ঢাকার সাভার উপজেলার হেমায়েতপুর এলাকায় বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বসুন্ধরা গার্মেন্টস লিমিটেড নামের একটি তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকেরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নেন।

প্রায় দেড় ঘণ্টা পর কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ও জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয় পুলিশ।

কারখানার শ্রমিকেরা জানান, কারখানা কর্তৃপক্ষ গত ১৭ মে এক নোটিশের মাধ্যমে ১৮ থেকে ৩১ মে কারখানা লে-অফ ঘোষণা করে। এ ছাড়া ওই নোটিশে শ্রমিকদের এপ্রিল মাসের বকেয়া বেতন ২৫ মে পরিশোধ করা হবে বলে জানানো হয়। ওই দিন দুপুরে শ্রমিকেরা বকেয়া বেতন নিতে কারখানায় উপস্থিত হন। কারখানায় এসে তাঁরা মালিকপক্ষ বা কর্মকর্তারা কারখানায় আসেননি বলে জানতে পারেন। পরে ক্ষুব্ধ হয়ে শ্রমিকেরা বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কারখানাসংলগ্ন হেমায়েতপুর-সিঙ্গাইর আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে কারখানা কর্তৃপক্ষের ২৯ তারিখে বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে বলে জানান। তবে ওই দিন বকেয়া পরিশোধ করেনি কারখানা কর্তৃপক্ষ।

পরে গতকাল রোববার বকেয়া বেতন পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আজ সকাল ৯টার দিকে শ্রমিকেরা বকেয়া পরিশোধের দাবিতে হেমায়েতপুর এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে সেখানে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত হন। একপর্যায়ে জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে, কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ ও লাঠিপেটা করে সড়ক থেকে শ্রমিকদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কারখানার এক শ্রমিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মালিকপক্ষ আমাদের দুই মাসের বকেয়া বেতন দিচ্ছে না। সেনাবাহিনী কয়েকবার মালিককে কারখানায় এনে বেতন দেওয়ার তারিখ জানিয়েছিল। কিন্ত ওই তারিখে বেতন দেয় নাই। সামনে ঈদ, বেতন–বোনাস না পেলে বাড়ি যাব কীভাবে?’

এ বিষয়ে জানতে কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শহিদুল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া ‍যায়।

আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১–এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকেরা মহাসড়ক অবরোধ করেছিলেন। সামনে ঈদ, এই সময়ে শ্রমিকদের বেতনের বিষয়টি যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ঈদকে সামনে রেখে মহাসড়ক দিয়ে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে সরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে ও জলকামান ব্যবহার করে সড়কে থেকে তাঁদের সরিয়ে দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর শ ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা

কদিন ধরে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আড্ডায় ঘুরেফিরে একটাই নাম জিনাত ফেরদৌস। যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী এই বক্সার প্রথমবারের মতো পা রেখেছেন জাতীয় বক্সিং রিংয়ে। আর প্রথমবারই নিজের জাত চেনালেন।

আজ বিকেলে পল্টনের মোহাম্মদ আলী বক্সিং স্টেডিয়ামে ৫২ কেজি ওজন শ্রেণির ফাইনালে নেমে প্রতিপক্ষ আফরা খন্দকারকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তুলেছেন জিনাত। প্রতিযোগিতার আগেই যাঁর আগমন ঘিরে কৌতূহল ছিল তুঙ্গে, সেই জিনাত রিংয়ে নামতেই যেন বুঝিয়ে দিলেন, অন্যদের চেয়ে কেন তিনি এগিয়ে।

তিন রাউন্ডের লড়াইয়ে শুরু থেকেই জিনাত ছিলেন আক্রমণাত্মক। পাঞ্চে ছিল গতি, রক্ষণে ছিল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে আফরা খন্দকার চেষ্টা করেছেন রক্ষণ সামলে লড়াইয়ে টিকে থাকতে। খান কয়েক মোক্ষম ঘুষিতে কিছুটা নড়বড়ে হলেও শেষ পর্যন্ত দমে যাননি আফরা।

