মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর গ্যাভিন নিউসমের আপত্তি উপেক্ষা করেই লস অ্যাঞ্জেলেসে দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। অভিবাসনসংক্রান্ত বিক্ষোভ ঠেকাতে তিনি এমন পদক্ষেপ ঘোষণা করেন। যদিও এটি একটি বিরল ঘটনা।

বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক নেতাদের কেউ কেউ বলছেন, কয়েক দশক ধরে প্রেসিডেন্টের বিশেষ এ ক্ষমতার ব্যবহার দেখা যায়নি। এবার সে ক্ষমতা প্রয়োগের কারণে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এটি একদিকে যেমন অঙ্গরাজ্য সরকারের ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করছে, তেমনি অনেক দিন ধরে চলে আসা নিয়মকানুন ও রীতিনীতিও ভেঙে দিচ্ছে।

ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযানের বিপক্ষে লস অ্যাঞ্জেলেস শহর ও আশপাশের এলাকায় গত শুক্রবার থেকে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। তখন কেন্দ্রীয় অভিবাসন বিভাগের কর্মকর্তারা অন্তত ৪৪ জনকে গ্রেপ্তার করে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসনবিরোধী অভিযান চলার মধ্যে এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। ওই অভিযানের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে বেশ কিছু ধরপাকড় ও বিতাড়নের ঘটনা ঘটছে। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী টিয়ার গ্যাস ও ফ্ল্যাশ ব্যাং গ্রেনেড (প্রাণঘাতী নয়) ব্যবহার করেছে।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যে কায়দায় দাঙ্গা ও লুটপাটের মতো সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন, সে কায়দাতেই কেন্দ্রীয় সরকার এখন ব্যবস্থা নেবে। নিজস্ব মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন ট্রাম্প।

লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের জন্য ‘টাইটেল টেন অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস কোড’-এর আওতায় এক আদেশে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। আদেশ অনুসারে, ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরা অভিবাসন বিভাগ এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন কাজে নিযুক্ত থাকা অন্য সরকারি কর্মীদের নিরাপত্তা দেবে। পাশাপাশি তারা ফেডারেল সম্পদের সুরক্ষার দায়িত্বে থাকবে। গত শনিবার অ্যাটর্নি জেনারেল, প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রীকে পাঠানো এক চিঠিতে ট্রাম্প এসব কথা বলেছেন।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলছেন, স্থানীয় কর্মকর্তারা বিক্ষোভ সামাল দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। যে কায়দায় দাঙ্গা ও লুটপাটের মতো সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন, সে কায়দাতেই কেন্দ্রীয় সরকার এখন ব্যবস্থা নেবে। নিজস্ব মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া এক পোস্টে এসব কথা লিখেছেন ট্রাম্প।

টাইটেল টেন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চাইলে হামলা ঠেকাতে, বিদ্রোহ দমন করতে বা আইন প্রয়োগের জন্য ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করতে পারেন। এর অর্থ হলো এই পরিস্থিতিতে ন্যাশনাল গার্ড গভর্নরের অধীনে নয়, সরাসরি প্রেসিডেন্টের অধীনে কাজ করে এবং প্রেসিডেন্টকেই সবকিছু জানায়।

১৯৯২ সালের পর এবারই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ড সেনাদের ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে রেখে কাজ করানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। ১৯৯২ সালে রোডনি কিং নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে মারধর করার মামলায় চার শ্বেতাঙ্গ পুলিশ কর্মকর্তা খালাস পাওয়ার ঘটনায় লস অ্যাঞ্জেলেসে দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়লে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল। লস অ্যাঞ্জেলেসে কয়েক দিন ধরে চলা ওই দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন নিহত এবং কয়েক হাজার মানুষ আহত ও গ্রেপ্তার হন। এ দাঙ্গায় প্রায় ১০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের সম্পদ নষ্ট হয়েছে। এটিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে অন্যতম একটি অস্থিরতার ঘটনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

ইতিহাস বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা সাধারণত তখনই ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসেন, যখন কোনো অঙ্গরাজ্যের গভর্নর সাহায্য চান। যেমন লস অ্যাঞ্জেলেসে দাঙ্গা বা লুইজিয়ানায় হারিকেন ক্যাটরিনার পরবর্তী সময়ে অঙ্গরাজ্যের গভর্নর যখন নিজস্ব ক্ষমতায় পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিলেন না, তখন তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতা চেয়েছিলেন।

