ভারতের বাজারে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধা চায় আদানি
Published: 10th, July 2025 GMT
শীতে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতের খোলাবাজারে বিক্রি করতে চায় আদানি পাওয়ার। এ জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুমোদন চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পিডিবি বলছে, তারা আদানির প্রস্তাবে রাজি হবে, যদি কোম্পানিটি কয়লার দাম কমায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হলেও সুরাহা হয়নি। পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, সিদ্ধান্ত জানানোর মতো পর্যায়ে বিষয়টি এখনও পৌঁছেনি। আলোচনা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। চুক্তি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাণিজ্যিক লেনদেনও কমে আসে। এ পরিস্থিতিতে গত আগস্টে অন্য দেশে রপ্তানির জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেও বিক্রির সুযোগ রেখে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন করে দেশটির সরকার।
বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন নথিতে উল্লেখ করা হয়, শুধু একটি প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রণীত ২০১৮ সালের ওই নির্দেশিকায় সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হলে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে আরও বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ বা আংশিক উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার না হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধার্থে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ভারতীয় গ্রিডে যুক্ত করার অনুমোদন দিতে পারবে ভারত সরকার।
আদানি পাওয়ার তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি স্থানীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে। তবে এই নির্দিষ্ট লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে পিডিবির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কারণ বাংলাদেশে শতভাগ রপ্তানির জন্য আদানি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি নির্মাণ করেছে।
সম্প্রতি আদানি শীতকালে বাংলাদেশের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নিজ দেশের খোলাবাজারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। পিডিবি বলছে, আদানিকে যদি এই অনুমোদন নিতে হয়, তাহলে কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব মানতে হবে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৮ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে।
পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, শীতকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। যে কারণে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির আলোচনা চলছে। একই কারণে আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চাহিদাও কমে যায়। বিদ্যুৎ না কিনলেও ক্যাপাসিটি পেমেন্ট ঠিকই দিতে হয়। এ জন্য আদানি বাড়তি বিদ্যুৎ অন্য কোথাও বিক্রি করলে তার লাভ, বাংলাদেশেরও লাভ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, পিডিবি ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্সকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের সব কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের কয়লা এই ইনডেক্স অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে। আর আদানি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক ইনডেক্সের গড় করে কয়লার দর নির্ধারণ করে। ফলে টনপ্রতি কয়লার দাম ১০ থেকে ১২ ডলার বেড়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করে পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। পায়রা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দামে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়, যার সুবিধা প্রকৃতপক্ষে পিডিবি ভোগ করে। রামপালও বছরজুড়ে কয়লা কেনার সময় ছাড়ের শর্তেই চুক্তি করে। আদানি নিজের খনির কয়লা সরবরাহ করে। চুক্তিতে ছাড়ের বিষয়টি নেই। ফলে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিটি। ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, এ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কয়ল র দ ম সরবর হ র জন য ব যবহ উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ধামাকা শপিংয়ের কাছে পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি ভুক্তভোগীদের
ই–কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিং ডটকমের কাছে পাওনা ৪০০ কোটি টাকা ফেরতের দাবি জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পণ্য সরবরাহকারী ভুক্তভোগী বিক্রেতা ও গ্রাহকেরা। একই সঙ্গে এ বিষয়ে বর্তমান সরকারকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়ারও দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।
