ইরানের সামর্থ্যকে খাটো করে দেখেছে ইসরায়েল, মনে করেন মার্কিন বিশেষজ্ঞ
Published: 16th, June 2025 GMT
ইসরায়েলে ইরানের অব্যাহত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখিয়েছে, ইসরায়েলের প্রাথমিক হামলায় শীর্ষস্থানীয় অনেক সামরিক কর্মকর্তা নিহত হওয়ার পরও নিজেদের পুনর্গঠিত করতে সক্ষম তেহরানের বাহিনীগুলো। এ অভিমত জানিয়েছেন একজন মার্কিন বিশ্লেষক।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক চিন্তক প্রতিষ্ঠান কুইন্সি ইনস্টিটিউট ফর রেসপনসিবল স্টেটসক্র্যাফটের ভাইস প্রেসিডেন্ট ট্রিটা পার্সি বলেন, ‘ইসরায়েলিরা ইরানের সামরিক বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্যবস্তু করে তাদের বেশ কয়েকজনকে হত্যা করার ক্ষেত্রে খুবই সফল হওয়ার পর ইরানিদের পুনর্গঠিত হওয়ার সক্ষমতাকে খাটো করে দেখেছিল তারা (ইসরায়েলিরা)।’
পার্সি বলেন, ইসরায়েল মনে করেছিল, তারা ইরানের ‘কমান্ড ও কন্ট্রোল’ (সেনাবাহিনীর নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা) ধসিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তাদের এ ভাবনা দ্রুতই পরিবর্তিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যা দেখছি, তা হলো ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র খুবই সফলতার সঙ্গে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সব স্তর ভেদ করছে।’
সোমবার ভোরের দিকে যখন ইসরায়েলের ওপর নতুন করে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের বহর পড়তে থাকে এবং একাধিক স্থানে আঘাত হানে, সে সময় মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনকে এ কথা বলেন পার্সি।
ইরান ও ইসরায়েল—দুই পক্ষই হামলার পরিসর বাড়ানোয় উভয় দেশে হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। তেহরানের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে রাজধানী থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন। অপর দিকে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে রাতে আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বিস্ফোরণ ও আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, ইরান এখন পর্যন্ত সে দেশে ৩৭০টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে কয়েক শ ড্রোন ছোড়া হয়েছে। এসব হামলায় সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৪ জন নিহত হয়েছেন এবং ৫৯২ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ১০ জনের অবস্থা গুরুতর।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ইসরায়েলি ভবনগুলোর ছবি নেওয়া হয়েছে ড্রোন দিয়ে। তেল আবিব, ইসরায়েল, ১৬ জুন ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার বিলীন
পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ পদ্মায় বিলীন হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার বাঁধটির ওই অংশ নদীতে বিলীন হয়। এ সময় নদীগর্ভে চলে গেছে বাঁধের পাশে থাকা ২০টি বসতবাড়ি। আর ভাঙন আতঙ্কে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০টি বাড়ির বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা। এ নিয়ে ৬ দফায় বাঁধটির ৮০০ মিটার পদ্মায় বিলীন হয়ে গেল।
ভাঙন রোধে গত তিন মাসে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উদ্যোগে ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১ লাখ ৫৫ হাজার বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। ভাঙনের কারণে তা–ও নদীতে তলিয়ে গেছে। বাঁধের ওই ৮০০ মিটার অংশের পাশে থাকা ৩৩টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও ৫০টি বসতবাড়ি গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে। ভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনটি গ্রামের ৬০০ পরিবার এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজারের ২৪০টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ঝুঁকিতে পড়েছে।
