কয়েক দিন হলো নিউইয়র্ক থেকে ঢাকায় ফিরেছেন তাহমিদ আহমেদ। টাইম সাময়িকীর আমন্ত্রণে ‘টাইম ১০০ ইমপ্যাক্ট ডিনার: লিডারস শেপিং দ্য ফিউচার অব হেলথ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। সাময়িকীটির দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী, সেখানে তিনি একটি অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্যও দিয়েছেন।

২৪ মে আইসিডিডিআরবিতে টাইম–এর স্বীকৃতি নিয়েই আলাপ শুরু হলো। পরে সেই আলাপ গড়াল জীবনের নানা দিকে।

বেতন আড়াই হাজার টাকা

১৯৮৩ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস করেন তাহমিদ আহমেদ। তারপর সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়ে কয়েক মাস কাজ করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তিনি বললেন, ‘১৯৮৫ সালে মেডিকেল অফিসার হিসেবে আইসিডিডিআরবিতে যোগ দিই। বড় ভাইয়ের কথায় আইসিডিডিআরবির কাজটিকে ঢাকায় থাকার একটা উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম। প্রথম মাসের বেতন ছিল সম্ভবত আড়াই হাজার টাকা।’

আইসিডিডিআরবিতে তখন বিদেশি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বড় বড় সব পদে বিদেশি। সেই সময় নির্বাহী পরিচালক ছিলেন বিখ্যাত শিশুবিশেষজ্ঞ রজার ইকেলস। তাহমিদ আহমেদ বলেন, ‘কোনো দিন ভাবিনি একদিন আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক হব। ও রকম কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যও আমার ছিল না।’

আপনার কি কখনো পুষ্টিবিদ বা পুষ্টিবিজ্ঞানী হওয়ার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য ছিল? এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘না।’

আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে কাজ করার সময় অপুষ্টির বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ আসে। তাহমিদ আহমেদের ভাষায়, ‘প্রতিদিন তীব্র অপুষ্টির শিশুদের দেখতাম। অনেক শিশু মারা যেত। এটা ছিল মেডিকেল ইমার্জেন্সি, কিন্তু সব শিশুকে বাঁচানো যেত না। অপুষ্টির কারণে তখন রাতকানা রোগ ছিল তীব্র পর্যায়ে। পুষ্টি নিয়ে কাজ করার পেছনে এই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার ভূমিকা ছিল।’

আইসিডিডিআরবিতে কাজ শুরুর পর ইউরোপ বা আমেরিকার অনেক পুষ্টিবিজ্ঞানী এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের পুষ্টিবিজ্ঞানীদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে তিনি এ দেশের কয়েকজনের কাজে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের কর্মকর্তা ইকবাল কবির এবং আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী এস কে রায় অন্যতম।

টাইম সাময়িকীর ‘বিশ্ব স্বাস্থ্যে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তি’র তালিকায় জায়গা পেয়েছেন ড.

তাহমিদ আহমেদ

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আইস ড ড আরব ত আইস ড ড আরব র ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে 

বাংলাদেশে বৈদেশিক প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ১৯ দশমিক ১৩ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে দিয়ে দেশে বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন দেখা গেছে।

বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, সম্প্রতি যেসব দেশে গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, সেসব দেশে পরবর্তী এক বছরে এফডিআই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। এর মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২০২২ সালের পর এফডিআই কমেছে ১৯.৪৯ শতাংশ, চিলিতে ২০১৯ সালের পর কমেছে ১৫.৬৮ শতাংশ, সুদানে ২০২১ সালের পর ২৭.৬০ শতাংশ, ইউক্রেনে ২০১৪ সালের পর ৮১.২১ শতাংশ, মিশরে ২০১১ সালের পর ১০৭.৫৫ শতাংশ এবং ইন্দোনেশিয়ায় ১৯৯৮ সালের পর ১৫১.৪৯ শতাংশ কমেছে। এই ধারাবাহিক হ্রাসের মধ্যে বাংলাদেশে এফডিআইর ১৯.১৩ শতাংশ বৃদ্ধির চিত্র বিশেষভাবে নজরকাড়া।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গুণ হলো—শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও অর্থনীতিকে পুনরায় চালু করার অদ্ভুত ক্ষমতা। এই পরিসংখ্যান তার দারুন একটা প্রতিফলন। সাধারণত, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যায়, কিন্তু আমরা উল্টা দেখছি। সঠিক নীতি নির্ধারণ, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআরসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার আন্তরিকতা এবং প্রাইভেট সেক্টরের অদম্য স্পৃহা কারণে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা সব সময় বিনিয়োগকারীদের সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। সব সমস্যার সমাধান হয়নি, তবে সদিচ্ছার কোনো ত্রুটি ছিল না। শিগগিই সারা বছরের একটি আমলনামা (রিপোর্ট কার্ড) প্রকাশ করা হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালে বিদেশি বিনিয়োগ ছিল ৪৮৮ দশমিক ৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬৭০ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৩ সালে বিনিয়োগের পরিমাণ হয় ৯২৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলার, তবে ২০২৪ সালে কিছুটা কমে দাঁড়ায় ৬৭৬ দশমিক ৬ মিলিয়ন ডলারে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদেশি বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯২ দশমিক ৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই ধারা বজায় থাকা অত্যন্ত ইতিবাচক। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, দীর্ঘমেয়াদি নীতি সহায়তা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে আরো বড় পরিসরে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারবে বলে মনে করছেন তারা।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