দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ ছিল, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অনেক ভুয়া লোক ঢুকে গেছে। যখন যে সরকার আসে, তারা নতুন করে একটা তালিকা তৈরি করে। আওয়ামী লীগ সরকারের (২০০৯–২০২৪) আমলে তালিকা নিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি ও জালিয়াতি হয়েছে। অন্তত চারজন সচিব মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও মুক্তিযোদ্ধা সেজে চাকরির বয়স বাড়িয়ে নিয়েছিলেন।

১৯৬২ সালে জন্ম নেওয়া একজন সাবেক মন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়েছেন। এ রকম উদাহরণ আরও আছে। আবার ভিন্ন রাজনীতি করার কারণে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল।

১৯৭২ সাল থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত সব সরকারি প্রজ্ঞাপনেই যঁারা সশস্ত্র যুদ্ধ করেছেন, তঁাদেরই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২০১৬ সালের প্রজ্ঞাপনে সশস্ত্র যুদ্ধের সঙ্গে যেকোনো প্রতিরোধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদেরও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকার করা হয়। সে সময়ে সংজ্ঞা বদলানোর প্রয়োজন ছিল না। এখন সংজ্ঞা বদলানোয় বিতর্ক থামবে বলে মনে হয় না।

স্বাধীনতার পর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা ও সংজ্ঞা নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা অনেক হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা তালিকা নিয়ে সব সরকারের আমলেই বিতর্ক ছিল। এই প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার তালিকা যাচাই–বাছাই করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়ার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা প্রশংসার দাবি রাখে। তালিকা যাচাই–বাছাই করতে গিয়ে হঠাৎ করে মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে তারা নতুন বিতর্কের জন্ম দিল।

৩ জুন রাতে বীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধন করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাঁদের বয়স সরকার–নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল), তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সংশোধিত অধ্যাদেশ অনুযায়ী, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) ও এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন, এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। এত দিন তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হতেন।

অধ্যাদেশে মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের জন্য মোট পাঁচটি শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়েছে। ১.

যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং বাংলাদেশের যেসব নাগরিক বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। ২. যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর

সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ৩. মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ বা এমপিএ, যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। ৪. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। ৫. স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

এর আগে গত ১৫ মে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল অধ্যাদেশটি শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। ওই সভায় বলা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনতে।

নতুন সংজ্ঞায় দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীর মাধ্যমে নির্যাতিত সব নারী (বীরাঙ্গনা) বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় আহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা প্রদানকারী ফিল্ড হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা সহকারীরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

ডেইলি স্টার–এর প্রতিবেদন থেকে জানতে পারলাম, আগের অধ্যাদেশে স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের আগে ‘তৎকালীন’ শব্দটি ছিল না। নতুন অধ্যাদেশে ‘তৎকালীন’ শব্দটি যুক্ত করে বোঝানো হয়েছে ওই সব দলের তৎকালীন নেতৃত্ব ও বর্তমান নেতৃত্ব এক নয়।

অধ্যাদেশটির অস্পষ্টতা নিয়ে বিভিন্ন মহলে সমালোচনা হলে ৪ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক–ই–আজম সংবাদ সম্মেলন করে বলেছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকার গঠনে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার) শপথ গ্রহণ করে। এর আগে ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়, যার রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম

ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ।

মুজিবনগর সরকার বলতে অন্তর্বর্তী সরকার কেবল মন্ত্রীদের বুঝিয়েছেন। কিন্তু সেই সরকারের সর্বদলীয় উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য যাঁরা ছিলেন (মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, মণি সিংহ, মনোরঞ্জন ধর, মোজাফফর আহমদ) তাঁদের অবস্থান কী হবে, সেটাস্পষ্ট করেননি।

মুজিবনগর সরকার গঠনের আগে ঘোষিত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়, ‘আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ কর্তৃক আমাদিগকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে, নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণপরিষদ গঠন করিলাম এবং পারস্পরিক আলোচনা করিয়া এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা করিলাম।’