আবার যখন কোনো গভর্নর আদালতের আদেশ উপেক্ষা করেন, তখনো প্রেসিডেন্ট ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিতে পারেন। এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল লিটল রক স্কুলসংক্রান্ত এক মামলায়। লিটল রকের স্কুলে বর্ণবৈষম্য দূর করতে আদালতের দেওয়া নির্দেশ বাস্তবায়নে প্রেসিডেন্ট ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার ন্যাশনাল গার্ডকে ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসেছিলেন।

সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং মার্কিন সরকারের সাবেক কর্মকর্তা জুলিয়েট কায়েম মনে করেন, বিক্ষোভ দমনের বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। হুমকির মাত্রা বিবেচনায় এ ধরনের কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখানোটা যুক্তিযুক্ত হয়নি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘শহরের বিক্ষোভ সামাল দেওয়ার দায়িত্বটা সরাসরি পুলিশ ও অঙ্গরাজ্য কর্তৃপক্ষের। কিন্তু গভর্নরের মত উপেক্ষা করে সেখানে হস্তক্ষেপ করলেন প্রেসিডেন্ট। আধুনিককালে এ ধরনের নজির নেই।’

‘ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে থাকা সেনারা মূলত বলপ্রয়োগের মতো কাজগুলোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা কোনো রাজনৈতিক সংকট বা জন–অসন্তোষকে শান্তভাবে মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ পায় না।’ জুলিয়েট কায়েম, সিএনএনের জাতীয় নিরাপত্তা বিশ্লেষক

গত শনিবার জুলিয়েট কায়েম শনিবার সিএনএনকে বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশ এ ধরনের বিক্ষোভ সামাল দিতে সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করে না।’

গভর্নরের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ট্রাম্প যেভাবে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করেছেন, তাতে সহিংসতা ছড়ানোর ঝুঁকি বেড়ে গেছে বলে মনে করছেন জুলিয়েট কায়েম।

কায়েম বলেন, ‘ফেডারেল নিয়ন্ত্রণে থাকা সেনারা মূলত বলপ্রয়োগের মতো কাজগুলোর জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তারা কোনো রাজনৈতিক সংকট বা জন–অসন্তোষকে শান্তভাবে মোকাবিলার জন্য প্রশিক্ষণ পায় না।’

লস অ্যাঞ্জেলেসে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষ হয়.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় সরক র য ক তর ষ ট র র লস অ য ঞ জ ল স কর মকর ত সরক র র ক ষমত র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

দুবাই থেকে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার ৫৭ মামলার আসামি

চট্টগ্রামে বাড়ি। তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে ৫৭টি মামলা। তবে তিনি প্রায় পাঁচ বছর ধরে পালিয়ে ছিলেন দুবাইয়ে। গ্রেপ্তার এড়াতে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে দেশে ফিরছিলেন। এরপরও তাঁর রক্ষা হয়নি তাঁর। সিলেটে বিমানবন্দর থেকেই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন পলাতক এই আসামি।

গতকাল শনিবার বিকেল চারটার দিকে গ্রেপ্তার হওয়া এই ব্যক্তির নাম মোহাম্মদ রুহুল আমিন (৫৫)। বিমানবন্দরে নিয়োজিত ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আজ রোববার সকালে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মোহাম্মদ রুহুল আমিনের বাড়ি পটিয়া উপজেলার জঙ্গলখাইন ইউনিয়নের পাইরোল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম আবদুস সালাম। চট্টগ্রাম নগরের চাক্তাইয়ে ফিশারিঘাটে মাছের আড়ত ছিল রুহুল আমিনের।

পুলিশ জানায়, মোহাম্মদ রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলোর বেশির ভাগই চেক প্রতারণার অভিযোগে করা। এর মধ্যে ১০টি মামলায় তাঁর সাজা হয়েছে। বাকি মামলা বিচারাধীন। বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও পরোয়ানাভুক্ত এই আসামি সাজা ও গ্রেপ্তার এড়াতে দুবাইয়ে পালিয়ে যান। পাঁচ বছর পর সেখান থেকে গোপনে সিলেট হয়ে দেশে ফিরছিলেন তিনি।

পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুজ্জামান আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, পটিয়া থানার পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইমিগ্রেশন পুলিশ তাঁকে বিমানবন্দর থেকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তার রুহুল আমিনকে গতকাল রাতেই সিলেট থেকে পটিয়ায় নিয়ে আসা হয়। এরপর আজ সকালে পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