বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে আজ রোববারও নগর ভবন চত্বরে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন তাঁর সমর্থকেরা।

‘ঢাকাবাসী’ ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন স্তরের কর্মচারী ও দক্ষিণ সিটির বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা সাধারণ মানুষ। তাঁরা বলছেন, জনগণের রায়ে নির্বাচিত মেয়রের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে হবে—এটাই তাঁদের একমাত্র দাবি।

বিক্ষোভকারীরা বলছেন, ‘রায়ও এসেছে, রিটও খারিজ, আর কিসের জন্য অপেক্ষা? সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে দায়িত্ব দিচ্ছে না।’

নগর ভবনের মূল ভবনে প্রবেশের সব ফটকে গত ১৫ মে থেকে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এর ফলে করপোরেশনের সব ধরনের সেবামূলক কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে।

জন্মনিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স, হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধসহ নাগরিকদের নিয়মিত কাজগুলো ব্যাহত হচ্ছে। সিটি করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী অঘোষিত ছুটিতে চলে গেছেন।

ডিএসসিসির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অবস্থানের কারণে কার্যত দপ্তরগুলোয় কেউ ঢুকছে না। অফিসের পরিবেশ নেই। যে যার মতো দূরে সরে আছে।’

ইশরাক হোসেনকে ঢাকার দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ঘোষণার পরই বিষয়টি আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। একটি পক্ষ উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করে। তবে হাইকোর্ট সেই রিট খারিজ করে দেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লাভ হোক লোকসান হোক কর দিতেই হবে, হার আরও বাড়ল

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের লাভ–লোকসান যা–ই হোক, কর দিতে হবে। সেই করের হার আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

নতুন অর্থবছরের অর্থবিলে বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের টার্নওভার ট্যাক্স বা লেনদেন কর হবে ১ শতাংশ, যা এখন শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ। লেনদেন করের মানে হলো কোনো প্রতিষ্ঠান পণ্য ও সেবা বিক্রি করে যদি ১০০ টাকা আয় করে, তার ওপর লাভ ও লোকসান–নির্বিশেষে ১ টাকা কর নেবে সরকার।

সাধারণভাবে ১০০ টাকার বিপরীতে ১ টাকাকে কম মনে হতে পারে। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, মূল্য সংযোজন কর (মূসক/ভ্যাট) ও অন্যান্য করের বাইরে সরকার এই ১ শতাংশ অর্থ নেবে আয়কর হিসেবে। বছর শেষে কোম্পানি যদি লোকসানে থাকে, তাহলেও এই কর দিতে হবে। যদিও এবারের বাজেটে আদায় করা কর–পরবর্তী বছরগুলোর সঙ্গে সমন্বয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে।

ধরা যাক, একটি কোম্পানি ১০০ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। তাহলে তাকে লেনদেন কর দিতে হবে ১ কোটি টাকা; কিন্তু বছর শেষে দেখা গেল পণ্য বিক্রি করে কোম্পানিটি ১০ কোটি টাকা লোকসান করেছে। তাহলে তার ওপর কোনো করপোরেট কর বা আয়কর প্রযোজ্য হবে না। তবু তার কাছ থেকে সরকার ১ কোটি টাকা নেবে, যেটিকে লেনদেন কর বলা হলেও তা মূলত করপোরেট কর।

এ ধরনের কর বেশি প্রভাব ফেলে লোকসানে থাকা কোম্পানির ওপর। যারা অনেক টাকা মুনাফা করে, তাদের ওপর এটি তেমন একটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে না। কারণ, তাদের লেনদেন করের চেয়ে বছর শেষে আয়করের পরিমাণ বেশি হয়। ফলে তারা লেনদেন কর বাবদ দেওয়া টাকা বাদ দিয়ে বাকি টাকা সরকারকে দিতে পারে।

দেশে অনেক বছর ধরেই লেনদেন কর রয়েছে। ব্যবসায়ীরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। বিশেষ করে টেলিযোগাযোগ খাতের কোম্পানি এটি প্রত্যাহার অথবা কমানোর দাবি করে আসছিল। তাদের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে অবশ্য এই করহার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে দেড় শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের উৎপাদক ও বিক্রেতা এবং কোমলপানীয় উৎপাদনকারীদের ওপর আগের মতোই ৩ শতাংশ রাখা হয়েছে।

বাড়ানো হয়েছে এর বাইরে থাকা কোম্পানির ক্ষেত্রে। তাদের মোট বিক্রির ওপর ১ শতাংশ কর দিতে হবে। নতুন বাজেটে সাধারণ কোম্পানির ক্ষেত্রে করপোরেট কর ধরা হয়েছে সাড়ে ২৭ শতাংশ (ব্যাংকে লেনদেন বেশি করার শর্তে ২৫ শতাংশ)। এই করপোরেট করের সঙ্গে লেনদেন কর সমন্বয় হয়।

অর্থবিলে বলা হয়েছে, তামাক, টেলিযোগাযোগ ও পানীয় কোম্পানির বাইরে নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর প্রথম তিন বছর লেনদেন কর হবে শূন্য দশমিক ১ শতাংশ।

কর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএমএসি অ্যাডভাইজরি সার্ভিসেস লিমিটেডের পরিচালক স্নেহাশীষ বড়ুয়া প্রথম আলোকে বলেন, ১ শতাংশ লেনদেন কর লোকসানে থাকা এবং লাভ–লোকসান সমান থাকা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি বড় ধাক্কা। এর ফলে কিছু কোম্পানির ক্ষেত্রে তাদের মূলধন থেকে কর পরিশোধ করতে হবে। এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী করনীতি কর ফাঁকিকে উৎসাহিত করে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় কর আইনকানুন মেনে চলা কোম্পানি।

স্নেহাশীষ বড়ুয়া আরও বলেন, ব্যক্তিবিশেষের জন্য এটি একটি বড় আঘাত। সে ক্ষেত্রে করহার শূন্য দশমিক ২৫ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে।

করপোরেট কর কী দাঁড়াল

অর্থ উপদেষ্টা বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ২০২৫–২৬ করবর্ষে পুঁজিবাজারে অনিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে সাধারণ করপোরেট কর হবে সাড়ে ২৭ শতাংশ। তবে একক লেনদেনে ৫ লাখ টাকার বেশি এবং বার্ষিক মোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সব লেনদেন ব্যাংকব্যবস্থার মাধ্যমে করলে ওই কোম্পানি ২৫ শতাংশ হারে কর দিতে পারবে। ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষেও করপোরেট করের হার সাড়ে ২৭ শতাংশ হবে।

পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানিকে ২০২৫–২৬ করবর্ষে সাড়ে ২২ শতাংশ কর দিতে হবে। এই হার ২০ শতাংশ হবে, যদি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সীমার বাইরে লেনদেন ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে করে। ২০২৬–২৭ ও ২০২৭–২৮ করবর্ষে পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত কোম্পানির ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ করসুবিধা পেতে হলে সব লেনদেন ব্যাংক–ব্যবস্থার মাধ্যমে করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