সে ক্ষেত্রে মুজিবনগর সরকার এবং তারা যেই গণপরিষদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হয়েছে, তাদের ভিন্নভাবে দেখার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। সরকার বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় চিকিৎসক, সেবিকা ও হাসপাতালের কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করেছে। খুবই ভালো কথা। কিন্তু মুজিবনগর সরকারের উপদেষ্টা, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী, রেহমান সোবহানসহ যেসব বিশিষ্ট ব্যক্তি বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বজনমত তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন, তাঁদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি না দিয়ে সহযোগী বানানো কতটা ন্যায়বিচার হলো, সে প্রশ্নের উত্তর অন্তর্বর্তী সরকারকেই দিতে হবে।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই–আজম বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় লক্ষাধিক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা রয়েছেন। তাঁদের বাছাই করা এবং মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বিতর্ক নিরসনের জন্য সংজ্ঞায় পরিবর্তন প্রয়োজন ছিল। আবার তিনিই জানিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় সুযোগ–সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে এই সংজ্ঞার পরিবর্তন কোনো সমস্যা হবে না। অর্থাৎ আগে যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, এখন মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী হিসেবেও সেই সুযোগ–সুবিধা পাবেন। তাহলে সংজ্ঞা পরিবর্তনের কী প্রয়োজন ছিল?

সরকারের দায়িত্ব ছিল তালিকা থেকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বাদ দেওয়া। সে কাজটি তারা এখনো করতে পারেনি। বরং সংজ্ঞা পরিবর্তন করে নতুন বিতর্ক সৃষ্টি করল। আওয়ামী লীগ সরকার যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আগের অধ্যাদেশ জারি করে থাকে, অন্তর্বর্তী সরকারের অধ্যাদেশ পরিবর্তনেও সেই লক্ষণ পুরোপুরি আছে।

লেখাটি শেষ করতে চাই লেখক–গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের ফেসবুকে দেওয়া বক্তব্য দিয়ে। তিনি লিখেছেন, ‘অনেক সত্যিকার মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি। আমিও তাঁদের একজন। আমি একাত্তরের ৩১ জুলাই অস্ত্র নিয়ে দেশে ঢুকেছিলাম। অথচ ডিসেম্বরের ১৬ তারিখের পরে ভারত থেকে আসা লোকেরা রাইফেল হাতে পোজ নিয়ে ছবি তুলে দিব্বি ভাতা খেয়ে বেড়াচ্ছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিরোধযুদ্ধ করেছি বিবেকের তাড়নায়। ব্যক্তিগত লাভালাভের জন্য নয়। যারা বেতন-ভাতা, পদ-পদোন্নতির জন্য যুদ্ধ করে, তাদের আমরা মার্সেনারি বা ভাড়াটে যোদ্ধা বলি। ৫৪ বছর ধরে মুক্তিযুদ্ধ ব্যবসায় যথেষ্ট হয়েছে। আর নয়।’

সোহরাব হাসান প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক ও কবি

[email protected]

* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ র সহয গ ম ক ত য দ ধ র সময় ম জ বনগর সরক র ল দ শ সরক র স ব ধ নত সরক র র উপদ ষ ট র সরক র তৎক ল ন সশস ত র র জন য হয় ছ ল কর ছ ন ব তর ক য সব ব মন ত র ইসল ম গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

বঙ্গবন্ধু–তাজউদ্দীনসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’, অন্যরা সহযোগী

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে মুজিবনগর সরকার গঠনে যাঁরা সহযোগিতা করেছেন, তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশে বীর মুক্তিযোদ্ধার এই সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় অধ্যাদেশটি জারি করে।

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার (মুজিবনগর সরকার) শপথ গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে বন্দী থাকায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ। অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামান ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমদ।

আরও পড়ুনবীর মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞায় পরিবর্তন এনে অধ্যাদেশ জারি১১ ঘণ্টা আগে

