সচিবালয়ে সাংবাদিক প্রবেশে বাধা দূর হোক
Published: 10th, July 2025 GMT
সরকারের কাছে অতি সংবেদনশীল স্থান বিবেচিত হওয়ায় সাংবাদিকদের বাংলাদেশ সচিবালয়ে প্রবেশ করতে হয় তথ্য অধিদপ্তরের দেওয়া প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড নিয়ে। কিন্তু সেই সুযোগও এখন প্রায় বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
প্রথম আলোর খবর থেকে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দিয়ে সচিবালয়ে ঢোকার অনুমতি বাতিল করা হয়। বিষয়টি নিয়ে দেশে-বিদেশে সমালোচনার পর অস্থায়ী তালিকা অনুযায়ী সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয়। বর্তমানে ৬১৫ সাংবাদিকের তালিকা করা হয়েছে, যাঁরা সচিবালয়ে প্রবেশ করার অনুমতি পাচ্ছেন। অন্যরা কার্ড থাকলেও সচিবালয়ে প্রবেশ করতে পারছেন না। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেড় শতাধিক সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়। এসব কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিকেরা প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। অনেক সময় জরুরি তথ্য যাচাই করতেও তাঁরা সেখানে যেতে পারছেন না। বিষয়টি যে সরকারের নীতিনির্ধারকদের অজানা, তা–ও নয়। সভা–সেমিনারে তাঁরা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড সমস্যার দ্রুত সমাধান করার কথা বললেও বাস্তবে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
ঢালাওভাবে প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিলকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য হুমকি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিতের অন্তরায় বলে প্রতিবাদ জানিয়েছে সম্পাদক পরিষদ। এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্রের মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশসহ (নোয়াব) সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে)।
সরকার গত বছর তিন দফায় ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করে। ওই সময় বলা হয়েছিল, এটা সাময়িক ও যাচাই–বাছাই করার পর কার্ড দেওয়া হবে। এরপর গত বছরের ডিসেম্বরে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পিআইডি যেসব সাংবাদিকের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করেছে, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে। কোনো পেশাদার সাংবাদিক তাঁর কার্ড বাতিলের বিষয়টি ন্যায়সংগত মনে না করলে তিনি লিখিতভাবে জানাতে পারবেন। এটা কেমন কথা? সরকার তথ্যপ্রমাণ ছাড়া সাংবাদিকদের ‘শাস্তি’ দিয়ে এখন বলছে, তাঁদেরই নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে হবে।
প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা, ২০২২ পুনর্মূল্যায়নের জন্য সরকার গত জানুয়ারিতে কমিটি গঠন করে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী নতুন প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন নীতিমালা জারিও করা হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে জারি করা এ নীতিমালা অনুযায়ী, গণমাধ্যমের সম্পাদক, নির্বাহী সম্পাদক, উপসম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, বিভাগীয় সম্পাদক, প্রতিবেদক, আলোকচিত্রী ও ভিডিওগ্রাফারের মোট সংখ্যার আনুপাতিক হারে কার্ড দেওয়ার কথা আছে। একক কোনো প্রতিষ্ঠান ১৫টি বা সেখানে কর্মরত সাংবাদিকদের ৩০ শতাংশের বেশি কার্ড পাবেন না।
ফেব্রুয়ারিতে নীতিমালার ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত কোনো কমিটি গঠন করা হয়নি, যারা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যুর ব্যবস্থা করবে। তথ্য অধিদপ্তর থেকে কমিটির প্রস্তাব পাঠানো হলেও মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিতে দেরি করার কারণ কী? প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সরকারের একটি অংশ চাইছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেওয়া নিরাপত্তা পাসের মাধ্যমে সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশের ব্যবস্থা করতে। অর্থাৎ সাংবাদিকদের সচিবালয়ে প্রবেশ করা, না করার বিষয়টিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে চলে যাবে। এখানে তথ্য মন্ত্রণালয়ের কোনো এখতিয়ার থাকবে না?
গত ২৬ জুন এক অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা ভুল ছিল বলে মন্তব্য করেছেন। এই ভুলটা কারা করলেন, কেন করলেন, সেই তথ্য জানার অধিকার নিশ্চয়ই সাংবাদিক তথা দেশবাসীর আছে। একই সঙ্গে তিনি সবাইকে খুব দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড দেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন। প্রশ্ন হলো, সেই দ্রুত সময়টা কবে আসবে? সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশের বাধা দ্রুত অপসারিত হোক।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সরক র র অন য য় ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
বগুড়ায় বাড়িতে হাতবোমা তৈরির সময় বিস্ফোরণ, আহত একজন গ্রেপ্তার
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার একটি বাড়িতে হাতবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার মশিপুর ইউনিয়নের ছোট ইতালি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
বিস্ফোরণে আতাউর রহমান (৩৫) নামের একজন গুরুতর আহত হন। তাঁকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আতাউর কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার রামপ্রসাদের চর গ্রামের বাসিন্দা। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।।
গতকালের ওই ঘটনার পরপরই ছোট ইতালি গ্রামের বিস্ফোরণস্থল ঘিরে ফেলেন সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যরা। উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি তাজা হাতবোমা। বোম ডিসপোজাল ইউনিটের সদস্যরা এসে উদ্ধার হওয়া হাতবোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করেন। পরে বাড়িটি সিলগালা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কয়েক দিন আগে আতাউর রহমানসহ কুমিল্লা থেকে আসা চার ব্যক্তি ছোট ইতালি গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী মুক্তার হোসেনের বাড়িতে ওঠেন। মুক্তারের স্ত্রী নাছিমা আক্তার (৪৫) মাদকের মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে মুক্তারের বাড়ির ভেতরে একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণ ঘটে। এতে আশপাশের লোকজন আতঙ্কিত হন। পরে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করে রক্তাক্ত অবস্থায় আতাউর রহমানকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশকে খবর দেওয়ার পর মুক্তার হোসেনের তিন সহযোগী দ্রুত পালিয়ে যান। স্থানীয় লোকজন আহত আতাউরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেরাজুল হক বলেন, ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত হাতবোমা ও কিছু বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে। বাগবাড়ি তদন্তকেন্দ্রের উপপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল সাদিক বাদী হয়ে বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনার সঙ্গে আগামী নির্বাচনে নাশকতার পরিকল্পনার যোগসূত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।