রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলায় ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। গতকাল শুক্রবার রাতে তাঁরা মামলা করতে কোতোয়ালি থানায় যান।

থানা–পুলিশ বলছে, ওই ঘটনার থানায় এজাহার দেওয়া হয়েছে। এটি অভিযোগ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান বলেন, ‘সেনপাড়ার বাসিন্দা আরিফ হোসেন জাতীয় পার্টির পক্ষে একটি এজাহার দাখিল করেছেন। পুলিশ এজাহারটি অভিযোগ হিসেবে নিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবেন।’ মামলা নিতে কোনো চাপ আাছে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এদিকে দলের চেয়ারম্যানের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে আজ শনিবার বিক্ষোভ কর্মসূচির বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে জাতীয় পার্টি।

গত বৃহস্পতিবার রাতে রংপুর নগরে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা জি এম কাদেরের বাড়ি দ্য স্কাই ভিউয়ের জানালার কাচ ভাঙচুর ও একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে। ঘটনার সময় জি এম কাদের ওই বাড়িতে ছিলেন।

জাতীয় পার্টির অভিযোগ, ‘মব সন্ত্রাস’ তৈরি করে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরা এই হামলা করেছেন। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংগঠন দুটির নেতাদের দাবি, তাঁদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ কর্মসূচিতে উল্টো জাতীয় পার্টি হামলা করেছে।

আরও পড়ুনরংপুরে জি এম কাদেরের বাড়িতে হামলা, অভিযোগ বৈষম্যবিরোধীদের বিরুদ্ধে২৯ মে ২০২৫

ওই ঘটনার এক দিন পর গতকাল শুক্রবার রাত ১০ দিকে রংপুর নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা করতে যান জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন চৌধুরী, জেলা কমিটির যুগ্ম আহবায়ক মোকাম্মেল হক চৌধুরী, জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ আলী, মহানগর ছাত্র সমাজের সভাপতি আমিনুল ইসলাম ও জেলা ছাত্র সমাজের সভাপতি আরিফুল ইসলাম।

প্রায় এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর থানা বের হয়ে জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন চৌধুরী ও জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব আরিফ আলী অভিযোগ করেন, কোতোয়ালি থানার ওসি আতাউর রহমান মামলা নিতে অপরগতা প্রকাশ করেছেন।

মিলন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। সে জন্য তাঁরা মামলা দিতে এসেছেন। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে তাঁদের দেখা গেছে, তাঁদের চিহ্নিত করে আসামির নাম দেওয়া হয়েছে।

জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, জি এম কাদের বাড়িতে হামলার ঘটনায় এজাহারে বাদী হন জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আরিফ আলী। এজাহারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহবায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদসহ ২২ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি উল্লেখ করা হয় ৫০ থেকে ৬০ জন। এজাহারে বলা হয়, সব আসামি অস্ত্রসন্ত্র প্রদর্শন করে ব্যাপক মব সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।

আরও পড়ুনজি এম কাদের ঢাকায় ফিরলে কর্মসূচি দেবে রংপুর জাপা, বৈষম্যবিরোধীদের বিক্ষোভ স্থগিত১৩ ঘণ্টা আগে

আরিফ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলার চরম অবনতির কারণে প্রশাসনের উপস্থিতিতে দ্য স্কাই ভিউ এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের কিছু অংশ যাঁরা রংপুর মহানগরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁদের নেৃতত্বে হামলা চালানো হয়েছে। আমরা বিচার চাওয়ার জন্য কোতোয়ালি থানায় উপস্থিত হয়েছি মামলার এজাহার নিয়ে। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য, আওয়ামী সরকারের আমলে যেমন দেখেছিলাম, পুলিশ প্রশাসন আওয়ামী লীগের নেতার বাইরে মামলা নেওয়া সাহস পায়নি। একই স্ট্যাইলে আওয়ামী পতনের পরও দেখতেছি, পুলিশ প্রশাসন মামলা নিতে ভয় পাচ্ছে।’

আরিফ আলী আরও বলেন, ‘ওসি মহাদয়ের কাছে মামলার এজাহার নিয়ে এসেছি। কিন্তু আমাদের এক ঘণ্টা বসিয়ে রেখে ছয় থেকে সাতবার ওপর লেভেলে ফোন করে এক ঘণ্টা পর এসে তিনি পরামর্শ দিচ্ছেন, “আমি মামলা নিতে পারব না। আপনারা কোর্টে গিয়ে মামলা করুন।”’

