজাজি গাজায় ইসরায়েলের অমানবিক আচরণ তুলে ধরে শুনানিতে বলেন, ইসরায়েল দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ, চিকিৎসা সরবরাহ বা জ্বালানি প্রবেশ করতে দিচ্ছে না। ইসরায়েলি সুপ্রিম কোর্ট এই অমানবিক নীতি সমর্থন করেছেন। ফলে অনাহারে মৃত্যুসহ মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, ইসরায়েল ফিলিস্তিনকে মুছে ফেলার অপচেষ্টায় লিপ্ত। তারা জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইনের বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে।

গতকাল শুনানিতে বক্তব্য দেন জাতিসংঘের আইনবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল এলিনর হ্যামারস্কজোল্ড। তিনি বলেন, গাজায় ইসরায়েল দম্ভ দেখাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাদের ওপর আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা আরোপ জরুরি। এ সময় তিনি জানান, ইসরায়েলি হামলায় গত ১৮ মাসে কমপক্ষে ২৯৫ জন জাতিসংঘের কর্মী নিহত হয়েছেন। গাজায় জাতিসংঘের হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। 

আল জাজিরা জানায়, গত বছর নরওয়ে ও কিছু দেশ মিলে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে একটি প্রস্তাব তোলে। তাতে বলা হয়, জাতিসংঘ সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনে আন্তর্জাতিক মানবিক বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করছে কিনা, সে বিষয়ে মতামত প্রয়োজন। এই মতামত জানতে এই শুনানি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এই পদক্ষেপকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টির কৌশলগত সুযোগ হিসেবে দেখছে জাতিসংঘ।  

এদিকে ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইসিজের শুনানির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের শুনানি তাঁর দেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। আদালতকে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। এই ধরনের কার্যক্রম লজ্জাজনক।    

দোহায় বার্ষিক গ্লোবাল সিকিউরিটি ফোরামে রেড ক্রস জানিয়েছে, এক অন্তহীন দুঃস্বপ্নের মুখোমুখি গাজার বাসিন্দা। তারা এখন মৃত্যু, আঘাত, বাস্তুচ্যুতি, অঙ্গচ্ছেদ, বিচ্ছেদ, অন্তর্ধান, অনাহারে জর্জরিত। এর মধ্যেই ইসরায়েল হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই ভয়াবহতা তাদের আগামী কয়েক দশক তাড়া করে ফিরবে।  

রয়টার্স জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছে ৭১ ফিলিস্তিনি। গত ১৮ মাসে এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৫২ হাজার ৩১৪ জন নিহত ও ১ লাখ ১৭ হাজার ৭৯২ জন আহত হয়েছে। 

অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের কাছে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া টিয়ার গ্যাসে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মারা গেছে। ওয়াফা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী আল-খাদেরে হামলা চালিয়ে পুরাতন শহরের টাল এলাকায় অবস্থান নেয়। এ সময় তারা সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করলে দমবন্ধ হয়ে শিক্ষার্থীরা মারা যায়। 

গতকাল গাজা শহরের উত্তর-পশ্চিমে সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গাজা উপত্যকার উত্তরে হামলায় প্রাণ গেছে ১০ জনের। একটি বাড়ির ধ্বংসস্তূপ থেকে চারটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। খান ইউনিসের কাছে তাঁবুতে হামলায় একটি মেয়ে ও একটি শিশুও মারা গেছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আইস জ ইসর য় ল গ জ গণহত য ইসর য় ল র য় ইসর গতক ল ইসর য আইস জ

এছাড়াও পড়ুন:

জামালপুর শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরে ঢোকে পানি, দুই শতাধিক পরিবারের ভোগান্তি

জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রার পলাশতলা এলাকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বুধবারবেলা দুইটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, জলাবদ্ধতায় দুই শতাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে আছেন।

‘পলাশতলার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রা রেলক্রসিংয়ের সামনে পলাশতলা এলাকাটির অবস্থান। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়ক থেকে একটি সংযোগ সড়ক এলাকাটির দিকে ঢুকেছে। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে তাঁদের বানভাসির মতো বসবাস করতে হয়। এলাকার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান তাঁরা।

স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকাটিতে সামান্য বৃষ্টি হলে আঙিনা উপচে কয়েকটি ঘরে পানি ঢোকে। পানি মাড়িয়ে যাবতীয় কাজ সারতে হয়। যেকোনো কাজে বাইরে গেলে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। ফলে তাঁরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় চার বছর ধরে এমন অসহনীয় জলাবদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের বসবাস করতে হচ্ছে।

শহিদুল্লাহ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, গত চার বছর ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বানভাসির মতো বসবাস করছেন। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে বহুবার পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায়, অনেকের হাত-পায়ে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।

দ্রুত সময়ের মধ্যে পলাশতলার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক এ কে এম আবদুল্লাহ-বিন-রশিদ। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় আমি নিজে গিয়ে দেখে আসছি। যেসব স্থানে পানি আটকে আছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকার পানি সরাতে ইতিমধ্যে পৌরসভার অন্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