শীতে ঝাড়খণ্ডের বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতের খোলাবাজারে বিক্রি করতে চায় আদানি পাওয়ার। এ জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অনুমোদন চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। পিডিবি বলছে, তারা আদানির প্রস্তাবে রাজি হবে, যদি কোম্পানিটি কয়লার দাম কমায়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। 

আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার দাম নিয়ে পিডিবির সঙ্গে বিরোধ রয়েছে। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বারবার আলোচনা হলেও সুরাহা হয়নি। পিডিবি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, সিদ্ধান্ত জানানোর মতো পর্যায়ে বিষয়টি এখনও পৌঁছেনি। আলোচনা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে। চুক্তি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। 
গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয়। বাণিজ্যিক লেনদেনও কমে আসে। এ পরিস্থিতিতে গত আগস্টে অন্য দেশে রপ্তানির জন্য উৎপাদিত বিদ্যুৎ ভারতেও বিক্রির সুযোগ রেখে বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন করে দেশটির সরকার। 

বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধি সংশোধন নথিতে উল্লেখ করা হয়, শুধু একটি প্রতিবেশী দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রণীত ২০১৮ সালের ওই নির্দেশিকায় সংশোধনী আনা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশে রাজনৈতিক ঝুঁকি তৈরি হলে আর্থিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পাবে প্রতিষ্ঠানটি। এতে আরও বলা হয়, ধারাবাহিকভাবে পূর্ণ বা আংশিক উৎপাদন সক্ষমতার ব্যবহার না হওয়ার মতো পরিস্থিতি দেখা দিলে বিদ্যুৎ বিক্রির সুবিধার্থে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইন ভারতীয় গ্রিডে যুক্ত করার অনুমোদন দিতে পারবে ভারত সরকার। 

আদানি পাওয়ার তাদের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য একটি স্থানীয় সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করেছে। তবে এই নির্দিষ্ট লাইনের মাধ্যমে ভারতীয় বাজারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হলে পিডিবির অনুমোদন প্রয়োজন হবে। কারণ বাংলাদেশে শতভাগ রপ্তানির জন্য আদানি ১ হাজার ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রেটি নির্মাণ করেছে। 

সম্প্রতি আদানি শীতকালে বাংলাদেশের চাহিদার অতিরিক্ত বিদ্যুৎ নিজ দেশের খোলাবাজারে বিক্রির প্রস্তাব দিয়েছে। পিডিবি বলছে, আদানিকে যদি এই অনুমোদন নিতে হয়, তাহলে কয়লার দাম কমানোর প্রস্তাব মানতে হবে। পিডিবির তথ্য অনুযায়ী, শীতকালে বিদ্যুতের চাহিদা ৬ থেকে ৮ হাজার মেগাওয়াটে নেমে আসে। 

পি‌ডি‌বির এক কর্মকর্তা জানান, শীতকালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। দেশে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। যে কারণে শীতকালে বাংলাদেশ থেকে নেপালে বিদ্যুৎ রপ্তানির আলোচনা চলছে। একই কারণে আদানি থেকে বিদ্যুৎ আমদানির চাহিদাও কমে যায়। বিদ্যুৎ না কিন‌লেও ক্যাপা‌সি‌টি পে‌মেন্ট ঠিকই দি‌তে হয়। এ জন্য আদা‌নি বাড়‌তি বিদ্যুৎ অন্য কোথাও বি‌ক্রি কর‌লে তার লাভ, বাংলা‌দ‌েশেরও লাভ। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, পিডিবি ইন্দোনেশিয়ান কোল ইনডেক্সকে মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহার করে। বাংলাদেশের সব কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রের কয়লা এই ইনডেক্স অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করে। আর আদানি অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক ইনডেক্সের গড় করে কয়লার দর নির্ধারণ করে। ফলে টনপ্রতি কয়লার দাম ১০ থেকে ১২ ডলার বেড়ে যায়। 