শরীয়তপুর পাউবো ও স্থানীয় সূত্র জানা যায়, শরীয়তপুরের পদ্মা নদীর অংশ জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হয়েছে। পদ্মা সেতু নাওডোবার ওপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীর ৫০০ মিটারের মধ্যে সার্ভিস এরিয়া ২, সেনানিবাস, পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানাসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এসব অবকাঠামো নির্মাণের জন্য যখন জমি অধিগ্রহণ করা হয়, তখন ২০১২ সালের দিকে নাওডোবা এলাকায় পদ্মার ভাঙন শুরু হয়। পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা নদীভাঙনের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য তখন সেতু থেকে ভাটির দিকে (পূর্ব দিকে) দুই কিলোমিটার এলাকায় ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ। ওই বাঁধের পাশে (দক্ষিণ দিকে) আলাম খাঁরকান্দি, ওছিম উদ্দিন মাদবরকান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সিকান্দি এবং মঙ্গল মাঝি-সাত্তার মাদবর ঘাট ও বাজার অবস্থিত।
পাউবো সূত্র বলছে, গত বছর নভেম্বর মাসে জাজিরার নাওডোবা জিরো পয়েন্ট এলাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা রক্ষা বাঁধের ১০০ মিটার অংশে ভাঙন দেখা দেয়। এরপর এ বছর ৭ জুন আবার বাঁধের ১০০ মিটার, ৭ জুলাই ২০০ মিটার, ৯ জুলাই ১০০ মিটার, ২৩ জুলাই ১০০ মিটার অংশ ভেঙে নদীতে ধসে পড়ে। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ওই বাঁধের আরও ২০০ মিটার অংশ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন ঠেকাতে অস্থায়ী ভিত্তিতে ৬০০ মিটার অংশে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পাউবো। এ পর্যন্ত ওই এলাকায় ১ লাখ ৫৫ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। তাতে ব্যয় হয়েছে ৭ কোটি টাকা। তাও কোনো কাজে লাগেনি। ভাঙনের কারণে ওই জিও ব্যাগগুলো নদীতে তলিয়ে গেছে। ওই এলাকা দিয়ে নদী অন্তত ১০০ মিটার হতে ১৫০ মিটার ভেতরে (দক্ষিণ দিকে) প্রবেশ করেছে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পদ্মার ভাঙনে আলম খাঁরকান্দি এলাকার আবুল বাশার মাদবরের দুটি ঘরসহ বসতবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। ঘরের অবশিষ্ট জিনিসপত্র তিনি সড়কের পাশে স্তূপ করে রেখেছেন। আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদ্মা তীরে বাড়ি হওয়ায় তিন দফা ভাঙনের কবলে পড়েছি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় বাড়ির সঙ্গে বাঁধটি হওয়ায় ভেবেছিলাম আর কখনো ভাঙনে নিঃস্ব হতে হবে না। কিন্তু তা আর হলো না, আমার সব শেষ। এখন বেঁচে থাকার জন্য আর কিছুই রইল না। উদ্বাস্তু হয়ে রাস্তায় আশ্রয় নিয়েছি।’
ভাঙন আতঙ্কে গতকাল শুক্র ও আজ শনিবার তিনটি গ্রামের ৫০টি বসতবাড়ির বিভিন্ন স্থাপনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আলী হোসেন মাদবর নামের একজন শনিবার সকাল থেকে দুটি বসতঘর ভেঙে মালামাল সরাচ্ছিলেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ভাঙনের কারণে একটু দুশ্চিন্তায় ছিলাম। রাতে আতঙ্কে ঘুমাতে পারতাম না। এখন আর পদ্মা পারে থাকতেই পারলাম না। বাপ-দাদার ভিটেমাটি ফেলে ঘর নিয়ে চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় গিয়ে আশ্রয় নেব।’
শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান প্রথম আলোকে জানান, নদীতে অনেক স্রোত। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে, তাতেও কোনো কাজ হচ্ছে না। ভাঙনের কারণে বালুভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে তলিয়ে যাচ্ছে। জাজিরার ওই স্থানে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে মানুষ নিঃস্ব হচ্ছে, এটা কষ্টদায়ক। আমরা ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণের জন্য টিন, নগদ টাকা ও খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। যাঁরা ভিটেমাটি হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব হয়েছেন, তাঁদের পুনর্বাসন করার জন্য খাসজমি খোঁজা হচ্ছে। সেই জমিতে তাঁদের ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।’