আজ বুধবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির শফিকুল কবির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এ দাবি জানানো হয়। ‘ধামাকা শপিং ডটকমের ভুক্তভোগী, প্রতারিত ব্যবসায়ী ও ভোক্তাগণ’ ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে শতাধিক ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী ও গ্রাহক উপস্থিত ছিলেন।
ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে জাহিদুল ইসলাম সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি বলেন, ধামাকা শপিং ডটকম শুরুতে ২০০ কোটি টাকার মূলধন নিয়ে ব্যবসা করার ঘোষণা দেয়। তাদের মাইক্রো ট্রেডসহ অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আছে বলে জানায়। এ কারণে বিশ্বাস করে তাদের পণ্য সরবরাহ করতে ব্যবসায়ীরা আগ্রহী হন। পণ্য নিয়ে তাঁরা চেকের মাধ্যমে টাকা পরিশোধ করতেন। ২০২১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত লেনদেন ঠিক ছিল। পরে আরও কয়েক মাস পণ্য সরবরাহ করলেও তারা আর কোনো টাকা দেয়নি।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আনুমানিক ৫০ জন উদ্যোক্তা ও ৩ হাজার ভোক্তা প্রতিষ্ঠানটির কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা আছে। টাকা পরিশোধে বিভিন্ন সময়ে ব্যবসায়ী ও ভুক্তভোগীদের শতাধিক চেক দিলেও তা ডিজঅনার হয়। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে। প্রতারণার মামলা করেছি, কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। আমরা সরকারের কাছে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।’
পাওনা টাকা না পেয়ে দুর্বিষহ দিন কাটানোর কথা জানিয়ে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘টাকা না পেয়ে আমরা অসহায় অবস্থায় আছি। অনেকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই বড় ব্যবসা বন্ধ করে ছোট আকারে কোনো রকম টিকে আছে। প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে হাজার হাজার তরুণ নিঃস্ব হয়ে গেছে। তরুণ থেকে বৃদ্ধ হয়ে গেছি, কিন্তু টাকা উদ্ধার করতে পারিনি। প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। একই সঙ্গে আমাদের পাওনা টাকা ফেরত পেতে সরকারকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করছি।’
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা না পেয়ে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কয়েক শ মামলা হয়েছে। চার বছর ধরে এ মামলা চলছে। মামলা চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ধামাকা শপিংয়ের মালিকদের বাংলাদেশে যে সম্পদ আছে, তা দিয়ে অনায়াসে তাঁরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে পারেন, কিন্তু তাঁরা সেটি করছেন না। এ কারণে সরকারকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা।
জাহিদুল ইসলাম আরও বলেন, টাকা ফেরত দিতে না পেরে চেয়ারম্যান মো. মুজতবা আলী দাবি করছেন, তিনি ধামাকা শপিং ডটকমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। অথচ তিনি বিভিন্ন সময়ে চেয়ারম্যান পরিচয়ে বৈঠক করেছেন। এ ছাড়া সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিকে প্রধান অতিথি করে ই-কমার্স নিয়ে একটি গোলটেবিল বৈঠকে তিনি ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান পরিচয়ে সভাপতিত্ব করেন। অথচ এখন তিনি ওই পরিচয় অস্বীকার করছেন।
জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘উচ্চ আদালত আমাদের ন্যায্য পাওনা ফেরত পেতে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান মো. মুজতবা আলীর বিষয়ে উপযুক্ত রায় গ্রহণ করবেন, সেই আবেদন জানাচ্ছি। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের পাওনা ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি গ্রাহকদের পণ্য সরবরাহ করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে ফিরিয়ে এনে টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি।’
পাইকারি বিক্রেতা মেহেদী হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে আমাদের অনেকগুলো চেক দেওয়া হয়, কিন্তু চেকগুলো কাজ করেনি। পরে ধাপে ধাপে টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হলেও পাঁচ বছর ধরে তা পাইনি। আমরা অসহায় হয়ে গেছি।’
গ্রাহক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ধামাকা ই–কমার্সে আমি একটা বাইক অর্ডার দিয়েছিলাম। বাইক সরবরাহ করতে পারেনি। বিনিময়ে তারা একটা চেক দেয়। ওই চেকে টাকা তুলতে পারিনি। তারপর অনেক ঘোরাঘুরি করেছি। টাকা ফেরত পাইনি। হঠাৎ একদিন দেখি, তাদের অফিস বন্ধ করে দিয়েছে।’
আরও পড়ুনধামাকা শপিংয়ের চেয়ারম্যানকে ভাটারা থানায় সোপর্দ০৫ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনধামাকা শপিংয়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামের ৬২ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক করেছে সিআইডি২৬ জুন ২০২৫