সরকারি চাকরিজীবীদের ‘বিশেষ সুবিধা ভাতা’ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি
Published: 3rd, June 2025 GMT
সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য ‘বিশেষ সুবিধা ভাতা’ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অর্থ মন্ত্রনালয়। এ প্রজ্ঞাপনের আওতায় ১০ থেকে ২০ গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ১ থেকে ৯ গ্রেডের কর্মকর্তারা পাবেন ১০ শতাংশ হারে ভাতা পাবেন।
মঙ্গলবার (৩ জুন) এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এতে স্বাক্ষর করেছেন অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব দিলরুবা শাহীনা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮ এর ১৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে জাতীয় বেতনস্কেলের আওতাভুক্ত সরকারি-বেসামরিক, স্বশাসিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো, ব্যাংক, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ও পুলিশ বাহিনীতে নিয়োজিত কর্মচারী এবং পুনঃস্থাপনকৃত পেনশনাররাসহ পেনশনভোগী ব্যক্তিদের জন্য ১ জুলাই ২০২৫ তারিখ থেকে বেতনগ্রেড ভেদে (গ্রেড ১ এবং তদূর্ধ্ব থেকে গ্রেড ৯ পর্যন্ত) ১০ শতাংশ এবং (গ্রেড ১০ থেকে গ্রেড ২০ পর্যন্ত) ১৫ শতাংশ হারে ‘বিশেষ সুবিধা’ প্রদান করা হলো। এ ‘বিশেষ সুবিধা’ চাকরিরতদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০০০ টাকা এবং পেনশন ভোগীদের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ৫০০ টাকা হারে প্রদেয় হবে।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনেক শ্রমিক বেতন-ভাতা পাননি
আগামী শনিবার পবিত্র ঈদুল আজহা। এখন পর্যন্ত অনেক শিল্পকারখানার শ্রমিক বেতন-বোনাস পাননি। যেসব কারখানা বেতন দিয়েছে, তাদের কেউ কেউ আবার অর্ধেক দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কিছু কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতনও বকেয়া রয়েছে।
শিল্প পুলিশের সদস্য, তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের দুই সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এবং শ্রমিকনেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। যদিও গত মাসে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় সভায় শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাস ৩১ মের মধ্যে এবং মে মাসের বেতন ৩ জুনের মধ্যে পরিশোধ করতে বলা হয়।
সাভার-আশুলিয়া, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও সিলেটের বিভিন্ন খাতের ৯ হাজার ৬৮৩ কারখানা তদারকি করে শিল্প পুলিশ বলেছে, গতকাল বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত ১৯ শতাংশ বা ১ হাজার ৮৭৪টি কারখানা ঈদ বোনাস পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের তদারকিতে থাকা ৯ হাজার ৬৮৩ কারখানার মধ্যে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র কারখানা রয়েছে ২ হাজার ৪৫৭টি। এসব কারখানার মধ্যে ১৯ শতাংশ বা ৪৬৪টিতে গতকাল বিকেল পর্যন্ত বোনাস পরিশোধ হয়নি। তার মধ্যে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সদস্য ২৭৯, নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর ১৩০ এবং বস্ত্রকল মালিকদের সংগঠন বিটিএমএর ৮১টি সদস্য কারখানা বোনাস দেয়নি।
অন্যদিকে মে মাসের বেতন ৬০ শতাংশ শিল্পকারখানা গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত দেয়নি। শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, ৯ হাজার ৬৮৩ শিল্পকারখানার মধ্যে ৫ হাজার ৮৬৪টি মে মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। শুধু তা-ই নয়, ৩৭৫টি কারখানা গত এপ্রিলের বেতন পরিশোধ করেনি।
