চর্যাগান ধরেছেন সাদা পোশাক পরা সাধুরা। তাদের সুরে বিমোহিত দর্শনার্থী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আওয়াজ, সৃষ্টি করছে মায়াজাল। বাইরে বৃষ্টির ধারা। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে ব্যতিক্রমী এ আয়োজন শুরু হয়ে চলে রাত ১০টা পর্যন্ত। 

ভাবসাধকদের অংশগ্রহণে দ্বিতীয়বারের মতো তিন দিনব্যাপী চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব ২০২৫-এর প্রথম দিনের অনুষ্ঠানে এমন চিত্র দেখা গেছে। ভাবনগর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের যুগপূর্তি উপলক্ষে শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠানটি হয় দুটি পর্বে। আলোচনা পর্ব সেমিনার কক্ষে এবং চর্যাগান স্টুডিও থিয়েটার হলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। গানের অংশটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে তা আর সেখানে গড়ায়নি। তাই ছাদের নিচেই সাধুরা ছড়ান সুরের লহর। অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাবনগর সাধুসঙ্গের শিল্পীরা সমবেতভাবে লুইপা রচিত চর্যাপদের প্রথম পদটি পরিবেশন করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ফ্রান্স থেকে আসা লালনপন্থি সাধিকা ফকির দেবোরাহ জান্নাত। তিনি বলেন, আদি সংস্কৃতির মধ্যেই মানবের মুক্তি। চর্যাপদের গানে তার নির্দেশনা রয়েছে। আজকে সাধকরা যে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণ করেছেন, তা এ দেশের প্রাচীন সাধনার সঙ্গে আমাদের সংযোগ স্থাপন করে দিচ্ছে। নিজের হৃদয়ের কাছে পৌঁছানোর জন্য চর্যাগান থেকে লালন সাঁইয়ের গানের কাছে, জ্ঞানের কাছে ফিরতে হয়। বক্তব্যের পাশাপাশি তিনি চর্যাপদ থেকে ছয়টি গান পরিবেশন করেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষক-শিক্ষক ড.

কিথ ই কান্তু। তিনি বলেন, চর্যাপদের গান বাংলাদেশের প্রাচীন ইতিহাসের অংশ। এ গানের পুনর্জাগরণের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাব-সাধকরা তাদের যে সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন, তা প্রশংসনীয়।

শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের সুরকার, শিল্পী ও প্রশিক্ষক সাধিকা সৃজনী তানিয়া ও ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের শিল্পী বাবুল আক্তার বাচ্চু। স্বাগত ভাষণ দেন গবেষক ও নাট্যকার ড. সাইমন জাকারিয়া।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের আসরে চর্যাগান পরিবেশন করেন ঐতিহাসিক পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার থেকে আসা সাধকশিল্পী বাবুল আক্তার বাচ্চু, লুৎফর রহমান, আফজাল হোসেন, সোহেল, সানোয়ার, খলিল, আলী আজম, ফারুক হোসেনসহ অনেকে। অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেন নূরুননবী শান্ত ও কবি শাহেদ কায়েস। চর্যাপদ পুনর্জাগরণ উৎসব-২০২৫ চলবে আগামী ১১ জুলাই পর্যন্ত।

আজকের আয়োজন

আজ উৎসবের দ্বিতীয় দিনের আয়োজন বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে বাংলাদেশের চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সাধকশিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হবে। ‘চর্যা-সাধনার উত্তরাধিকার: অতীশ-চৈতন্য-লালন’ শীর্ষক সংগীত-সেমিনারে প্রাচীন চর্যাপদের গানের পাশাপাশি অতীশ দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞানের চর্যাগান ও লালন সাঁইয়ের গান পরিবেশনের মাধ্যমে বক্তৃতা করবেন বরিশালের সাধক কবি ও চর্যাপদের গানের পুনর্জাগরণের সুরকার-শিল্পী শাহ আলম দেওয়ান, মানিকগঞ্জের সাধকশিল্পী বাউল অন্তর সরকার, শরীয়তপুরের সাধকশিল্পী শিলা মল্লিকসহ অনেকেই।

চর্যাগান হলো বাংলা ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য নিদর্শন, যা চর্যাপদ নামেও পরিচিত। এটি মূলত অষ্টম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে রচিত বৌদ্ধ সহজিয়া সিদ্ধাচার্যদের সাধনবিষয়ক গান ও সংকলন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চর য গ ন অন ষ ঠ ন শ ল পকল এক ড ম

এছাড়াও পড়ুন:

আড্ডা আর গানে চুয়েটে ‘জয়ধ্বনির’ উৎসবমুখর আয়োজন

মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেউ গাইছেন গান, কেউ গিটারের তারে তুলছেন সুর। দর্শকেরাও সেই সুর মোহিত হয়ে উপভোগ করছেন। কেউ দিচ্ছেন করতালি, কেউবা মুঠোফোনের ফ্ল্যাশ জ্বেলে শিল্পীদের উৎসাহ দিচ্ছেন। সেই সঙ্গে মঞ্চের আলোকসজ্জা তো আছেই।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) বাস্কেটবল মাঠে গিয়ে দেখা যায় এ দৃশ্য। উৎসবমুখর এ পরিবেশের আয়োজন করেছিল চুয়েটের সাংস্কৃতিক সংগঠন জয়ধ্বনি। সংগঠনটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ আয়োজন করা হয়।

সংগঠনটির দুই দিনব্যাপী এ উৎসবে দেশের সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া সংগঠনটির সাবেক ও বর্তমান সদস্যরাও রয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এ উৎসব শেষ হয়েছে। এ উৎসব ঘিরে মাঠের চারপাশে বসে বিভিন্ন ধরনের স্টল। এতে ছিল নানা পণ্য, খাবার ও শীতের পিঠা।

উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে প্রথম আলো, পৃষ্ঠপোষকতায় ইলেকট্রনিক কোম্পানি ‘হ্যাভিট’, খাদ্যসহায়তায় ‘পাহাড়িকা কিচেন’ আর বেভারেজ সহায়তায় মোজো।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ উৎসব। এরপর পর্যায়ক্রমে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিল্পীরা। বিরতির পর রাত নয়টায় আবার শুরু হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। একে একে মঞ্চে গান পরিবেশন করেন আহ্‌ছানউল্লা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে পরিবেশকদের সম্মাননা দিয়ে প্রথম দিনের উৎসব শেষ হয়।

দুই দিনব্যাপী উৎসবের এ আয়োজন দেখতে ভিড় করেন হাজারো শিক্ষার্থী। গত বৃহস্পতিবার রাতে চুয়েটের বাস্কেটবল মাঠে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শস্য–সংস্কৃতি–সমৃদ্ধির শিল্পোৎসব
  • গারোদের ওয়ানগালা উৎসব
  • তোরেসের প্রথম হ্যাটট্রিকে বার্সার গোল উৎসব
  • সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে অভিনয়, অপছন্দের সেই দৃশ্য নিয়ে কথা বললেন জেসিকা
  • ডিসেম্বরজুড়ে আড়ংয়ে চলবে কারুশিল্পের উৎসব
  • আড্ডা আর গানে চুয়েটে ‘জয়ধ্বনির’ উৎসবমুখর আয়োজন
  • গোপনেই শেষ হলো বাঁধন, সুনেরাহ ও শিমুদের শুটিং
  • সাংহাই থিয়েটার উৎসবে মূল বক্তা ইসরাফিল শাহীন
  • সেক্টর গঠন করে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে
  • বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নবান্নের আয়োজনে বাংলার ঐতিহ্যের পরিচয়