সারাবিশ্বে প্রায় ১৫ কোটি মুসলমান ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এদের মধ্যে অনেকেই হজ পালন করতে যান। অন্যান্য মানুষের তুলনায় ডায়াবেটিস রোগীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কিছুটা বেশি। এর সঙ্গে হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনির জটিলতা, স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা, হাঁপানিসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগ থাকলে তা আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। তাই হজযাত্রার প্রাক্কালে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিরূপণ-পূর্বক একজন চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
হজে যাওয়ার কমপক্ষে ১০ দিন আগে মেনিনজাইটিস টিকা ও ফ্লু ভ্যাকসিন নিতে হবে। আপনার ওষুধের ব্যবস্থাপত্র কাছে রাখুন। ডায়াবেটিস রোগীদের যথেষ্ট পরিমাণ ইনসুলিন বা ডায়াবেটিসের ওষুধ, নির্দেশিত ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, হাঁপানি বা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের ওষুধ নিতে হবে। ইনসুলিন ব্যবহারকারীরা এই সময় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে সহজে বহনযোগ্য ও ব্যবহার উপযোগী ইনসুলিন পেনডিভাইস নিতে পারেন। প্রয়োজনে ইনসুলিনের বা ওষুধের ধরন ও মাত্রা পরিবর্তন হতে পারে। অবশ্যই নিয়মিতভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নির্ধারণের জন্য গ্লুকোমিটার সঙ্গে নেবেন।
এ সময় হাইপোগ্লাইসেমিয়া, ডায়াবেটিস কিটোএসিডোসিস বা হাইপার অসমোলার কোমার মতো মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে। হজের আনুষ্ঠানিকতা পালনে ব্যস্ততার কারণে কোনো অবস্থাতেই ইনসুলিন বা প্রয়োজনীয় ওষুধ বাদ দেওয়া যাবে না। প্রয়োজনে ছোট্ট একটি ব্যাগে এগুলো রাখতে হবে। সঙ্গে খেজুর, হালকা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার ও পানিস্বল্পতা এড়াতে পর্যাপ্ত পানি রাখতে হবে। যথাসময়ে খাবার গ্রহণের চেষ্টা করতে হবে।
হজের আনুষ্ঠানিকতায় অনেক বেশি হাঁটাহাঁটি করতে হয় বলে ডায়াবেটিস রোগীদের পায়ের যত্ন নেওয়া জরুরি। পায়ে আঘাতজনিত ক্ষত এড়াতে নরম, টেকসই বন্ধ জুতা ব্যবহার করতে হবে। ক্ষেত্রবিশেষে পায়ে চামড়ার মোজা পরিধান করতে হবে, খালি পায়ে হাঁটা যাবে না।
বেশির ভাগ হাজিরাই গলাব্যথা, হাঁচি-সর্দি-কাশি, জ্বরে ভুগে থাকেন। এসব সমস্যার জন্য প্যারাসিটামল, অ্যান্টিহিস্টামিন জাতীয় ওষুধ যেমন ফেক্সোফেনাডিন, লোরাটাডিন গ্রহণ করতে পারেন। পেট ফাঁপা, অ্যাসিডিটির সমস্যায় এন্টাসিড, ওমিপ্রাজল, ফেমোটিডিন, ডমপেরিডন জাতীয় ওষুধ সেবন করুন। ডায়রিয়া, বমি হলে বা অতিরিক্ত ঘামের ফলে শারীরিক অবসাদ কাটাতে ওরস্যালাইন গ্রহণ করবেন।
গরমজনিত শারীরিক অসুস্থতা বা হিটস্ট্রোক ও সানবার্ন এড়াতে সাদা ছাতা বা মাথায় কাপড় ব্যবহার করুন। মাংসপেশি ও জয়েন্টের ব্যথায় আইবুপ্রোফেন বা ন্যাপ্রোক্সেন জাতীয় ওষুধ সেবন করুন। তবে কিডনির জটিলতা, হৃদরোগ বা পেপটিক আলসার থাকলে ব্যথানাশক সেবনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। চশমা ব্যবহার করলে অবশ্যই প্লাস্টিকের তৈরি অতিরিক্ত একজোড়া চশমা সঙ্গে নেবেন।
হজে যাওয়ার আগেই চোখ ও দাঁতের পরীক্ষা করাবেন। হৃদরোগ, হাঁপানি, কিডনি বা লিভারের জটিলতা থাকলে অবশ্যই সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। যতটা সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলুন। সংক্রমণ প্রতিরোধে সব সময় মাস্ক ব্যবহার করুন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বিধি মেনে চলুন, যেখানে-সেখানে থুতু ফেলবেন না। অতিরিক্ত তেল-মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। যতটা সম্ভব পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। যে কোনো অসুস্থতায় বাংলাদেশ মিশন বা নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ডা.
এ হাসনাত শাহীন
ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপালস হাসপাতাল, তেজগাঁও, ঢাকা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: হজ হজয ত র ব যবহ র কর ইনস ল ন হ র কর হ দর গ
এছাড়াও পড়ুন:
২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী
অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।
ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।