নতুন অধ্যাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানসহ জাতীয় চার নেতা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে বিবেচিত হবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম। তিনি বলেন, মুজিবনগর সরকারের যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই মুক্তিযোদ্ধা। তবে মুজিবনগর সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

ফারুক ই আজম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা যাচাইবাছাই করতে গিয়ে দেখা যায়, মুজিবনগর সরকারের কিছু কর্মচারী ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে গণ্য হচ্ছেন। এখন থেকে তাঁরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বলেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে কাউকে বাতিল করা হয়নি। শুধু সংজ্ঞায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। যিনি যে সুবিধা পাচ্ছেন, তিনি সেই সুবিধা পাবেন। শুধু যাঁরা সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তাঁরা ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ হবেন। অন্যরা হবেন ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’।

সংশোধিত অধ্যাদেশে ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগীদের’ জন্য পাঁচটি শ্রেণি ঠিক করা হয়েছে। প্রথমত, যেসব বাংলাদেশি পেশাজীবী মুক্তিযুদ্ধের সময় বিদেশে অবস্থানকালে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশেষ অবদান রেখেছিলেন এবং যেসব বাংলাদেশি বিশ্বজনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। দ্বিতীয়ত, যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) অধীন কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা দূত, মুজিবনগর সরকারের নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তৃতীয়ত, মুক্তিযুদ্ধের সময় গঠিত বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) সঙ্গে সম্পৃক্ত সব এমএনএ (জাতীয় পরিষদের সদস্য) বা এমপিএ (প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), যাঁরা পরবর্তী সময়ে গণপরিষদের সদস্য হিসেবে গণ্য হয়েছিলেন। চতুর্থত, স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের সব শিল্পী ও কলাকুশলী এবং দেশ ও দেশের বাইরে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে দায়িত্ব পালনকারী সব বাংলাদেশি সাংবাদিক। পঞ্চমত, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ২১ জন সদস্য এত দিন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত হতেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মোহাম্মদ জাকারিয়া পিন্টু, কাজী সালাহউদ্দিন, এনায়েতুর রহমান খান। এখন থেকে তাঁরা ‘মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী’ হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বীর মুক্তিযোদ্ধার নতুন সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যাঁরা দেশের ভেতরে যুদ্ধের প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন এবং যেসব ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সীমানা অতিক্রম করে ভারতের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে তাঁদের নাম অন্তর্ভুক্ত করেছেন এবং বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে হানাদার ও দখলদার পাকিস্তানি সশস্ত্র বাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী রাজাকার, আলবদর, আলশামস, তৎকালীন মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলাম এবং দালাল ও শান্তি কমিটির বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন, এরূপ সব বেসামরিক নাগরিক (ওই সময়ে যাঁদের বয়স সরকার নির্ধারিত সর্বনিম্ন বয়সের মধ্যে ছিল) তাঁরা বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন। এর পাশাপাশি সশস্ত্র বাহিনী, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর), পুলিশ বাহিনী, মুক্তিবাহিনী, প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার (মুজিবনগর সরকার) ও সেই সরকার স্বীকৃত অন্যান্য বাহিনী, নৌ কমান্ডো, কিলো ফোর্স, আনসার সদস্যরাও বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সকালেই পড়ুন আলোচিত ৫ খবর
  • বঙ্গবন্ধুর ‘মুক্তিযোদ্ধা’ মর্যাদা বাতিল হয়নি: মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপ
  • নতুন অধ্যাদেশে মুজিবনগর সরকারের সব সদস্যকে মুক্তিযোদ্ধার স্পষ্ট স্বীকৃতি দেওয়া আছে: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট বাতিল ফেইক নিউজ: সংস্কৃতি উপদেষ্টা
  • মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
  • মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের ব্যাখ্যা
  • মুজিবনগর সরকারের যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
  • মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’
  • বঙ্গবন্ধু–তাজউদ্দীনসহ মুজিবনগর সরকারের সদস্যরা হবেন ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’, অন্যরা সহযোগী