ইউটিউবার মো. সাব্বির সরকার নিখোঁজ রয়েছেন, এমন অভিযোগ তুলে কয়েক দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে পোস্ট দিচ্ছেন। তিনি গুম হয়েছেন কি না, সে প্রশ্নও তোলেন কেউ কেউ। সাব্বির গ্রেপ্তার হওয়ার পর আর খবর পাওয়া যাচ্ছে না, সেটা উল্লেখ করে অনেকে উদ্বেগ জানাচ্ছেন।

তবে পুলিশ বলছে, মো. সাব্বিরকে গত ৪ এপ্রিল গ্রেপ্তার করা হয়। ৫ এপ্রিল তাঁকে আদালতে হাজির করা হয়। সন্ত্রাসবিরোধী আইনে করা বনানী থানার একটি মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ড শেষে সাব্বিরকে কারাগারে পাঠানো হয়। তিনি এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।

বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাসেল সরোয়ার আজ মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, সাব্বিরের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য ও গুজব ছড়ানোর সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আগে থেকে জিডি ছিল। ৪ এপ্রিল জননিরাপত্তা আইন ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা হয়।

ওসি বলেন, সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাব্বিরের নিখোঁজের গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর বনানী থানা–পুলিশ সাব্বিরের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, সাব্বির এখন কাশিমপুর কারাগারে আছেন। তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাটির সর্বশেষ শুনানি হয়েছে গত মে মাসে।

ওসি জানান, সাব্বিরকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর পরিবারকে জানানো হয়। বনানী থানায় রিমান্ডে থাকা অবস্থায় তাঁর এক আত্মীয় এসে সাব্বিরের সঙ্গে দেখা করেছেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী মুনতাসির মামুন গত ২৩ মার্চ বনানী থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। জিডিতে মুনতাসির অভিযোগ করেন, তাঁকে নিয়ে সাব্বির বানোয়াট ও মিথ্যা ভিডিও প্রকাশ করেছেন। ভিডিওতে মুনতাসিরকে ভারতের এজেন্ট আখ্যা দিয়ে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত বলে প্রচার করেন। ভিডিওতে সাব্বির দাবি করেন, প্রযোজক মুনতাসির মামুন তাঁর বনানীর অফিসে বসে মাবরুর রশিদ বান্নাহ (নাট্য পরিচালক), মাহদী আমিনসহ (বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা) ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য পরিকল্পনা করছেন। যেভাবে খালেদ মোশাররফকে হত্যা করা হয়েছিল, ঠিক সেইভাবেই সেনাপ্রধানকে ভারতের এজেন্ট বানিয়ে সেনানিবাসের ভেতরে অবরুদ্ধ করে হত্যার পরিকল্পনা করছেন। তাঁরা জঙ্গিদের মদদে ও অর্থায়নে বাংলাদেশকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছেন বলেও প্রচার চালান।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মুনতাসির মামুনের করা জিডি তদন্ত করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। তারা সাব্বির সরকারের ইউটিউব, টিকটক ও ফেসবুক আইডি লিংক পর্যালোচনা করে দেখতে পায়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে সাব্বির রাষ্ট্রবিরোধী ও দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য বিভ্রান্তিকর তথ্য ও গুজব প্রচার করে আসছেন। গ্রেপ্তারের সময় সাব্বিরের কাছ থেকে বিভিন্ন আলামত জব্দ করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে মুঠোফোন, ল্যাপটপ, মাইক্রোফোন, ক্যামেরা, মেমোরি কার্ড এবং মেয়াদোত্তীর্ণ দুটি পাসপোর্ট।

পুলিশ সূত্র জানায়, সাব্বির সরকার ঢাকার মুগদা এলাকায় বসবাস করতেন। তিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার উত্তর ঘটিয়ার হেলাল সরকারের ছেলে। সাঘাটায় তাঁর বাবার লেপ-তোশকের দোকান রয়েছে।

সাঘাটা থানার ওসি মো.

মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অনেক দিন ধরেই পরিবারের সঙ্গে সাব্বিরের যোগাযোগ ছিল না।

সাব্বিরের বিষয়ে জানতে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। স্থানীয় একটি সূত্র বলছে, সাব্বির গ্রেপ্তার হওয়ার পর তাঁর পরিবার ভয়ে বাড়িতে থাকছে না।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নত স র পর ব র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮

কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।

আরো পড়ুন:

খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।

খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।

লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