বরং জিনাতের ঘন ঘন আক্রমণের ফাঁক গলে এক-আধটু পাল্টা আঘাত করতেও পেরেছেন। তবে এই পর্যায়ের এক প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত হয়ে পড়ে তাঁর জন্য অনেকটাই চাপের। তবু আফরা লড়ে গেছেন। আর জিনাতের আত্মবিশ্বাসী উপস্থিতি এ লড়াইকে করে তুলেছিল দেখার মতো।

গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক ও আফরার বড় বোন আফঈদা খন্দকার। উৎসাহ দিচ্ছিলেন ছোট বোনকে। পাশে ছিলেন মা–বাবাও। তবে পরিবারের ষোলো আনা সমর্থনও জিনাতকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ হয়নি।

ম্যাচ শেষে আফরা বললেন, ‘তিনি একজন ভালো খেলোয়াড়। তাঁর বিপক্ষে খেলা আমার জন্য এক নতুন অভিজ্ঞতা। বিশেষ করে তাঁর আক্রমণাত্মক স্কিলটা দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, গুড ফাইট।’

বিজয়ী জিনাত পরে কথা বলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বললেন, ‘আমি সবাইকে বলতে চাই, বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েরা খেলতে চায়। তারা যদি সুযোগ-সুবিধা পায়, অনেক ভালো করবে। ওদের স্কিল আছে।’

সেমিফাইনালে আছিয়া না ফাইনালে আফরা—কোন লড়াইটা বেশি কঠিন ছিল? জিনাতের জবাব, ‘আমি আমার খেলাটা খেলেছি এবং জিতেছি। দুজনই আলাদা ধাঁচের প্রতিপক্ষ।’

জিনাত বাংলাদেশের হয়ে আন্তর্জাতিক পদক জয়ের আকাঙ্ক্ষার কথা আজও বলেছেন। আগামী এশিয়ান গেমসে সুযোগ পেলে পদক জিতবেন কি না, প্রশ্নের ছোট্ট উত্তর, ‘ইনশা আল্লাহ।’

আফরা-জিনাত ফাইনাল ম্যাচটা যেন ছিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বক্সারের লড়াই নয়, এর বাইরেও চলছিল আরেক নাটক। ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগেই বক্সিং রিংয়ে এক ব্যতিক্রমী দৃশ্য। আনসারের বক্সার জাহিদুল হক রেফারির রায় নিয়ে ক্ষোভ জানাতে রিংয়ে বসে পড়েন প্রতিবাদ হিসেবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বক্সার জনি ভদ্রর ঘুষিতে কপালে চোট পান জাহিদুল। চিকিৎসাও নেন। একপর্যায়ে রিংয়ের মাঝখানে বসেই অভিনব প্রতিবাদ জানান।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আনসার দল বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের সভাপতির কাছে অভিযোগ করে এবং তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিযোগিতা থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের হুমকি দেয়। একপর্যায়ে আনসারের প্রতিনিধিরা রিং ছেড়ে চলে যান। মুহূর্তেই ঘনীভূত হয়ে ওঠে অনিশ্চয়তা, আফরা-জিনাত ফাইনালটি আদৌ হবে তো? কারণ, আফরা বাংলাদেশ আনসারের প্রতিযোগী। শেষ পর্যন্ত অবশ্য আনসার ফিরে আসে এবং প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

এ বিষয়ে বক্সিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুস কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফাইটে হারলে যা হয়। হারলেই বলে অন্যায় হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত রিংয়ে ফিরে এসেছে, খেলেছে, এটা ভালো।’

ম্যাচ শুরুর ঠিক আগে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের একটি প্রতিনিধিদল গ্যালারিতে এসে জিনাতকে শুভেচ্ছা জানায়, তাঁকে উপহারও দেয় তারা। গ্যালারিতে বাড়তি উত্তেজনা আর গুরুত্ব যোগ করে ফাইনাল ম্যাচকে ঘিরে। আর দেশের সংবাদমাধ্যমের ব্যাপক উপস্থিতি তো ছিলই ম্যাচটা ঘিরে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বক্সিং রিংয়ে চ্যাম্পিয়ন জিনাতই, বোনকে উৎসাহ দিতে গ্যালারিতে আফঈদা