আসন্ন ২০২৫-২৬ অর্থবছরে শিশুদের জন্য অন্তত ২০ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ রাখার দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা। মঙ্গলবার রাজধানীর সিরডাপে ‘জনবান্ধব বাজেট ভাবনা’ শীর্ষক সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত দিনব্যাপী অনু্ষ্ঠানের প্রথম পর্বে শিশু বিষয়ক বাজেটের আলোচনায় এই দাবি জানান তারা। সামাজিক সংগঠন নাগরিক বিকাশ ও কল্যাণ (নাবিক) এর আয়োজন করে।

শিশুবান্ধব বাজেট সেশনে সভাপতিত্ব করেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড.

আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন সেভ দ্য চিলড্রেন ইন বাংলাদেশের শিশুর প্রতি বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা জাফর সাদিক। আলোচক ছিলেন বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন, এবি পার্টির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ওমর ফারুক, শিশু সংগঠক জাকারিয়া হাবিব পাইলট, বাংলাদেশ ডায়ালগের পরিচালক আসলাম বেগ সায়েম, টুইম্বলের প্রতিষ্ঠাতা ও উদ্যোক্তা শামীম আশরাফ ও কিডস টাইমের কো-ফাউন্ডার তাহমিনা রহমান সাথী। সঞ্চালক ছিলেন নাবিকের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ হাসান।

ধারণাপত্রে জাফর সাদিক বলেন, শিশুদের জন্য জন্য জাতীয় বাজেটের অন্তত ২০ শতাংশ রাখা উচিত। শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে। পুরো বাজেটের মধ্যে শিশুদের জন্য বাজেটের অংশটুকু আলাদা উপস্থাপন করা উচিত, যাতে শিশুদের কোন খাতে কতো বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং সেটি বাস্তবায়নে সঠিক তদারকি করা যায়। 

আবুল কালাম আজাদ বলেন, বাজেটে ফাঁকিঝুকির মধ্যে থাকি আমরা। প্রয়োজনীয় জায়গায় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়া হয় না।  শিশু ঠিকমতো বেড়ে উঠতে না পারলে দেশের উন্নতির পথে শিশুরা বড় হয়ে ভূমিকা রাখতে পারবে না। 

মোহাম্মদ শামসুদ্দীন বলেন, শিশুর জন্য দেওয়া বরাদ্দ আমাদের বিনিয়োগ কিনা সেটি ভাবতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থায় বৈষম্য তৈরি করার জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে স্কুল, মাদ্রাসা, কিন্ডারগার্টেন, ইংরেজি মাধ্যম ইত্যাদি ফরমেটে বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। এটা দূর করার জন্য পরিকল্পনা দরকার।

ড. ওমর ফারুক বলেন, আমি গবেষণায় দেখেছি ৯২ শতাংশ স্কুলগামী শিশু পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত। সকল বাজেটে শিশুবান্ধব পরিবেশ দরকার। ঢাকায় ২০টি সরকারিসহ সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি দিবাযত্ন কেন্দ্র আছে, যা যথেষ্ট নয়। 

জাকারিয়া হাবিব পাইলট বলেন, সংসদে বাজেট নিয়ে খুব আলোচনা হয় না। জনসম্পৃক্ত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে বাজেট হওয়া উচিত। বাজেটে শিশুদের বাজেটের দিকে নজর না দিলে আগামী দিনে বাজেটের সুষম বণ্টন হবে না।

আসলাম বেগ সায়েম বলেন, জুলাই আন্দোলনে যেসব শিশু প্রাণ দিয়েছে তারা নিজের বাসায় থেকেও নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি। বাজেটের ৩০ শতাংশ ব্যয় হয় শেষ মাসে। এটি তড়িঘড়ি করে এবং নামকাওয়াস্তে করা হয়। ফলে সঠিকভাবে ব্যয় হয় না।

শামীম আশরাফ বলেন, বাজেট হয়। কিন্তু সেটির সঠিক বাস্তবায়ন হয় কিনা এটি তদারকি করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনলাইনে কনটেন্ট ক্রিয়েটররা টাকার জন্য যেনতেন কনটেন্ট তৈরি করছেন। এসব বিষয়ে সরকারের নজর দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

আবিদ আজম বলেন, বাজেটের রিভিউ এবং ব্যয় নিয়ে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা থাকা জরুরি। চলমান আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে শিশুরা ভিকটিম হয়ে আসছে। শিশুশ্রমকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসা দরকার।

নাসরিন সুলতানা মিলি বলেন, বাজেটের বড় অংশ ব্যয় হয় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতায়। সেটি বাদ দিয়ে মূল উন্নয়নে বাজেট কতো সেটি আলাদা করে প্রতিবেদনে উল্লেখ থাকা দরকার।