নাম প্রকাশ না করে পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিতে কয়লা কেনায় ছাড়ের বিষয়টি রয়েছে। পায়রা ইন্দোনেশিয়া থেকে কয়লা কেনার দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে দামে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় পায়, যার সুবিধা প্রকৃতপক্ষে পিডিবি ভোগ করে। রামপালও বছরজুড়ে কয়লা কেনার সময় ছাড়ের শর্তেই চুক্তি করে। আদানি নিজের খনির কয়লা সরবরাহ করে। চুক্তিতে ছাড়ের বিষয়টি নেই। ফলে কয়লার দাম বেশি নিচ্ছে ভারতীয় কোম্পানিটি। ২০১৭ সালে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তি করে পিডিবি। চুক্তি অনুযায়ী, এ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছর বিদ্যুৎ কেনা হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কয়ল র দ ম সরবর হ র জন য ব যবহ উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

পিস্তল ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন সাবেক এমপি শিমুলের বেয়াই

পাওনাদারকে টাকা না দিতে নাটোরের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম শিমুলের এক আত্মীয় ব্যবসায়ীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মাহিদুর রহমান মঙ্গলবার (৮ জুলাই) সকালে রাজশাহী নগরের বর্ণালী মোড় এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন। 

মাহিদুরের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার সোনামসজিদে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স নয়ন এন্টারপ্রাইজ। সোনামসজিদ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে পাথর আমদানি করে ঠিকাদারদের কাছে সরবরাহ করতেন মাহিদুর। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘‘মীর হাবিবুল আলম বখতিয়ার নামে এক ঠিকাদার পাথর নিয়ে তাকে প্রায় ৪ কোটি টাকা দিচ্ছেন না। বখতিয়ার সম্পর্কে সাবেক এমপি শিমুলের বেয়াই।’’

সংবাদ সম্মেলনে মাহিদুর রহমান জানান, বখতিয়ারকে তিনি ১৯ কোটি ৩৪ লাখ ১২ হাজার ৩৭৯ টাকার পাথর সরবরাহ করেন। লেনদেনের একপর্যায়ে তিনি ৭ কোটি ৩৫ লাখ ৮৪ হাজার ৭৭৪ টাকা বকেয়া রেখে দেন এবং নানা অজুহাতে ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে টাকা পরিশোধে গড়িমসি শুরু করেন। বর্তমানে তার কাছে বকেয়া পাওনা ৩ কোটি ৯৫ লাখ ১২ হাজার ৩৭৯ টাকা।’’

মাহিদুর রহমানের দাবি, আওয়ামী সরকারের আমলে বখতিয়ার তাকে টাকা দেওয়ার নামে নাটোরে তার কার্যালয়ে ডেকে নেন। এরপর তাকে পিস্তলের মুখে জিম্মি করা হয়। তারপর তিন-চারজন মিলে তাকে একটি সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হয়। মাহিদুর সাধারণত যে স্বাক্ষর দেন, তা না দিয়ে শুধু নিজের নাম লিখে সেদিন প্রাণ নিয়ে ফিরে আসেন। পরে ওই স্ট্যাম্পে লেখা হয়, মাহিদুর তার সব পাওনা বুঝে পেয়েছেন। 

মাহিদুর জানান, ওই ঘটনার পরও তিনি টাকার জন্য মোবাইলে বখতিয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি টাকা দেননি। মামলা করলে টাকা আদায়ে বিলম্ব হবে, তাই মামলা না করে তিনি আপসে টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু তার সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। 

বাধ্য হয়ে সম্প্রতি তিনি সেনাবাহিনী, রাজপাড়া থানা ও সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাজশাহী অঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর কাছে অভিযোগ করেন। কিন্তু প্রতিকার পাননি।  এতে তিনি বিপদে আছেন। 

বখতিয়ারকে ধরিয়ে দিতে পারলে মাহিদুর এক লাখ টাকা পুরষ্কার দেবেন বলে জানান। 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাহিদুরের স্ত্রী ময়েদা বেগম ও ভাগনে জিল্লুর রহমান। 

 

কেয়া//

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে
  • গ্যাস সংকটে উৎপাদন বন্ধ ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে
  • বৃষ্টিতে বাড়ল মাছ ও সবজির দাম
  • চীন ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে
  • নিজেদের তৈরি রোবট নিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে নবম শ্রেণির তিন ছাত্র
  • মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে ভারত বন্‌ধ্‌ চলছে
  • ‘চোখের পলকে ঘরটি নদীতে ভেঙে পড়ল, এক কাপড়ে বের হয়েছি’
  • অস্ত্র ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন এমপি শিমুলের বেয়াই
  • পিস্তল ঠেকিয়ে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন সাবেক এমপি শিমুলের বেয়াই