শিল্প পুলিশের তথ্যানুযায়ী, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের ৭২ শতাংশ কারখানা এখনো গত মাসের বেতন পরিশোধ করেনি। বিজিএমইএর সদস্য ৯৮২, বিকেএমইএর ৪৯৮ এবং বিটিএমএর ৭০টি সদস্য কারখানা গতকাল রাত নয়টা পর্যন্ত বেতন দেয়নি।
অবশ্য বিজিএমইএর প্রতিবেদন বলছে ভিন্ন কথা। সংগঠনটির দাবি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে তাদের সদস্যভুক্ত ২ হাজার ৯২ সচল কারখানার প্রায় ৯৬ শতাংশ কারখানা গতকাল পর্যন্ত বোনাস দিয়েছে। এ ছাড়া মে মাসের বেতন দিয়েছে ৫৮ শতাংশ কারখানা। অন্যদিকে গত এপ্রিল মাসের বেতন প্রক্রিয়াধীন আছে ১২ কারখানার। গতকাল ৭৭০ কারখানা ছুটি হয়েছে।
বর্তমানে বিজিএমইএর তিনটি কারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে সমস্যা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে বসুন্ধরা অ্যাপারেলস, সেজেনস ড্রেস ও সেইন অ্যাপারেলস। বিষয়টি নিশ্চিত করে বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকে (গতকাল) পর্যন্ত ৪৮ শতাংশ কারখানা বেতন-ভাতা দিয়ে ছুটি দিয়েছে। বাকিরা বৃহস্পতিবার শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করে ছুটি দেবে।’
এদিকে নারায়ণগঞ্জের ১৪টি শিল্পকারখানায় বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টি তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান। কারখানাগুলো হচ্ছে হামিদ ফেব্রিকস, তোহা নিট ফ্যাশন, স্টারলেট কম্পোজিট, স্টারলেট অ্যাপারেলস, জননী ফ্যাশন, ইয়াং থ্রি ফ্যাশন, এশিয়ান টেক্সটাইল মিলস, ফ্যাশন ওয়ার্ল্ড, টোটাল ফ্যাশন, অবন্তি কালার টেক্স, ক্রোনি অ্যাপারেলস, এলসন ফুডস ও সাম্পান সুজ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে আদমজীতে অবস্থিত শিল্প পুলিশ-৪ পরিদর্শক (গোয়েন্দা) সেলিম বাদশা প্রথম আলোকে বলেন, কারখানাগুলো বেতন-ভাতা কালকের (আজ) মধ্যে পরিশোধের কথা রয়েছে। তারা যথাযথভাবে বেতন-ভাতা দিচ্ছে কি না, সেটি নজরদারিতে আছে।
নারায়ণগঞ্জের বেতন-ভাতা বকেয়া থাকা ১৪টি কারখানার মধ্যে ৯টি বিকেএমইএর সদস্য। তবে বিকেএমইএর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মনসুর আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেতন-ভাতা পরিশোধে কোনো সমস্যা নেই। অধিকাংশ কারখানা আজকে (গতকাল) বেতন-ভাতা দিয়ে ছুটি দিয়েছে। আমরা কারখানার মালিকদের ঈদের আগে গত মাসের অন্তত অর্ধেক বেতন পরিশোধের পরামর্শ দিয়েছিলাম। অধিকাংশ কারখানা সেভাবেই বেতন দিয়েছে।’
এদিকে ঢাকার অদূরে সাভার ও ধামরাই উপজেলায় ৩২টি তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন ও বোনাস পরিশোধ নিয়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। এই এলাকার ১ হাজার ৮৬৩ শিল্পকারখানার মধ্যে ৬০ শতাংশ গতকাল ছুটি হয়েছে। এসব তথ্য দিয়ে আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান, বেতন-ভাতা নিয়ে সমস্যাগ্রস্ত ৩২ কারখানার সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন তাঁরা।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্ট ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইনবিষয়ক সম্পাদক খাইরুল মামুন বলেন, বেশ কিছু কারখানার শ্রমিকের বেতন-ভাতা এখনো বাকি। ছুটির আগে যদি শ্রমিকেরা তাঁদের পাওনা বুঝে না পান, তবে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করবেন কীভাবে। প্রতি ঈদেই এমন ঘটনা খুবই দুঃখজনক।
[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, সাভার এবং প্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর]