আবারো রাশিয়ার বিমানঘাঁটিতে সফল হামলার দাবি ইউক্রেনের
Published: 9th, June 2025 GMT
রাশিয়ার গভীরে একটি বিমানঘাঁটিতে রবিবার (৮ জুন) রাতে অভিযান চালিয়ে দুটি যুদ্ধবিমান ক্ষতিগ্রস্ত করার দাবি করেছে ইউক্রেন।
এক সপ্তাহ আগে ‘অপারেশন স্পাইডারওয়েব’ চালিয়ে রাশিয়ার পারমাণবিক-সক্ষম বোমারু বিমানগুলোতে আঘাত হানার পর, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা এবার নতুন এই সাফল্যের দাবি করলেন। খবর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের।
বিশেষ অভিযান বাহিনী ইউক্রেনীয় সীমান্ত থেকে প্রায় ৪০০ মাইল দূরে রাশিয়ার নিজনি নভগোরোড অঞ্চলে অবস্থিত সাভাসলেকা বিমানঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে বলে জানা গেছে।
আরো পড়ুন:
ইউক্রেনে আবারো ব্যাপক হামলা রাশিয়ার, নিহত ৫
ইউক্রেনে ব্যাপক হামলা রাশিয়ার
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদন বলছে, ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনী অভিযানের প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেয়নি এবং ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে প্রশ্ন রয়ে গেছে।
রাশিয়া ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং এর শহরগুলোর বিরুদ্ধে কিনজাল ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী মিগ-৩১কে যোদ্ধাদের মোতায়েনের জন্য সাভাসলেকা বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে থাকে।
ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “প্রাথমিক তথ্য অনুসারে, শত্রু বিমানের দুটি ইউনিট (সম্ভবত মিগ-৩১ এবং এসইউ-৩০/৩৪) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অভিযানের ফলাফল স্পষ্ট করা হচ্ছে।”
ইউক্রেন তাদের সীমান্ত থেকে প্রায় ৮০০ মাইল দূরে চেবোকসারিতে রাশিয়ার একটি সামরিক কারাখানায় সফল ড্রোন হামলার ভিডিও ফুটেজও প্রকাশ করেছে। কারাখানাটিতে রাশিয়ার স্ব-চালিত হাউইটজার, ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, ল্যানসেট ও শাহেদ কামিকাজে ড্রোনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ উৎপাদিত হয়ে থাকে।
ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অধীনে থাকা ভিএনআইআইআর-প্রগ্রেস কারখানায় হামলার ঘটনায় রুশ কর্তৃপক্ষ ওই অঞ্চলে বাণিজ্যিক ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে।
তারা আরো দাবি করেছে, “কমপক্ষে দুটি ইউএভির (মানববিহীন বিমান বা ড্রোন) আঘাতে সামরিক কারখানাটির সুবিধা ধ্বংস ও পরবর্তীতে বৃহৎ আকারে আগুন লাগার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ধ্বংসের ফলাফল স্পষ্ট করা হচ্ছে।”
ইউক্রেনের হামলার তথ্য স্বীকার করে আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ নিকোলায়েভ এক বিবৃতিতে বলেছেন, “কারখানায় উৎপাদন স্থগিত করা হয়েছে, তবে হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।”
রাশিয়ার অভ্যন্তরে ইউক্রেনের এই অভিযান শুরু হয় যখন ক্রেমলিন রাতভর ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা জোরদার করে এবং উত্তর-পূর্ব সুমি অঞ্চলে ও পূর্বে ডোনেটস্কে ফ্রন্টলাইনকে পিছনে ঠেলে দেওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি অর্জন করে।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া রবিবার রাতে ও সোমবার ভোরে ইউক্রেনে ৪৭৯টি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর, ইউক্রেনে এটিই রাশিয়ার সবচেয়ে বড় ড্রোন হামলা।
ইউক্রেনে প্রায় ২০টি ক্ষেপণাস্ত্রও ছুড়েছে মস্কো, যার লক্ষ্য মূলত মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চল। পোল্যান্ডের সশস্ত্র বাহিনীর অপারেশনাল কমান্ড জানায়, পশ্চিম ইউক্রেনে রাশিয়ার বিমান হামলার জবাবে তারা যুদ্ধবিমান নামিয়েছে।
পশ্চিম ইউক্রেনের রিভনে অঞ্চলে পূর্ণ-স্কেল যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে সবচেয়ে বড় আক্রমণ হয়েছে। আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসনের প্রধান ওলেকসান্ডার কোভালের মতে, রাশিয়ার হামলায় একজন নিহত হয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ইউক্রেনের ডুবনো বিমানঘাঁটিতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। ভিডিও ফুটেজে দাবি করা হয়েছে, এটি ইউক্রেনের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের ঘাঁটি। তবে এটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি দ্য গার্ডিয়ান।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। কিয়েভের সামরিক প্রশাসনের প্রধান টাইমুর তাকাচেঙ্কো জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলায় রাজধানীর ডারনিৎসিয়া জেলার একটি অফিস ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মাঝ আকাশে রাশিয়ার ২৭৭টি ড্রোন এবং ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে, মাত্র ১০টি ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে, রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে উল্লেখযোগ্য সামরিক অগ্রগতি অর্জন করেছে, একই নামের আঞ্চলিক রাজধানীর ১৮ মাইলের মধ্যে প্রবেশ করেছে।
সুমি অঞ্চলের গভর্নর ওলেহ হ্রাইহোরভের মতে, সুমি শহর খালি করার এখনও কোনো প্রয়োজন নেই। তিনি পরিস্থিতিকে ‘উত্তেজনাপূর্ণ কিন্তু ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে’ রয়েছে বলে দাবি করেন।
তিন বছর ধরে চলমান যুদ্ধে রাশিয়ান বাহিনী দোনেৎস্কের পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে প্রথমবারের মতো পূর্ব ডনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে প্রবেশ করার যে দাবি করেছে, তা প্রত্যাখান করেছে ইউক্রেন।
ইউক্রেনের জেনারেল স্টাফের মুখপাত্র মেজর আন্দ্রি কোভালেভ এক বিবৃতিতে বলেন, “তথ্যটি সত্য নয়। দোনেৎস্ক ওব্লাস্টে লড়াই চলছে। শত্রুরা দনিপ্রোপেট্রোভস্ক ওব্লাস্টে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়নি।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র শ য় ইউক র ন য দ ধ ইউক র ন সশস ত র ব হ ন ইউক র ন য ইউক র ন র
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুর শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরে ঢোকে পানি, দুই শতাধিক পরিবারের ভোগান্তি
জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রার পলাশতলা এলাকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বুধবারবেলা দুইটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, জলাবদ্ধতায় দুই শতাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে আছেন।
‘পলাশতলার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রা রেলক্রসিংয়ের সামনে পলাশতলা এলাকাটির অবস্থান। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়ক থেকে একটি সংযোগ সড়ক এলাকাটির দিকে ঢুকেছে। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে তাঁদের বানভাসির মতো বসবাস করতে হয়। এলাকার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান তাঁরা।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকাটিতে সামান্য বৃষ্টি হলে আঙিনা উপচে কয়েকটি ঘরে পানি ঢোকে। পানি মাড়িয়ে যাবতীয় কাজ সারতে হয়। যেকোনো কাজে বাইরে গেলে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। ফলে তাঁরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় চার বছর ধরে এমন অসহনীয় জলাবদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের বসবাস করতে হচ্ছে।
শহিদুল্লাহ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, গত চার বছর ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বানভাসির মতো বসবাস করছেন। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে বহুবার পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায়, অনেকের হাত-পায়ে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে পলাশতলার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক এ কে এম আবদুল্লাহ-বিন-রশিদ। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় আমি নিজে গিয়ে দেখে আসছি। যেসব স্থানে পানি আটকে আছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকার পানি সরাতে ইতিমধ্যে পৌরসভার অন্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’