আজ সারা দেশে জাতীয় পার্টির বিক্ষোভ
এদিকে দলীয় চেয়ারম্যানের বাসায় হামলার প্রতিবাদে আজ সারা দেশে বিক্ষোভ মিছিল করবে জাতীয় পার্টি। গতকাল বিকেলে রাজধানীর কাকরাইলে পার্টির কার্যালয়ে সামনে সমাবেশ থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক (চুন্নু)।

জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিলন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা তিনটায় রংপুর সেন্ট্রাল রোডে জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে বিক্ষোভ মিছিল করবে জেলা ও মহানগর কমিটি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এম ক দ র র ব কর ছ ন ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

সালমানকে ১০০ কোটি, সায়ানকে ৫০ কোটি টাকা জরিমানা

আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশীপ গ্রীন জিরো কূপন বন্ড ইস্যুতে জালিয়াতির কারণে সালমান এফ রহমান ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে আজীবন নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

এছাড়া সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবন, বিএসইসির সাবেক কমিশনার শেখ সামসুদ্দিন আহমেদ ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছর নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

একইসঙ্গে সালমান এফ রহমানকে ১০০ কোটি টাকা, আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা ও ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিংকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। ৯৬৫তম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

সিটি ব্যাংকের নতুন চেয়ারম্যান হোসেন খালেদ

ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপিদের শনাক্ত করে সিআইবিতে রিপোর্ট করার নির্দেশ

বুধবার (৩০ জুলাই) বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র আবুল কালাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে।

বিএসইসি জানায়, ‘আইএফআইসি গ্যারান্টিড শ্রীপুর টাউনশিপ জিরো কুপন বন্ড’ শীর্ষক ১৫০০ কোটি টাকা অভিহিত মূল্যের ও ১০০০ কোটি টাকা ইস্যু মূল্যের বন্ড ২০২৩ সালের ৪ জুন ৮৭১তম কমিশন সভায় অনুমোদিত হয়েছিল। ওই বছরের ১২ জুলাই সেটার সম্মতিপত্র ইস্যু করা হয়েছিল। ওই বন্ডটির ইস্যুয়ার ছিল শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড, যা ওই বছরের ২ মার্চ নিবন্ধিত একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি। কোম্পানিটি নিবন্ধিত হওয়ার পরপরই ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল ওই বন্ড ইস্যুর আবেদন করেছিল। ওই কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ছিল ৫০০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ছিল ৩৩৫ কোটি টাকা, যার মধ্যে মাত্র ৪ দিনের ব্যবধানে ২৪৮ কোটি টাকার নগদ অর্থ ভূমি ক্রয় বা উন্নয়ন সংক্রান্ত কারণে উত্তোলন করা হয়েছিল, যেটি কমিশনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল।

এছাড়া ওই বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসি, অ্যাডভাইজার ও অ্যারেঞ্জার হিসেবে আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড, ট্রাস্টি হিসেবে সন্ধানী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেড, নিরীক্ষক হিসেবে এমজে আবেদীন অ্যান্ড কোং চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট দায়িত্ব পালন করেছে। আইএফআইসি ব্যাংক ওই বন্ড ইস্যু করেনি, মূলত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি শ্রীপুর টাউনশিপ লিমিটেড (এসটিএল) ওই বন্ডের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করেছে। কিন্তু বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে বন্ডের নাম হিসেবে ‘আইএফআইসি আমার বন্ড’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীকে ধারণা দেয় যে, এ বন্ড আইএফআইসি ব্যাংক ইস্যু করেছে। কিন্তু আইএফআইসি ব্যাংক ছিল মূলত বন্ডটির জামিনদার (গ্যারান্টার)। এভাবে বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করা হয়। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি কর্তৃক অনুসন্ধান ও তদন্ত পরিচালিত হয়েছে এবং এর প্রতিবেদন কমিশনে জমা হয়েছে।

এ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে কমিশন আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমানকে ১০০ কোটি ও ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে উভয়কে আজীবন অবাঞ্ছিত (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

একই সঙ্গে বিএসইসির তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামকে পুঁজিবাজারে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার এবং তৎকালীন কমিশনার ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজারে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সব ধরনের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে অ্যানফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

এছাড়া ওই বন্ড সংশ্লিষ্ট অনিয়ম ও বিধিবিধান ভঙ্গের সঙ্গে জড়িত সবার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