তাহমিনা রহমান সাথী বলেন, জন্মের পর প্রথম আট বছরে শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটে। এই সময়ে সঠিক যত্ন না নেওয়া গেলে পরবর্তীতে তার থেকে সঠিক কর্মক্ষমতা গড়ে উঠে না। তাই শিশুকালে সঠিক পরিচর্যার জন্য বিভিন্ন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে বাজেট প্রণয়ন করা উচিত।

শিশু অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিনিধিরা বাল্য বিবাহ বন্ধ এবং প্রাইভেট পড়া রোধ করে অভিভাবকরা যেন শিশুদের সময় দেন সেই ব্যবস্থা রাখার দাবি জানান।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব শ ষ টজন শ শ দ র জন য ব যবস থ বর দ দ দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ঋণ নেওয়ার আগে যে ১০টি বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

নানা কারণে আপনার ঋণ নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অনেক সময় মানুষ ব্যক্তিগত ঋণ, গৃহঋণ নেয়। আবার গাড়ি কেনার জন্যও অনেকে ঋণ নেন। ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমেও ঋণ নেওয়া হয়।

কিন্তু অনেকেই ঋণের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু মৌলিক শব্দ সম্পর্কে জানেন না। ব্যাংকের কর্মকর্তারা যখন এসব শব্দ বলেন, তখন অনেক কিছুই বোঝেন না ঋণ নিতে ইচ্ছুক গ্রাহকেরা। ফলে নিয়মকানুন না জেনেই ঋণ নেন। এতে নানা অপ্রত্যাশিত ঝামেলা তৈরি হয়। তাই ঋণ নেওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বোঝা খুব দরকার।

১. আসল টাকা (প্রিন্সিপাল)

আপনি যে পরিমাণ টাকা ঋণ নিচ্ছেন, সেটিই আসল। এর ওপরই সুদ ধরা হয়। কিস্তি পরিশোধের সঙ্গে আসল ধীরে ধীরে কমতে থাকে।

২. সুদের হার (ইন্টারেস্ট রেট)

ঋণ নেওয়ার আগে সবচেয়ে ভাবতে হয় সুদের হার নিয়ে। সুদের হার বেশি হলে খরচ বেড়ে যায়। ঋণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সুদের হার। এটি স্থিরও হতে পারে, আবার বাজারদরের ওপর নির্ভর করে বাড়তে-কমতেও পারে।

৩. মাসিক কিস্তি (ইএমআই)

ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধ বাবদ প্রতি মাসে যে নির্দিষ্ট টাকা আপনাকে দিতে হবে। সেটি হলো ইএমআই বা ঋণের কিস্তি।

৪. ঋণের মেয়াদ

কত বছরের মধ্যে ঋণ শোধ করতে হবে, সেটিই হলো ঋণের মেয়াদ। মেয়াদ বেশি হলে কিস্তি ছোট হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা বেড়ে যায়। ছোট মেয়াদে কিস্তি বড় হয়। কিন্তু মোট সুদের টাকা কমে।

৫. অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)

শুধু সুদ ও আসল নয়, বরং ঋণের সব খরচ (যেমন ফি, চার্জ) মিলিয়ে আসল ব্যয় কত হবে, তার হিসাব হলো অ্যানুয়াল পারসেন্টেজ রেট (এপিআর)। এটিই প্রকৃত খরচ বোঝায়।

৬. আগাম পরিশোধ (প্রিপেমেন্ট)

ঋণের বোঝা কমাতে অনেকে ঋণের সুদ ও আসলের টাকা আগেই শোধ করে দিতে চান। এতে সুদের খরচ কমে যায়।

৭. প্রসেসিং ফি

আপনি ঋণের জন্য কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলেন। কিন্তু ঋণ আবেদন মঞ্জুর থেকে শুরু করে ছাড় কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কিছু মাশুল দিতে হয়। এটিই প্রসেসিং ফি। এটি কখনো ঋণের টাকা থেকে কেটে নেওয়া হয়, আবার কখনো আলাদা দিতে হয়।

৮. স্থগিতকাল (মোরাটোরিয়াম)

বিশেষ পরিস্থিতিতে কিছুদিনের জন্য কিস্তি বন্ধ রাখার সুযোগকেই বলে স্থগিতকাল। তবে এই সময়েও সুদ জমতে থাকে। অনেক সময় ঋণ পরিশোধের জন্য বিশেষ কিস্তি ভাগও করে দেওয়া হয়।

৯. জামানত (কোলেটারাল)

ঋণের নিরাপত্তা হিসেবে আপনার সম্পদ (যেমন বাড়ি, সোনা, জমি) ব্যাংকে বন্ধক রাখা হয়। কিস্তি না দিলে ব্যাংক ওই সম্পদ বিক্রি করে টাকা তুলে নেয়।

১০. লোন-টু-ভ্যালু রেশিও

আপনি যত টাকা ঋণ নিচ্ছেন আর জামানতের মূল্য কত—এই অনুপাতকে বলে লোন টু ভ্যালু রেশিও (এলটিভি)। এর অনুপাত যত কম হয়, ব্যাংকের ঝুঁকি তত কম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