নির্বাচন যখনই হোক তার পূর্বে সংস্কার জরুরি: চরমোনাই পীর
Published: 9th, May 2025 GMT
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) বলেছেন, “আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ ও গণহত্যার বিচার করেই দেশে নির্বাচন করতে হবে। তাদের বিচারের আগে কোনো নির্বাচন এ দেশের জগণ মেনে নেবে না।”
সংস্কার ও নির্বাচন সম্পর্কে তিনি বলেন, “সংস্কার ও নির্বাচন উভয়ই জরুরি। নির্বাচন যখনই হোক না কোনো তার পূর্বে সংস্কার জরুরি।”
শুক্রবার (৯ মে) বগুড়ার শহরে আয়োজিত এক গণসমাবেশে তিনি একথা বলেন। সাতমাথা মুক্ত মঞ্চে আয়োজিত এই সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন দলটির জেলা সভাপতি মাওলানা আ.
রেজাউল করীম বলেন, “নারী সংস্কার কমিশন ও নারী নীতিমালা কুরআন-হাদিসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি নিশ্চিত করতে হবে। দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার করতে হবে। তাদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করতে হবে।”
তিনি বলেন, “মিয়ানমারকে মানবিক করিডোরের প্রস্তাব প্রকৃতপক্ষে রাখাইন ও পার্বত্য অঞ্চলকে একটি খ্রিস্টান রাষ্ট্র বানানোর সাম্রাজ্যবাদীদের পায়তারা। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি জাতিসংঘ।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, “ফিলিস্তিনে ইসরায়েল বর্বরতা চালাচ্ছে। জাতিসংঘ কাগুজে বিবৃতি ছাড়া ইসরাইলকে বর্বরতা চালানো থেকে বিরত রাখতে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। ভারতে মোদি সরকার মুসলমানদের ওপর যে নির্যাতন চালাচ্ছে তাতে বিশ্ব সম্প্রদায় সম্পূর্ণভাবে নিরবতা পালন করছে।”
সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন- ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির আল্লামা আব্দুল হক আজাদ। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- সংগঠনের রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মুহাম্মাদ নূরুন নাবী, বগুড়া জেলার প্রধান উপদেষ্টা মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, জেলা সহ-সভাপতি প্রভাষক মীর মাহমুদুর রহমান (চুন্নু), জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মাওলানা আলতাব আলী, ইসলামী শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি মুহা. ফরহাদ হোসেন মন্টু, ইসলামী যুব আন্দোলনের সভাপতি মুহা. সোহরাব হোসেন।
ঢাকা/এনাম/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৩৪৩ দিন ধরে নিখোঁজ মাদ্রাসাছাত্র বেলালের সন্ধান চায় পরিবার
চট্টগ্রাম হাটহাজারী মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বেলাল হোসেন (২০) নিখোঁজ হওয়ার প্রায় দুই মাস পর অজ্ঞাত স্থান থেকে স্বজনদের ফোন করে বলেছিলেন, ‘তোমরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কারণে আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে। আমাকে মেরে ফেলবে। আমার ওপর তোমরা কোনো দাবি দাওয়া রেখো না।’
৩৪৩ দিন ধরে নিখোঁজ বেলালের সন্ধানের দাবিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে স্বজনেরা এ তথ্য জানান। স্বজনদের অভিযোগ, বেলালকে অপহরণের পর গুম করা হয়েছে। জড়িত সন্দেহে মাদ্রাসার দুই শিক্ষক ও একজন শিক্ষার্থীকে অভিযুক্ত করে মামলাও করেছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন বেলালের স্বজনরা। সেখানে তার বাবা আমির হোসেন, মা ফাতেমা বেগম, দুই ভাই সুমন মিয়া ও ইসমাঈল হোসেন উপস্থিত ছিলেন। বেলালের সন্ধান দাবি করে কান্নায় ভেঙে পরেন তারা।
কাঁদতে কাঁদতে মা ফাতেমা বেগম বলেন, উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে ছেলেকে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। মাদ্রাসা থেকে আমার ছেলেকে অপহরণ করা হয়েছে। আমার ছেলেকে আমার কোলে ফিরিয়ে দিক। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। ছেলেকে ফেরত চাই।
লিখিত বক্তব্যে বেলালের বড় ভাই সুমন মিয়া জানান, তাদের বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের উত্তর গুদিঘাটা গ্রামে। বেলাল চট্টগ্রামের আল জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলুম মঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদ্রাসার ২০১৮-১৯ সেশনের মুতাফাররেকা শ্রেণির একজন ছাত্র। আবাসিক শিক্ষার্থী ছিল। ২০২৪ সালের ১৫ জুলাই থেকে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিখোঁজের দেড় মাস পর সুমনের মোবাইল ফোনে একটি মেসেজ আসে। তাতে বেলাল লিখেছিল 'আমার শরীর বেশি ভালো না, মরে যাব।' তখন স্বজনরা নিশ্চিত হয় বেলাল অপহরণ হয়েছে। আগস্টে মাদ্রাসার শিক্ষক তরিকুল ইসলাম ও কারী কাসেম এবং শিক্ষার্থী রেজাউল ইসলাম সিফাতুল্লাহ ছাত্র বেলাল হোসেনকে অপহরণের পর গুম করেছেন বলে অভিযোগ করা হয় সংবাদ সম্মেলনে। তাদের বিরুদ্ধে গত বছরে আগস্টে হাটহাজারী মডেল থানায় মামলাও করা হয়েছে।
সুমন মিয়া বলেন, মামলা করার পর সেপ্টেম্বরের প্রথম দিকে আবারও সেই অজ্ঞাত নাম্বর থেকে কল দিয়ে আমার ভাই বলে, 'তোমরা আইনের আশ্রয় নেওয়ার কারণে আমাকে খুব চাপ দিচ্ছে, আমাকে মেরে ফেলবে, আমার ওপর তোমরা কোনো দাবি দাওয়া রেখো না।' মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ তাদের একজন আবাসিক শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়া সত্ত্বেও কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগে সুমনের। বেলালের সন্ধানে র্যাব, পুলিশের কাছ থেকেও আশানুরূপ সহযোগিতা মেলেনি বলে জানান তিনি। দুজন শিক্ষক এবং একজন ছাত্রকে কেনো অভিযুক্ত করা হচ্ছে-এমন প্রশ্নে সুমন মিয়া বলেন, একজন শিক্ষকের খাদেম নিয়োগ নিয়ে বেলালের সঙ্গে তাদের ঝামেলা হয়েছিল।
অভিযুক্ত শিক্ষক তরিকুল ইসলাম মোবাইল ফোনে মঙ্গলবার বিকেলে সমকালকে বলেন, 'আমি মাদ্রাসার মাদানী মঞ্জিল নামের আবাসিক ভবনের দায়িত্বে রয়েছি। ওই ভবনের ৬২৭ নম্বর কক্ষে বেলালসহ ১২ জন ছাত্র থাকত। সে না জানিয়ে অনেক সময় মাদ্রাসা থেকে চলে যেত, এক-দুই সপ্তাহ পর আসত। দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকায় তার সিট বাতিল করে দিই এবং তার ছাত্রত্ব বাতিল হয়ে যায়। সে কোথায় গেছে, সেটা আমার জানার কথা না। আমার বিরুদ্ধে কেনো অভিযোগ জানি না।'