‘কথা নেই, বার্তা নেই শিল্পীদের হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়’
Published: 31st, May 2025 GMT
ছোটপর্দার অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন ‘অভিনয় শিল্পী সংঘ বাংলাদেশ’-এর আয়োজনে ‘অ্যাক্টর’স ফ্যামিলি ডে ও অভিষেক-২০২৫’ পরিণত হলো শিল্পীদের মিলনমেলায়।
শনিবার রাজধানীর পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স মিলনায়তনে এই আয়োজনে যোগ দেন দেশের নবীন ও প্রবীণ শিল্পী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা।
আয়োজনের মূল আকর্ষণ হয়ে ওঠেন অভিনেতা ও নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত। নিজের বক্তব্যে তিনি যেমন সংগঠনের প্রয়োজনিয়তা ব্যাখ্যা করেছেন, তেমনই বর্তমান সময়ের সামাজিক ও আইনি প্রেক্ষাপটে শিল্পীদের অসহায়তার কথাও অকপটে তুলে ধরেন।
আবুল হায়াত বলেন, “নতুন কিছু উদ্ভাবন করতে হবে, শিল্পীদের কল্যাণে কাজ করতে হবে। নবীনরা শিখবে, প্রবীণরা অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করবেন— এই পারস্পরিক সম্পর্কই আমাদের এক করে রাখতে পারে। ছোট–বড় নয়, আমরা সবাই এক পরিবারের, এক মঞ্চের শিল্পী— এই উপলব্ধি গড়ে তুলতে হবে।”
আইনি সুরক্ষা প্রশ্নে কড়া অবস্থান প্রবীণ এই অভিনেতার। সম্প্রতি বিভিন্ন শিল্পীর বিরুদ্ধে মামলা এবং গ্রেপ্তারের ঘটনা প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, “কথা নেই, বার্তা নেই শিল্পীদের হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বলা হয়, এক হাজার আসামির একজন, যেন সে মানুষ খুন করেছে! তাকে সঙ্গে সঙ্গে রিমান্ডে পাঠানো হয়। এটা খুবই অন্যায়। অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচার হোক, কিন্তু এই অপমানজনক প্রক্রিয়া বন্ধ করতে হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, “সংগঠনের আইনি পরামর্শ ও সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করতে হবে। ‘একটা সংবাদমাধ্যম থেকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি কী ফিল করছেন, অমুক শিল্পীকে ধরে নিয়ে গেছে?’ আমি বলেছি, ফিলিংয়ের কিছু নেই। অপরাধ থাকলে তদন্ত হবে, না থাকলে এটা অন্যায়, ন্যক্কারজনক।”
সংগঠন কেন গড়ে উঠল, সেই ইতিহাস অভিনয় শিল্পী সংঘের জন্মলগ্নের কথা তুলে ধরে আবুল হায়াত বলেন, “এক সময় প্রযোজক, টেলিভিশন আমাদের পেটে লাথি মেরে কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক দিত না। শত পর্বের নাটক শেষ হয়ে যেত, শিল্পী, মেকআপ আর্টিস্ট কেউ টাকা পেত না। তখনই আমাদের প্ল্যাটফর্ম দরকার হয়ে পড়ে।”
তিনি যোগ করেন, “তবে সংগঠনের উদ্দেশ্য শুধু সুরক্ষা নয়, নাট্যশিল্পের উৎকর্ষ সাধন ও শিল্পীর মানোন্নয়নও আমাদের লক্ষ্য।”
নবীনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা যদি ভাবেন, সব জেনে এসেছেন, তাহলে সেটা ভুল ধারণা। সিনিয়রদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলুন, আড্ডায় থাকুন, শুনুন, শেখার আগ্রহ রাখুন।”
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, “আমি এই বয়সে এসেও আমার গুরুরা— সৈয়দ হাসান ইমাম, গোলাম মোস্তফা, সিরাজুল ইসলাম, মাসুদ আলী খান, আবুল খায়েরকে স্মরণ করি। কারণ তাঁদের সান্নিধ্য থেকে আমি শিখেছি। এখন কাউকে কিছু বলতে গেলে ভয় হয়, অপমানিত হতে পারি।”
এই আয়োজন যেন শুধু ফ্যামিলি ডেতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং হয়ে উঠেছিল শিল্পী-সম্পর্ক, সম্মান এবং সংগঠনের প্রয়োজনিয়তা নিয়ে গভীর আত্মানুসন্ধানের এক মুহূর্ত।
ঢাকা/রাহাত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স গঠন র আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী
অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।
ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।