চর্যাগানের সুরে আদি সংস্কৃতির দ্যোতনা
Published: 10th, July 2025 GMT
চর্যাগান ধরেছেন সাদা পোশাক পরা সাধুরা। তাদের সুরে বিমোহিত দর্শনার্থী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আওয়াজ, সৃষ্টি করছে মায়াজাল। বাইরে বৃষ্টির ধারা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত।
ভাবসাধকদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয়বারের মতো তিন দিনব্যাপী চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫-এর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে এমন চিত্র দেখা গেছে। ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের যুগপূর্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানটি হয় দুটি পর্বে। আলোচনা পর্ব সেমিনার কক্ষে এবং চর্যাগান স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গানের অংশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা আর সেখানে গড়ায়নি। তাই ছাদের নিচেই সাধুরা ছড়ান সুরের লহর। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাবনগর সাধুসঙ্গের শিল্পীরা সমবেতভাবে লুইপা রচিত চর্যাপদের প্রথম পদটি পরিবেশন করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ফ্রান্স থেকে আসা লালনপন্থি সাধিকা ফকির দেবোরাহ জান্নাত। তিনি বলেন, আদি সংস্কৃতির মধ্যেই মানবের মুক্তি। চর্যাপদের গানে তার নির্দেশনা রয়েছে। আজকে সাধকরা যে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ করেছেন, তা এ দেশের প্রাচীন সাধনার সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছে। নিজের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানোর জন্য চর্যাগান থেকে লালন সাঁইয়ের গানের কাছে, জ্ঞানের কাছে ফিরতে হয়। বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি চর্যাপদ থেকে ছয়টি গান পরিবেশন করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক-শিক্ষক ড.
শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের সুরকার, শিল্পী ও প্রশিক্ষক সাধিকা সৃজনী তানিয়া ও ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের শিল্পী বাবুল আক্তার বাচ্চু। স্বাগত ভাষণ দেন গবেষক ও নাট্যকার ড. সাইমন জাকারিয়া।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের আসরে চর্যাগান পরিবেশন করেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা সাধকশিল্পী বাবুল আক্তার বাচ্চু, লুৎফর রহমান, আফজাল হোসেন, সোহেল, সানোয়ার, খলিল, আলী আজম, ফারুক হোসেনসহ অনেকে। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন নূরুননবী শান্ত ও কবি শাহেদ কায়েস। চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব-২০২৫ চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত।
আজকের আয়োজন
আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সাধকশিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে। ‘চর্যা-সাধনার উত্তরাধিকার: অতীশ-চৈতন্য-লালন’ শীর্ষক সংগীত-সেমিনারে প্রাচীন চর্যাপদের গানের পাশাপাশি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের চর্যাগান ও লালন সাঁইয়ের গান পরিবেশনের মাধ্যমে বক্তৃতা করবেন বরিশালের সাধক কবি ও চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সুরকার-শিল্পী শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের সাধকশিল্পী বাউল অন্তর সরকার, শরীয়তপুরের সাধকশিল্পী শিলা মল্লিকসহ অনেকেই।
চর্যাগান হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য নিদর্শন, যা চর্যাপদ নামেও পরিচিত। এটি মূলত অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যদের সাধনবিষয়ক গান ও সংকলন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: চর য গ ন অন ষ ঠ ন শ ল পকল এক ড ম
এছাড়াও পড়ুন:
থিম্পুতে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘এসপিবিএ ভুটান আর্টক্যাম্প’
সোসাইটি ফর প্রমোশন অব বাংলাদেশ আর্টের (এসপিবিএ) উদ্যোগে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে চলছে পাঁচ দিনব্যাপী ‘এসপিবিএ ভুটান আর্ট ক্যম্প ২০২৫’। ৮ জুলাই শুরু হওয়া আর্টক্যাম্পটি চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত।
একুশে পদকপ্রাপ্ত খ্যাতিমান শিল্পী কনক চাঁপা চাকমাসহ আর্টক্যাম্পে বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছেন দেশের সাতজন প্রতিষ্ঠিত তরুণ প্রতিভাবান শিল্পী। তাঁরা হলেন আজমীর হোসেন, সহিদ কাজী, সৌরভ চৌধুরী, সুমন ওয়াহেদ, সৈকত হুসাইন, ফারজানা রহমান ববি এবং রূপশ্রী হাজং।
এ ছাড়া ভুটানের দুজন তরুণ শিল্পী উগেন সেরিং দয়া ও কিশোর দাহালও এই আর্টক্যাম্পে অংশ নিয়েছেন।
ভুটানে বাংলাদেশ মিশনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত শিবনাথ রায় আর্টক্যাম্প পরিদর্শন করেন। শিল্পীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় তিনি আয়োজনটির প্রশংসা করেন। ‘এসপিবিএ ভুটান আর্টক্যাম্প ২০২৫’-এর সার্বিক পরিচালনায় আছেন দেশের খ্যাতিমান স্থপতি রফিক আজম।